সোমবারই কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই চাকরিহারা এই শিক্ষিকার হাহাকার যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল গোটা নেতাজি ইনডোরে। এসএসসিতে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি গিয়েছে ২৫ হাজার ৭৩৫ জনের। তাঁদের মধ্যে কতজন যোগ্য আর কতজন বাঁকা পথে চাকরি পেয়েছিলেন, সেটাই বাছতে পারেনি এসএসসি। যার দায় বর্তায় সরাসরি রাজ্য সরকারের ওপরেই। এই আবহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজি ইনডোরে দাঁড়িয়ে দাবি করেছিলেন, কোনও যোগ্য প্রার্থীর চাকরি বাতিল হতে দেবেন না। সেখানে চাকরিহারাদের আশ্বাস দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রথমে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের কাছে এই রায়ের ব্যাখ্যা চাইবে। যদি আদালতে সমস্যার সমাধান না-হয়, আইন মেনেই তিনি ‘যোগ্য’দের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করে দেবেন। আপাতত স্কুলগুলিতে চাকরিহারাদের স্বেচ্ছায় পরিষেবা বা ভলান্টারি সার্ভিস চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অর্থাৎ, আপাতত বিনা পয়সায় কাজ করুন, পরে আমি সব ঠিক করে দেব।
মুখ্যমন্ত্রী এ হেন দাবি করার পরও দেখা গেল চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা আস্বস্ত হতে পারছেন না। নবান্ন সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার সমস্ত চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পার্শ্বশিক্ষক হিসেবে আপাতত মনোনয়ন দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। অর্থাৎ, যারা সরকারিভাবে শিক্ষকের কাজ করতেন, তাঁরাই এখন পার্শ্বশিক্ষক হয়ে যাবেন। যদিও পার্শ্বশিক্ষকদের বেতন সামান্য বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রকের কাছে। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছেন, এভাবেই চাকরিহারাদের ক্ষোভ প্রসমনের রাস্তা খুঁজছেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও এদিন দেখা গেল, কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় আন্দোলনরত সদ্য চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ওপর নির্বিচারে লাঠি চালালো পুলিশ। যদিও পরে সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জানান, বাধ্য হয়েই ‘হালকা বলপ্রয়োগ’ করা হয়েছে। তাঁর পাশে বসেই কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা বলেন, “পুলিশ কারও বিরুদ্ধে নয়। পরিস্থিতি বাধ্য না-করলে পুলিশ বলপ্রয়োগ করে না”। অর্থাৎ ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা।
কিন্তু তাতেও কি চিঁড়ে ভিজছে? সদ্য চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা হুমকি দিলেন, ‘ সরকারকে আমরাই নামাব।’ পুলিশের লাঠির বাড়ি খেয়ে আরেক চাকরিহারা বললেন, ‘ মিলিয়ে নেবেন, এ সরকার টিকবে না, লিখে দিলাম। সরকারকে আমরাই নামাব। দুপুরে চাকরিহারাদের বিক্ষোভে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কসবার ডিআই অফিস। আর বিকেল গড়াতেই বিক্ষোভের অন্য ছবি দেখা গেল কলকাতার গড়িয়াহাট চত্বরে। পরপর রাস্তায় শুয়ে পড়লেন চাকরিহারারা। তাঁদের দাবি, যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা পৃথকভাবে প্রকাশ করা হোক। অপরদিকে প্রাক্তন বিচারপতি তথা বর্তমান বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নিজ উদ্যোগে গিয়েছিলেন এসএসসি দফতরে। তিনি সেখান থেকে বের হয়ে দাবি করেন, রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে বিষয়টি সমাধান করার কথা বলেছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি পুলিশ চাকরিহারাদের ওপর লাঠিচার্জ করছে। তিনি আরও বলেন, আর ভদ্রলোকের মতো আচরণ করে লাভ নেই। প্রতিবাদে তিনি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীকে দিতে চাওয়া একটি চিঠি ছিঁড়ে প্রতিবাদ করেন।
সবমিলিয়ে পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে একটা বিষয় পরিস্কার আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা মুখ্যমন্ত্রীর মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়াবেন। তিনি যতই নেতাজি ইনডোরে নিজের দোষ-ত্রুটি অস্বীকার করে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় বাম ও বিজেপিকে দোষারোপ করুন না কেন। আদতে এসএসসি ও রাজ্য সরকারের অপদার্থতাতেই যে এতজনের চাকরি গেল সেটা এখন সকলেই বুঝতে পারছেন।
Discussion about this post