বৃহস্পতিবার চাকরিহারা শিক্ষকদের বিক্ষোভ অভিযানে উত্তাল হলো সল্টলেক করুণাময়ী চত্বর। অবিলম্বে যোগ্যদের তালিকা প্রকাশসহ দফা দাবিতে বিকাশ ভবন ঘেরাও অভিযান চাকরিহারা শিক্ষক অধিকার মঞ্চের। বিকাশ ভবনের ভিতরে ঢুকতে বাধা পেয়ে লোহার গেট ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করেন শিক্ষকরা। বিক্ষোভকারীদের সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। এই পরিস্থিতিতে আচমকা বিকাশ ভবনের ভিতরে ঢোকেন বিধাননগর পৌরনিগমের মেয়র সব্যসাচী দত্ত। শাসক দলের নেতাকে ঘিরে শুরু হয় শিক্ষকদের চোর চোর স্লোগান, চলে নেতার দাদাগিরিও!
উল্লেখ্য, চাকরি বাতিলের প্রতিবাদে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা গত মাসের ২১ থেকে ২৪ তারিখ এসএসসি ভবনের সামনে অবস্থানে বসেছিলেন। এরপর চলতি মাসের ৭ তারিখ বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থান শুরু করেন চাকরিহারাদের শিক্ষকরা।
বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবন ঘেরাও অভিযানের ডাক দিয়ে ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের নেতৃত্বে বিকাশ ভবনের সামনে জড়ো হন চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের একটা বিরাট অংশ। সময়ের সাথেসাথে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিকাশ ভবনে প্রবেশে বাঁধা পেলে ভবনের প্রধান গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীদের একাংশ। এলাকায় মোতায়েন করা পুলিশেকর্মী পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে চাকরিহারারা তাঁদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। এরপরই ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিল। তৃণমূল নেতা তথা বিধাননগর পৌরনিগমের মেয়র সব্যসাচী দত্ত বিকাশ ভবনে ঢোকার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি চরমে পৌঁছোয়। কিন্তু সব্যসাচী দত্ত ভিতরে পৌঁছতেই পারেনি। তার আগেই শুরু হয় ভয়ংকর পরিস্থিতি। চাকরিহারারা রীতিমতো ঘিরে ধরেন সব্যসাচী দত্তকে। তাঁকে ধরে রীতিমতো টানা হিঁচড়া চলতে থাকে। নিরাপত্তা রক্ষীদের তৎপরতায় তাঁকে কোনওক্রমে বার করে আনার চেষ্টা চলে। ভিড়ের মাঝ থেকে টেনে বার করে আনেন তৃণমূল নেতাকে। চাকরিহারাদের তরফে নেতা কে ঘিরে ওঠে ‘চাকরি চোর’ স্লোগান । সব্যসাচী দত্তকে কোনওক্রমে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছন নিরাপত্তারক্ষীরা আর সেই মুহূর্তেই রীতিমতো গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন চাকরিহারাদের একাংশ।
এই ঘটনায় শুরু হয় বচসা। বিধান নগর পৌর নিগমের মেয়র সব্যসাচী দত্ত বলেন, “আমি আমার নিজের কাজে এসেছিলাম। ওরা ওদের আবেগে করছে। মুখ্যমন্ত্রী রিভিউ পিটিশন করেছেন। এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। ওরা জানেও না কাকে বিক্ষোভ দেখাবে? চোর স্লোগান কাকে দিচ্ছে ওরাই জানে”
চাকরিরা শিক্ষকদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে ঠিক কি বললেন সব্যসাচী দত্ত শুনুন,,
শাসক দলের নেতার এ বক্তব্যের পর চাকরিহারাদের তরফ থেকে বলা হয়, “আমরা যদি চুরি করে থাকি, তাহলে আমাদের গুলি চালিয়ে দিক।”
চাকরি হলো শিক্ষকরা ঠিক কি বললেন শুনন এবার,
নেতাকে ঘিরে যখন বিক্ষোভ চলছে তখন পাল্টা দাদাগিরি শুরু করতে এই পরিস্থিতির মধ্যে হঠাৎ করে ওই এলাকায় পৌঁছে যান তৃণমূল নেতার অনুগামীরা। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অনুগামীরা হঠাৎ করে হেলমেট দিয়ে মারধর করতে থাকেন। সাংবাদিকদের ছবি তুলতে, খবর করতে বাধা দেন বলেও অভিযোগ। অনুগামীদের দেখে নিজেও দাদাগিরি শুরু করেন সব্যসাচী দত্ত। নিজেই টেনে হিঁচড়ে চাকরিহারাদের সরাতে থাকেন। সাংবাদিকের গায়ে হাত দেন তার অনুগামীরা। এক কথায় ধুন্ধুমার পরিস্থিতি শুরু হয় শাসকদলের নেতা ও চাকরি করার শিক্ষকদের এই বচসাকে ঘিরে।
উল্লেখ্য, এদিন বিকাশ ভবন ঘেরাও অভিযান শুরু করে চাকরি করার শিক্ষকেরা এবং চাকরিহারারা মূলত সাত দফা দাবি নিয়ে এই অভিযান শুরু করে। এই সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, সসম্মানে তাঁদের চাকরি ফেরানোর দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। রিভিউ-সহ অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকরি ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমতো নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরুর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার আগে চাকরিহারাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে শিক্ষা দফতরকে। রিভিউয়ের বিষয়েও সরকারকে চাকরিহারাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আরও জানানো হয়েছে, একই চাকরির জন্য বার বার যোগ্যতার পরীক্ষা তাঁরা দেবেন না। প্রয়োজনে রাজ্য সরকারকে স্বতন্ত্র ক্ষমতা প্রয়োগ করে নতুন প্যানেল প্রকাশ করে বৈধ উপায়ে ‘যোগ্য’দের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে।
এই ঘেরাও অভিযানের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন জায়গায় পথনাটিকার মাধ্যমেও তাদের দাবি তুলে ধরেছেন চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশ ।
Discussion about this post