সায়ন্তিকাদের শপথগ্রহণ নিয়ে জটিলতা অব্যাহত। রাজ্য ও রাজভবনের টানাপোড়েনে দুই বিধায়কের শপথগ্রহণের সময় পিছিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিলেন রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে রাজ্যপালকেও চিঠি দিয়ে বিধানসভায় এসে শপথগ্রহণ করানোর অনুরোধ জানালেন। শপথগ্রহণের জটিলতার মাঝে দিল্লি রওনা দিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। বুধবার রাজভবনে এসে সায়ন্তিকা ও রায়াত হোসেন সরকারকে শপথগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিলেন রাজ্যপাল। সায়ন্তিকারা রাজভবনে গিয়ে শপথগ্রহণে নারাজ।
কারণ হিসেবে তারা ২ টি যুক্তির কথা তুলে ধরলেও আদতে তাঁদের নেত্রীর তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থণ নেই রাজভবনে বিধায়কদের শপথগ্রহণে। বৃহস্পতিবার কলকাতার রাজপথে হকারদের ভবিষ্যত নিয়ে বৈঠক করে। বৈঠকের মাঝে মমতা বলেন, ‘‘জেতার পরেও এক মাস ধরে আমার বিধায়কেরা বসে আছেন! রাজ্যপাল শপথ নিতে দিচ্ছেন না। মানুষ ওঁদের নির্বাচিত করেছে। ওঁর কী অধিকার তাঁদের শপথ নিতে না দেওয়ার? উনি হয় স্পিকারকে এই অধিকার দিন, নয়তো ডেপুটি স্পিকারকে দিন। আর তা না হলে নিজে বিধানসভায় যান। ওঁর রাজভবনে কেন সকলে যাবে?’’
গত কয়েক মাস আগে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগ তোলেন রাজভবনেরই এক অস্থায়ী মহিলা কর্মচারী। এদিন সেই দিকেই ইঙ্গিতই করতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন রাজভবনে যা কীর্তি কেলেঙ্কারি চলছে তাতে মহিলারা যেতে ভয় পাচ্ছেন। অর্থাৎ রাজভবন যে নিরাপদ নয় মেয়েদের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কথায় তা জলের মতো পরিস্কার ছিল। রাজ্যপাল রাজ্যের সংবিধানিক প্রধান। সেই হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে কোন ফৌজদারি মামলা আনা যায় না। কারণ তিনি সাংবিধানিক রক্ষাকবচ পেয়ে থাকেন। এরআগেও মমতা বলে দিয়েছিলেন, তিনি রাজভবনে যাবেন না। সেখানকার নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর বিধায়কদের শপথগ্রহণের সমস্যাতেও কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই নিরাপত্তা প্রসঙ্গ।
এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে রাষ্ট্রপতি দ্রোপদী মুর্মুর কাছে চিঠি লিখেছেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি রাজ্যপালকেও চিঠি লিখলেন। সূত্রের খবর বিধানসভায় রাজ্যপালকে আসার অনুরোধ জানিয়ে তিনি লিখেছেন শপথগ্রহণ নিয়ে আর জটিলতার মধ্যে না যাওয়াই ভাল। রাজ্যপাল এখন দিল্লিতে। তিনি ফিরে আসার পর পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায় সেটাই এখন দেখার। তবে বিধানসভা উপ-নির্বাচনে শপথগ্রহণ করানো নিয়ে টানাপোড়েন নিকট অতীতেও দেখা গিয়েছে। বালিগঞ্জের বিধায়ক বাবুল সুপ্রিয়, ধূপগুড়ির বিধায়ক নির্মলচন্দ্র সাঁতরার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে ।
সাধারণত রাজ্যপাল মন্ত্রীদের শপথবাক্য পাঠ করান। বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করানোর দায়িত্ব বিধানসভা স্পিকার অথবা ডেপুটি স্পিকারের হাতে ছেড়ে দেন। তবে সবটাই নির্ভর করে রাজ্যপালের উপর। কারণ বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করানোর ক্ষেত্রে তিনিই শেষ কথা। বিগত কয়েক বছরে রাজ্যে ঘটে চলা কয়েকটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এমনটাই মনে হচ্ছে রাজ্য ও রাজভবনের মধ্যেকার ইস্যু অনেকটাই ইগোয় পরিণত হয়েছে। উভয়ের টানাপোড়েনের মাঝে সঠিক পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বিধানসভা এলাকার মানুষজন
Discussion about this post