ওপার বাংলার জেল পালানো জঙ্গিদের অনুপ্রবেশের আশঙ্কা করছে ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগ। বাংলাদেশে অশান্তি অব্যহত তার মাঝে সামনে এসেছে ভুয়ো নথি তৈরি করে ভারতে আসার একাধিক অভিযোগ। এমনকি এই ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গেও।
বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লব। সেই বিপ্লবের সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেল থেকে অন্তত ২,২০০ জন বন্দি পালিয়ে গিয়েছিল। বিপুল সংখ্যাক আসামি জেল থেকে পলাতক। আবার বাংলাদেশ কারা দফতরের মহা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মহম্মদ মোতাহের হোসেন পুরো বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন, ২, ২০০ জন আসামি পালিয়ে গিয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ১,৫০০জনকে পরে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু ৭০০জন এখনও পর্যন্ত পলাতক। তিনি জানিয়েছেন তার মধ্যে আবার ৭০জন ঘোষিত জঙ্গি ও সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্র দাবি করেছে, বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লবের আগেই এ রাজ্যে ঢুকে পড়েছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরির। বৈধ পাসপোর্ট নিয়েই প্রবেশ করেছে তারা। মালদহের মহদিপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকে বৈষ্ণবনগরে যায় ২ জঙ্গি।
এমনই হাড় হিম করা তথ্য সামনে এসেছে গোয়েন্দা সূত্রে। এখানেই শেষ নয়, বাংলাদেশি পড়ুয়াদের জন্য দিল্লিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে ভিসা অফিস রয়েছে, তা অন্যত্র স্থানান্তরিত করার জন্য বৈঠক করছে ইউনূস সরকার। ভারতের গোয়েন্দা বিভাগ জানাচ্ছে, ইতিমধ্যেই ছাত্র পরিচয়ে, টুরিস্ট ভিসা নিয়ে ২ জঙ্গি প্রবেশ করেছিল ভারতে।জঙ্গিদের নাম আমির ওরফে সাব্বির ও রিদওয়ান মারুফ। সূত্রের খবর, ওই ২ জঙ্গি বৈষ্ণবনগরের এক যুবকের বাড়িতে যায়। বৈষ্ণবনগরের একাধিক এলাকাতেও যায় তাঁরা।
বেশ কয়েকটি বৈঠক করে দু’জন। এর পর তারা বৈষ্ণবনগর থেকে চলে যায় ধুলিয়ানে। তদন্তে জানা গিয়েছে, ২ জঙ্গিই রাজশাহীর বাসিন্দা। রিদওয়ান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমির ওরফে সাব্বির হিজবুত তাহরিরের পুরনো সংগঠক এবং নেতা। ৩০ মে তো তারা চলে গেলেও বৈষ্ণবনগর ও ধুলিয়ানে শিকড় গেঁথে রেখে গিয়েছে মনে করা হচ্ছে। সেই ভয়ঙ্কর তথ্যও উঠে এসেছে গোয়েন্দা রিপোর্টে। ওই দুই যুবক ছাড়াও আরও কয়েকজন যুবক সম্প্রতি এই সমস্ত এলাকায় খিলাফত নিয়ে বৈঠক করেছে। গোয়েন্দাদের জোরালো সন্দেহ, এই এলাকাগুলোয় সংগঠন বিস্তারের চেষ্টা করছে নিষিদ্ধ হিজবুত তাহরির। এই তথ্য সামনে আসতেই উদ্বেগ বাড়তে গোটা বাংলাজুড়েই।
এবার প্রশ্ন এই বিপুল সংখ্য়ক জঙ্গি গেল কোথায়? তারা ভারতে প্রবেশ করেনি তো? এই শঙ্কা ছড়িয়েছে ভারতের বিভিন্ন মহলে। কারণ তারা যদি বাংলাদেশের বাইরে থেকে কোথায় যদি নাশকতার পরিকল্পনা করে তাহলে বিপদের কালো মেঘ ঘনিয়ে আসতে পারে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুসারে জানা গিয়েছে, সৈয়দ মহম্মদ মোতাহের হোসেন বলেন, দুর্নীতি ও অনিয়মের জড়িত থাকার অভিযোগে চার কারা আধিকারিককে অবসরে পাঠানো হয়েছে। আরও কিছু অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষ হওয়ার পরে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এখানেই প্রশ্ন অন্তত ৫ মাস আগে জেল থেকে এতজন জঙ্গি পালিয়ে গিয়েছে। তারপরও তাদের কোনও খোঁজ দিতে পারছে না বাংলাদেশ। এবার প্রশ্ন তারা গেল কোথায়? তবে কি জঙ্গিরাও এবার বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্য়ে নিজেদের লুকিয়ে ফেলল? নাকি তারা ভারতে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে বা নিয়ে ফেলেছে? এই সমস্ত প্রশ্ন ঘুরছে কুটনৈতিক মহলে। বাংলাদেশে প্রতিমুহূর্তে হিন্দুদের উপর অত্যাচার নেমে আসছে। তারপরেও উদাসীন বাংলাদেশের তদারকি সরকার। নানাভাবে বিষয়টি হালকা ও আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বলা যায়, বর্তমানে ওপার বাংলায় চলছে ব্যাপক হানাহানি। সেই উত্তেজনার আঁচ এসে পড়েছে এপারেও। সেই সঙ্গে ৭০জন জঙ্গিকেও এতদিনেও ধরতে ব্যর্থ বাংলাদেশের অন্তরবর্তী সরকার।
Discussion about this post