২০২৪ সালের মাঝামাঝি কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। পরে তা পর্যবসিত হয় হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে। সেই সময়ই সেই সময় থেকেই আন্দোলনের পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন শরিফ ওসমান হাদি। যদিও এর আগে মূলধারার কোনও রাজনৈতিক দলে সক্রিয় ভাবে যুক্ত তরুণ এই নেতা। জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবিতে হওয়া আন্দোলনে যে সব নেতা অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন, হাদি তাঁদেরই একজন হয়ে ওঠেছিলেন। কারণ ওসমান হাদির নেতৃত্বেই ছাত্র-জনতার একাংশকে নিয়ে গড়ে উঠেছিল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চ। এই সংগঠনেরই প্রধান ছিলেন হাদি। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল তাঁর। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে যে যে সংগঠন সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিল, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে অগ্রনী ভূমিকা নিয়েছিল হাদির ইনকিলাব মঞ্চ। ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙার ঘটনায় হাদির সক্রিয় উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর একাধিক ভারত-বিরোধী মন্তব্য তাঁকে কার্যত জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল।
তাঁর একাধিক বক্তৃতার ভাষা নিয়ে রয়েছে তীব্র বিতর্ক। কথায় কথায় তাঁর বক্তব্যে গালিগলাজ ও অপশব্দ চলে আসে। এটা নিয়ে কেউ কেউ তাঁর সমালোচনা করেন। আবার এর জন্যই তাঁকে আইকন হিসেবে মনে করছেন যুব সমাজের একটা বড় অংশ। অবশ্য সে সবে কান দেননি তরুণ নেতা। এই আপাত অশালীন ভাষাকে তিনি ‘মুক্তির মহাকাব্য’বলতেন। যদিও ব্যক্তিগত জীবনে ওসমান হাদি ছিলেন একজন শিক্ষক। তাঁর স্ত্রী ও এক সন্তান রয়েছে। গত নভেম্বরে হাদি নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে দাবি করেন, দেশি-বিদেশি অন্তত ৩০টি নম্বর থেকে তাঁকে ফোন ও মেসেজ পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাঁর অভিযোগের তির ছিল আওয়ামী লীগের দিকেই। গত ১২ ডিসেম্বর, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন ও গণভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়েছিল। তারপর দিনই ঢাকার পুরনো পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে অজ্ঞাত মোটরসাইকেল আরোহীদের গুলিতে গুরুতর জখম হন ইনকিলাব মঞ্চের প্রধান ওসমান হাদি। প্রথম দিকে এই ঘটনার দায় বিএনপির ঘাড়ে দেওয়া হয়েছিল। ঢাকা ৮ আসনে তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়া বিএনপির মির্জা আব্বাস তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গেলে তুমুল বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। কিন্তু খানিক পরই সমস্ত অভিযোগের তির ঘুরে যায় ভারত ও আওয়ামী লীগের দিকে। তাঁর মৃত্যুর পর উত্তাল হল গোটা বাংলাদেশ। কেমন যেন হাদির ওই দাবিই সত্যি প্রমান হয়ে গেল।












Discussion about this post