নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, সরকার প্রধানের রক্তচাপ ক্রমেই বাড়তে শুরু করেছে। প্রথমত সরকার প্রধানের একেবারেই ইচ্ছা ছিল না ভোট হোক। কিন্তু যেভাবে আন্তর্জাতিকমহল থেকে তাঁর ওপর চাপ তৈরি করা হয়েছে, তাতে নির্বাচনের ঘোষণা না করে তাঁর কোনও উপায় ছিল না। তাই, বাধ্য হয়ে তাঁকে নির্বাচনে কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে হয়। আর তার পর থেকে পদ্মাপারে শুরু হয়েছে অশান্তি। খুন, গণপিটুনি, ভিসা অফিস বন্ধ করে দেওয়া – অস্থির পরিস্থিতিতে অনেকেই যে মাথা ঠিক রাখতে পারে না। সেটা তদারকি সরকার প্রধানকে দেখে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, মার্কিন দূত সার্জিও গোরের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছে তদারকি সরকার প্রধান মুহম্মদ ইউনূসের। সোমবার সন্ধ্যায় তাদের মধ্যে কথা হয়। সার্জিও গোর হলেন আমেরিকার দক্ষিণ ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত। কথা হয় আধঘণ্টার মতো। এই আলাপচারিতার সময় যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূতের সঙ্গে তদারকি সরকার প্রধানের দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়। আসন্ন সাধারণ নির্বাচন, দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর এবং তরুণ রাজনৈতিক কর্মী শহীদ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়। নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে মার্কিন দূতকে আশ্বা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, নির্বাচনের আর প্রায় ৫০ দিন বাকি। আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করতে চাই। এটি যেন স্মরণীয় হয়, সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।
সোমবার রাতে ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের অফিসে সে দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিকদের থ্যাংকস গিভিং অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। আমন্ত্রিতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে মার্কিন কর্তারা আভাস দেন বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামি এবং ও উগ্র ইসলামিক দলগুলির কার্যকলাপের কোনও সম্পর্ক নেই। তারা এই উগ্রদলগুলির উগ্র রাজনীতিকে সমর্থন করে না। মনে করা হচ্ছে, শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডকে হাতিয়ার করে জামায়াতে ইসলামি এবং উগ্র ইসলামিক দলগুলি ও তৌহিদি জনতা যেভাবে বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি করছে, তার সঙ্গে মার্কিন প্রশাসন দূরত্ব তৈরি করার চেষ্টা শুরু করেছে। কারণ, জনমনে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে জামাতের এই বাড়বাড়ন্তের পিছনে মার্কিন প্রশাসনের পূর্ণ মদত রয়েছে। সেই কারণে জামাতকে তাঁর সরকারের অন্তরাত্মা হিসেবে মর্যাদা দিয়ে থাকেন।
ইউনূস বলেছেন, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত সময়েই দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। দেশের মানুষ তাদের নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তবে মার্কিন দূতের কাছে ইউনূস এই বলে নালিশ করেছেন যে ক্ষমতাচ্যূত স্বৈরাচারী শাসনের সমর্থকেরা নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে। তাদের পলাতক নেতা হিংসতাকে উসকে দিচ্ছেন। তবে অন্তর্বর্তী সরকার যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।
প্রসঙ্গত সার্জিও গোর বর্তমানে ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁকে একই সঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত নিয়োগ করেছেন। এই অঞ্চলের মধ্যেই বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। ফলে গোরের পক্ষে দিল্লিতে ভারতের প্রতিবেশী এই দুটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, গোর এই টেলিফোনের আলাপচারিতায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি তোলেননি।












Discussion about this post