প্যারিস অলিম্পিক্স শুরু হয়েছে মাত্র কয়েকদিন হল। এরমধ্যেই নানান গোলমালের জন্য খবরের শিরোনামে প্যারিস। কোথাও ট্রেন লাইনে আগুন ধরিয়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা, তো কোথাও ইন্টারনেট, টেলিফোনের লাইন কেটে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার চেষ্টা হচ্ছে। এর জেরে ইতিমধ্যেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে অলিম্পিক্স আয়োজকদের। জানা যাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত অলিম্পিক্স চলাকালীন গোলমাল সৃষ্টির জন্য একজনকে গ্রেফতার করেছে ফরাসি পুলিশ। গোটা ফ্রান্স জুড়েই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
ঠিক কি চলছে প্যারিস জুড়ে? ফ্রান্সের ডিজিটাল বিষয়ক দফতরের সচিব মারিনা ফেরারি এক্স হ্যান্ডলে জানিয়েছেন, রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত গোটা প্যারিসে টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত ছিল। মূলত অপটিক্যাল ফাইবার কেবল লাইনে আক্রমণ করা হয়েছিল। ফলে প্যারিস এবং আশেপাশের এলাকায় ইন্টারনেট এবং টেলিফোন পরিষেবা বিঘ্নিত হয়েছিল। তিনি আরও জানান, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করে কর্মীরা মেরামত করার চেষ্টা করেছেন। অপরদিকে সংবাদ সংস্থা এপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ফ্রান্সের অন্তত ৬টি প্রশাসনিক দফতরের কাজকর্ম বিঘ্নিত গয়েছে এই অপটিক্যাল ফাইবার নষ্ট হওয়ায়। ফ্রান্সের মার্সেই শহরের কিছু অংশেও টেলি যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়েছিল। এখানে অলিম্পিক্স ফুটবল এবং সেইলিং ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফলে প্যারিস এবং মার্সেই শহরের এই অপটিক্যাল ফাইবার হানায় বিপর্যস্থ হয়েছে অলিম্পিক্সের খেলাও। আবার জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ফ্রান্সের কিছু অংশে আন্দোলনকারীরা বিদ্যুতের লাইনও কেটে দিয়েছিলেন। ফরাসি পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছে, অতি বাম সমর্থকরা এই ঘটনার জন্য দায়ী। ইতিমধ্যেই এক অতি বামপন্থী দলের সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে ফাইবার নষ্ট করার দায়ে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার দিনভর রেললাইনের ওপর তাণ্ডব চালানো হয়েছিল। ফরাসি সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, অতি বামপন্থী সংগঠনগুলি একের পর এক হামলা চালানোর চেষ্টা করছে প্যারিস অলিম্পিক্স বানচাল করার উদ্দেশ্যে। গত বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের রেল ব্যবস্থাকে পুরোপুরি বিপর্যস্থ করার উদ্দেশ্যে একাধিক জায়গায় রেললাইন এবং স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এর প্রভাব পড়ে ট্রেন পরিচালনার উপর। রাতের অন্ধকারে অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ীরা একাধিক এলাকায় তাণ্ডব চালায় বলে দাবি। রেলের একাধিক পরিকাঠামোয় আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ফলে ফ্রান্সের আটলানন্টিক, নর্দান এবং ইস্টার্ণ শাখায় ট্রেন চলাচল স্তব্ধ হয়ে যায়। এতে ফ্রান্সে অলিম্পিক দেখতে আসা দর্শক থেকে প্রতিযোগীদের একাংশ সমস্যায় পড়েন। যদিও প্যারিস অলিম্পিক্সের আয়োজকরা দাবি করেছেন, এই সমস্ত হামলায় খুব একটা সমস্যা হয়নি গেমসের। কে বা কারা বারবার হামলা চালাচ্ছেন সেটা নিয়ে এখনও সরকারিভাবে মুখ খোলেনি ফরাসি প্রশাসন। তবে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেই খবর।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলির একাধিক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, সাম্প্রতিককালে ফ্রান্স একাধিকবার জিহাদি আক্রমণের শিকার হয়েছে। কিন্তু অলিম্পিক্সের সময় যে আক্রমণগুলি সংগঠিত হচ্ছে তার সঙ্গে আগের আক্রমণের কোনও সম্পর্ক নেই। এর পিছনে রয়েছে ফ্রান্সের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বর্তমানে ফ্রান্সে অতি বামপন্থী সংগঠনগুলি মাথা চাড়া দিচ্ছে। সম্প্রতি ফ্রান্সের সাধারণ নির্বাচনেও অতি বামপন্থীরা ভালো ফল করেছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল ফ্রান্সের আভ্যন্তরিন মন্ত্রী জানিয়েছেন, আমরা অতি দ্রুত রেল নেটওয়ার্ক মেরামত করে পুনরায় পরিষেবা শুরু করার চেষ্টা করছি। যাতে সকলেই অলিম্পিক গেমস উপভোগ করতে পারেন। কিন্তু তিনি এটা খোলসা করেননি, যে কে বা কারা এই হামলার পিছনে দায়ী। ফরাসী ক্রীড়ামন্ত্রীও জানিয়েছেন, প্যারিস অলিম্পিক্সে এই ধরণের হামলার প্রভাব পড়ছে না, তবে তিনিও এর পিছনে কাদের হাত সেটা স্পষ্ট করেননি। ফলে বোঝাই যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মহলে দেশের বদনাম রুখতেই ফরাসি সরকার তৎপর। অপরদিকে অতি বামপন্থীরা যাতে নিজেদের প্রচার না করতে পারে সে দিকেও সচেতন রয়েছে ফরাসি প্রশাসন। তবুও প্যারিস অলিম্পিক্সের উপর অশান্তির কালো মেঘ সরছে না বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের।
Discussion about this post