লোকসভা ভোট মিটেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে হার-জিতের পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। পিছিয়ে নেই সিপিআইএমও। ভোট পর্যালোচনায় রাজ্য কমিটির বৈঠকে এবার সেলিমকে নিয়ে প্রশ্ন। কেন মহম্মদ সেলিম দাঁড়ালেন ভোটে? জোরাল প্রশ্ন উঠে এল রাজ্য কমিটির বৈঠক থেকে। প্রশ্ন তুললেন কৃষকনেতা তথা অবিভক্ত বর্ধমানের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক অমল হালদার। ২৪ ঘণ্টা পর রাজ্য কমিটির বৈঠকে ফের উঠল আওয়াজ। তবে সেলিমের বিরুদ্ধে নয়। সেলিমের পক্ষে। মহম্মদ সেলিমের হয়ে কথা বললেন রানাঘাটের প্রাক্তন সাংসদ অলকেশ দাশ। এ বারেও তিনি লোকসভা ভোটে রানাঘাট আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। যদিও পরাস্ত হয়েছিলেন তৃণমূলের সূর্য অট্টের কাছে।
অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন মহম্মদ সেলিম। তৃণমূলের আবু তাহের খানের কাছে হেরে যান মহম্মদ সেলিম। ৬ লক্ষ ৮২ হাজার ৪৪২ টি ভোট ঝুলিতে ভরে ৪৪.২৭ শতাংশ ভোট পান তিনি। ৫ লক্ষ ১৮ হাজার ২২৭ টি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় আসন ধরে রাখেন বিজেপির গৌরীশঙ্কর ঘোষ। ২ লক্ষ ৯২ হাজার ৩১ টি ভোট পেয়ে তৃতীয় হন সেলিম। সেলিমের প্রাপ্ত ভোটের হার ১৮ শতাংশের কিছু বেশী। মুর্শিদাবাদ লোকসভা দীর্ঘ সময় বামেদের দখলে ছিল। মাঝে কংগ্রেস। তারপর তৃণমূল।চব্বিশের নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে লড়েন সিপিএম-এর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। বামেদের সমর্থন জানিয়েছে কংগ্রেস। তবে পুরনো জমি ফিরে পেল না সিপিআইএম।
বৈঠকে অলকেশ দাশের মত নেতৃত্ব দাবি করেন সেলিম প্রার্থী না হলে প্রচার এই জায়গায় যেত না। মুর্শিদাবাদ আসনে এত ভোটও অন্য কেউ পেতেন না। বলাবাহুল্য মহম্মদ সেলিম পলিটব্যুরোর সদস্য। পলিটব্যুরোর সমর্থন না থাকলে তিনি দাঁড়াতে পারতেন না। আর এই ইস্যুতে সূর্যকান্ত মিশ্র দাঁড়িয়েছেন সেলিমের পাশে। তিনিও একই যুক্তিতে সহমত। বাংলায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক পদে থেকে ভোটে লড়ার নজির সেলিমের আগে একমাত্র ছিল সূর্যকান্তেরই।
সিপিআইএমের এবার ভোট পর্যালোচনা বর্ধিত অধিবেশনের পথে এগিয়েছে। এমনকি এটাও প্রকাশ্যে এসেছে যে কলকাতার কোলাহল থেকে দূরে গিয়ে সেই অধিবেশন করতে চায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। রাজ্য কমিটির বৈঠকের শেষে সেলিম সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণা করেছেন, বস্তুতই সেই ‘বর্ধিত অধিবেশন’ হচ্ছে। সেটি হবে আগামী ২৩-২৫ অগস্ট নদিয়ার কল্যাণীতে।চলতি বছরের অক্টোবর মাস থেকেই সারা দেশে সিপিএমের সাংগঠনিক সম্মেলন প্রক্রিয়া শুরু হবে। গোটা জুলাই মাস ধরে পর্যালোচনা করবে শাখা থেকে জেলা কমিটিগুলি। তার পরে সমর্থকদের মতামত শোনা হবে।
শুধু মহম্মগদ সেলিম নন। সিপিআইএমের আরও এক রাজ্য সম্পাদক ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ছিলেন । তিনি সূর্যকান্ত মিশ্র। ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় থেকে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কিনা সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল দলের অন্দর থেকে। সেবার ভোটে দাঁড়াতে চাননি তৎকালীন সিপিআইএমের বিধায়ক। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুরও একই মত ছিল। তিনি প্রার্থী না হলে নারায়ণগড় রক্ষা করা মুশকিল, এই যুক্তি দেখিয়ে বেঁকে বসছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিআইএম এবং তাতে সমর্থন ছিল দলের রাজ্য নেতৃত্বের বড় অংশেরও। আসলে সংকট ছিল আরও গভীরে। আসন্ন বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বামফ্রন্টের মুখ কে? সেই নিয়ে দলে সংশয় দেখা গিয়েছিল। আর তাতেই সূর্যকান্তের দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অধিক অনুভূত হয়। দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মত ছিল, গত পাঁচ বছরে বিরোধী দলনেতা হিসাবে সূর্যবাবু যে ভাবে সামনের সারিতে এসেছেন, তাতে তিনিই এখন সামনে রাখার মতো মুখ হতে পারেন। কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টিতে রাজ্য সম্পাদকেরা সচরাচর ভোটে লড়তে যান না। প্রমোদ দাশগুপ্ত, সরোজ মুখোপাধ্যায়, অনিল বিশ্বাস বা বিমানবাবুরা সংগঠনই দেখতেন। জ্যোতি বসু, বুদ্ধবাবুদের কাঁধে ছিল সরকারের দায়িত্ব।
Discussion about this post