ইনকিলাব মঞ্চের ওসমান হাদির মৃত্যুর রেষ কাটার আগেই বাংলাদেশে ফের চলল গুলি। এবার টার্গেট এনসিপির এক শ্রমিক নেতা। মহম্মদ মোতালেব শিকদার নামে ওই জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাকে দিনেদুপুরে খুলনা শহরের সোনাডাঙা অঞ্চলে কে বা কারা গুলি করে চম্পট দেয়। ঘটনার পর থেকে এখনও অভিযুক্তকে ধরতে পারেনি পুলিশ, তবে জানা যাচ্ছে কোনও এক মহিলাকে আটক করা হয়েছে এই ঘটনায়। যদিও এখনও পর্যন্ত বিষয়টি স্পষ্ট নয়। কিন্তু বাংলাদেশে বিগত কয়েকদিনে এই অজ্ঞাত বন্দুকবাজদের দৌঁড়াত্ম রীতিমতো আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে।
ইনকিলাব মঞ্চের ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন গত ১২ ডিসেম্বর। এরপর প্রায় সাতদিন চিকিৎসার অধীনে থাকার পর সিঙ্গাপুরে তাঁর মৃত্যু হয়। জনপ্রিয় ওই ছাত্রনেতার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোটা বাংলাদেশ কার্যত জ্বলে ওঠে। সেই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির মধ্যেই গুলিবিদ্ধ হলেন আরও এক ছাত্রনেতা। বাংলাদেশের ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি বা এনসিপির শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোতালেবের অবস্থা এখন কিছুটা স্থিতিশীল বলেই জানা গিয়েছে। তিনি এথন খুলনার এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশে কেন এবং কিভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি চলছে? এর পিছনে কারা দায়ী? এর জবাব কেউ দিতে না পারলেও, বাংলাদেশে প্রত্যেক দিন নানা ঘটনায় হিংসা এবং উত্তেজনার পারদ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তবে যেটা জানা যাচ্ছে সেটাও কম ভয়াবহ নয়। প্রথমে ওসমান হাদি, তারপর মহম্মদ মোতালেব শিকদারের উপর গুলি চলল। দুজনেরই মাথায় গুলি করা হয়েছে। ফলে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়েছেন বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির নেতা। জানা যাচ্ছে এই দুই ঘটনার পরই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন বহু রাজনীতিবিদ। কেউ চেয়েছেন পুলিশি নিরাপত্তা, আবার কারও দাবি গানম্যানের। আবার কেউ কেউ একাধিক আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সও চেয়েছেন বলে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের খবর। অবশ্য মুহাম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই যোদ্ধা, সমন্বয়ক, নির্বাচনের প্রার্থী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হয়েছে বলেও খবর।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ইনকিলাব মঞ্চের প্রধান তথা ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান হাদির উপর গুলি চালানো এবং তাঁর মৃত্যুর জন্য প্রথমে বিএনপি এবং পরে ভারতকে কাঠগড়ায় তুলে দেওয়া হয়। এরপরই বাংলাদেশে অরাজকতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে যায়। কার্যত আগুন জ্বলে যায় সে দেশে। ভারত-বিরোধী নানা স্লোগানে মুখরিত হতে শুরু করে ঢাকা-সহ বাংলাদেশের বহু শহর, গঞ্জ ও গ্রাম। এরপরই এনসিপি নেতার উপর চলল গুলি। তবে এটা নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য নেই বাংলাদেশে, যতটা হাদির জন্য হয়েছিল। যদিও পরপর দুই ছাত্র নেতার উপর গুলি চালানোর ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে ব্যপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। বিএনপির দাবি, দেশে কার্যত আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। তাঁদের অভিযোগের তির জামায়তে ইসলামীর দিকেই। অন্যদিকে, রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, রাজনৈতিক মতভেদের জেরে প্রকাশ্যে খুনের ঘটনা বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়, কিন্তু দিনের আলোয় এ ধরনের হামলা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। আর সেই পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হচ্ছে কারণ, কোনও ক্ষেত্রেই খুনি বা আক্রমণকারীদের ধরতে পারেনি পুলিশ প্রশাসন।
তবে হাদির ঘটনার পর যেটা হয়েছে সেটা হল বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন উঠে যাওয়া। অথচ সরকারের তরফেই দাবি করা হচ্ছিল হাদির খুনিরা নাকি ভারতে পালিয়ে এসেছে। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, এর ফলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাওয়া হল। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাসে হামলার ঘটনাও যেমন সামনে এসেছে। তেমনই দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনের সামনেও বিক্ষোভ প্রদর্শন হয়। অন্যদিকে, ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রণয় বর্মাকে তলব করে দিল্লির দূতাবাসে ‘হামলা’ নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করল বাংলাদেশ। এই নিয়ে বিগত দশ দিনে দ্বিতীয়বার ভারতের রাষ্ট্রদূতকে তলব করল ঢাকা। যদিও ভারত সেভাবে কোনও পদক্ষেপ এথনও নেয়নি। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি যে খুব একটা ভালো এটা বলা যাবে না। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে নয়া দিল্লির এই নিরাবতা আসন্ন ঝড়ের লক্ষণ হতে পারে। অপরদিকে, বাংলাদেশের অজ্ঞাত বন্দুকবাজদের দাপট নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। যা আগামীদিনে বড়সড় ঘটনার দিকেই ইঙ্গিত করছে বলে মনে করা হচ্ছে।











Discussion about this post