অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি আবার শান্তির জন্য নোবেল সম্মান পেয়েছেন। তাঁকে কার্যত গোটা বিশ্ব চেনে তাঁর মাইক্রোফিনান্স ব্যাঙ্কিংয়ের জন্য। তিনি এখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সর্বেসর্বা। ফলে ধরে নেওয়া হয়েছিল, তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এক উল্লেখযোগ্য শিখরে নিয়ে যাবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশকে এক দৃঢ় আর্থিক ভিতের উপর দাঁড় করিয়ে দেবেন। কিন্তু বিগত ১৫-১৬ মাসে কি হয়েছে? বাংলাদেশের ব্যাঙ্ক খাত আজ এক নজিরবিহীন সংকটের মুখোমুখি। দীর্ঘ ৩৪ বছর পর, অর্থাৎ ১৯৯০ সালের পর বাংলাদেশের ব্যাঙ্কখাতটি গড় হিসাবে লাভের ঘর ছেড়ে নেমে এসেছে লোকসানের খাতায়। এমনকি আইএমএফের ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির ষষ্ঠ কিস্তি দিতে অস্বীকার করেছে বাংলাদেশকে। তাঁরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশে যতদিন না নির্বাচিত সরকার আসছে ততদিন আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড়বে না। ফলে আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে যদি কিছু করেও থাকেন, তাঁর নিজের ক্ষেত্র অর্থনীতিতে ডাহা ফেল করেছেন। এবার জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ‘ক্ষুদ্রঋণ ব্যাঙ্ক’ প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিয়েছে ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ‘ক্ষুদ্রঋণ ব্যাঙ্ক অধ্যাদেশ, ২০২৫’–এর খসড়া প্রণয়ন করেছে। ওই খসড়ায় বলা হয়েছে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য দূরীকরণে সামাজিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে এই ব্যাঙ্ক। তবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারবে না। অর্থাৎ, এসব ব্যাঙ্কের শেয়ার পুঁজিবাজারে কেনাবেচার যোগ্য হবে না। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের দাবি, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পরই ক্ষুদ্রঋণ ব্যাঙ্কের খসড়া তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। যদিও খসড়াটি তৈরি করে দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। প্রসঙ্গত, মুহাম্মদ ইউনূস সেদিন বলেছিলেন, ক্ষুদ্রঋণই আগামীদিনে ব্যাঙ্কিংয়ের ভবিষ্যৎ। এ ব্যাঙ্ক প্রচলিত ধারার মতো হবে না। এই ব্যাঙ্ক চলবে বিশ্বাস ও আস্থার ওপর ভিত্তি করে, যেখানে ঋণ নিতে কোনও জামানত লাগবে না। পাশাপাশি এ ব্যাঙ্কের বড় উদ্দেশ্য হবে সামাজিক ব্যবসাকে ছড়িয়ে দেওয়া। বিষয়টা বেশ সুন্দর হলেও ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, এর মধ্যে মুহাম্মদ ইউনূসের আরও একটি ব্যাবসার সূত্রপাত হবে এর মাধ্যমে। তিনি গ্রামীণব্যাঙ্কের অনুকরণে আরেকটি প্রতিষ্ঠান সরকারি মোড়কে তৈরি করে ফেলতে চাইছেন। সূত্র বলছে, বাংলাদেশে এখন ক্ষুদ্রঋণ দেয় এনজিওগুলোই।
মজার বিষয় হল, যে কোনও দেশের ব্যাঙ্কিং খাতে আয়ের মূল উৎসই হল ঋণ থেকে আসা সুদের টাকা। কিন্তু গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের ব্যাঙ্কগুলো থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে দেওয়া বিশাল অঙ্কের ঋণ এখন অনাদায়ি হয়ে খেলাপি হয়ে গেছে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, এক বছরেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৩ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। বিগত হাসিনা সরকারের আমলে তা ছিল প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে এখন ৫ লাখ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি রয়েছে। সে বিষয়ে মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা দৃশ্যমান নেই। বাংলাদেশের ব্যাঙ্কিং খাতের উন্নতি সাধনের কোনও পরিকল্পনা নেই। উল্টে তিনি মাইক্রোফিনান্স ব্যাঙ্ক বা ক্ষুদ্রঋণ ব্যাঙ্কের দিকে মনোনিবেশ করছেন। এর পিছনে রয়েছে মুহাম্মদ ইউনূসের একটা বড় উদ্দেশ্য। তাঁর গ্রামীণ ব্যাঙ্ক নিয়ে উঠতে শুরু করেছে নানান অভিযোগ। তাই সরকারি উদ্যোগে নতুন ক্ষুদ্রঋণ ব্যাঙ্ক থুলে নতুন করে সাধারণ মানুষকে ঋণের ফাঁদে ফেলে টাকা আত্মসাৎ করতে চাইছেন।
প্রসঙ্গত, ২২ ডিসেম্বর দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং বাজেট ব্যায় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে আজ একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, বিগত ১২ মাসের গড় হিসেবে দেশের সার্বিক মুদ্রাস্ফীতি ২০২৩ সালের জুন মাসের পর সর্বপ্রথম ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে ৯ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে। আশা করা হয়েছে, আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে তা ৭ শতাংশের নীচে নেমে আসবে। কিন্তু আদৌ এই তথ্য কতটা বাস্তব সম্মত তা নিয়েই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদদের একাংশ। কারণ, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে প্রবল বেকারত্ব। আর এই আবহে ইউনূস সাহেব নতুন ক্ষুদ্রঋণ ব্যাঙ্ক থুলে তাঁদের ঋণের ফাঁদে জড়াতে চাইছেন।












Discussion about this post