ছাত্র আন্দোলনের শুরুতে সেনাপ্রধান কোন দিকে থাকেন তা নিয়ে ধন্ধ থাকলেও, আন্দোলন যত এগিয়েছে ততই দেশের অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই অস্থিরতা থেকে দেশের সম্পদ এবং দেশবাসীর জীবন রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন সেনাপ্রধান। বিশেষ করে গত ৫ই আগস্ট সেনাপ্রধান এবং তার টিম যে ভাবে পুরো পরিস্থিতি সামলে হত্যা এবং সম্পদ রক্ষায় অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছেন তা দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছে শুধু গ্রহনযোগ্যই নয় প্রশংসাও কুড়িয়েছে।
২০২৩ সালের ২৩ জুন বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন ওয়াকার-উজ-জামান। দায়িত্ব নিয়েই তিনি যেভাবে একের পর এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন, তেমনটি হয়নি আর অন্য কোন সেনাপ্রধানের ক্ষেত্রে। ঐতিহাসিক জুলাই আন্দোলন, গনঅভ্যুত্থান এবং ৫ই অগস্ট এর হাসিনা বিদায়ের পর, বাংলাদেশের উত্তাল পরিস্থিতি এবং ইউনূস সরকারের অধিনে শপথ। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাপ্রধানের ভূমিকা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে তিনি বিশ্রাম নেওয়ারও সময় পাচ্ছেন না। এখনও তিনি বিচক্ষনতার সাথে তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ছাত্রআন্দোলে হাসিনা সরকার যখন কার্ফিউ এর নির্দেশ দিয়েছিলেন তখন থেকেই সকলের নজর ছিল সেনাপ্রধানের দিকে। অনেকে এই রকম আশঙ্কাও করছিলেন যে আবার বাংলাদেশ সেনার হাতে চলে যাচ্ছে। কারণ সেই সময় সেনাপ্রধানের হাতেই ছিল বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। সেনাপ্রধান যদি সাহসী ভূমিকা না নিতেন,তাহলে গনহত্যা এবং গৃহযুদ্ধের মুখে পড়তে হতে হত বাংলাদেশকে ।
তাই গনঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে সবথেকে ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম হলেন ওয়াকার উজ জামান। ইউনূসের প্রতিটা কাজকর্মের দিকে গভীর নজর রাখতে হয় সেনাপ্রধানকে। প্রয়োজনে কোন পথে এগোলে দেশের ভালো তাও ঘুরিয়ে বুঝিয়ে দেন ইউনূস সরকারকে। তার দূরদৃষ্টির জন্যই স্বৈরাচার এবং গৃহযুদ্ধের হাত থেকে বেঁচেছে বাংলাদেশ। জুলাই আন্দোলন যখন চরমে, তখন সরকার কারফিউ জারি করে। সরকারের নির্দেশ মেনে সেনাবাহিনী কঠোর হলে, এবং দেশের জনগনের বিরুদ্ধে গিয়ে আন্দোলনকে দমন করলে, হত্যার সংখ্যা হিসাব করা যেত না বলেই মত অনেকের। যেখানে সেনাপ্রধান হাসিনার আত্মীয় বলে প্রচার করা হয়, সেখানে সেনাপ্রধান কোন দিকে থাকবেন তাই নিয়ে চিন্তায় ছিলেন সাধারণ জনগন। কিন্তু সেনাপ্রধান দেশবাসীর পক্ষ্যে থেকে আন্দোলনে বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকেন। তার এই সঠিক সিদ্ধান্তের ফলেই বাংলাদেশ বেঁচে যায় গৃহযুদ্ধ এবং গনহত্যার হাত থেকে। সেনাপ্রধান ইউনূসকে সমস্তরকম সাহায্যের আশ্বস দিয়ে বলেন, দেশের অগ্রগতির জন্য একটি সরকার লাগবে। আমরা আমাদের অসুবিধা হলেও বর্তমান সরকারকে দেশের অগ্রগতির জন্য প্রাণপণ সহযোগিতা করে যাব। ভারত এবং বাংলাদেশের চরম বিরোধীতার মধ্যে তিনি জানান, ভারত আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী, আমরা ভারতের থেকে অনেক বিষয়ে নির্ভরশীল এবং ভারতও আমাদের থেকে অনেক সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে। বাংলাদেশের অনেক মানুষ যেমন ভারতে কাজ করেন, তেমনই ভারতের অনেক মানুষ বাংলাদেশে কাজ করেন।
আবার বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারতে আসেন, এছাড়া দু-দেশের মধ্যে পণ্য বিনিময়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখা হয়। তাই বাংলাদেশের স্থিরতা ভারতের কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক হল দেওয়া নেওয়ার সম্পর্ক এবং এটিকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকিয়ে রাখতে হবে। সব দেশই চাইবে বেশী সুবিধা আদায় করে নিয়ে এতে দোষের কিছু নেই , আমাকেও আমার দেশের পাওনা আদায় করে নিতে হবে। অর্থাৎ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হবে সমানে সমানে এখানে দয়া দাক্ষ্যিনের কোন ব্যাপার নেই। চীনের ব্যাপারেও বাংলাদেশের সেনাপ্রধান খোলামেলা মনোভাব প্রকাশ করেন, তার মতে বিদেশ নীতি হবে বন্ধ্যুত্বপূর্ণ কারও সঙ্গে বৈরীতা উচিৎ নয়।
Discussion about this post