বুধবার ৮১ আসনে ঝাড়খণ্ডে প্রথম দফায় ৪৩টি বিধানসভা আসনে ভোটগ্রহণ হল। সেই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের ৬টি বিধানসভায় উপনির্বাচনও অনুষ্ঠিত হল। এই নির্বাচনে ঝাড়খণ্ডে সেরকম কোনও গোলমাল না হলেও এই বাংলায় কিন্তু হল। ভোটের দিন সাত সকালেই নৈহাটি বিধানসভা লাগোয়া ভাটপাড়ায় শুটআউট হল। তাতে এক তৃণমূল নেতার মৃত্যু হয়। যদিও পুলিশের দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে ভোটের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে নৈহাটি বিধানসভা উপনির্বাচনে এর প্রভাব পড়ল।
আবার উত্তরবঙ্গের একমাত্র যে বিধানসভা বিজেপির দখলে ছিল, সেই মাদারিহাটে দিনভর শাসকদলের দাপাদাপি লক্ষ্য করা গেল। মুজনাই চা বাগানে বিজেপি প্রার্থী রাহুল লোহারের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ হল। তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছোঁড়ার অভিযোগ উঠল। তাতে মাদারিহাটের বিজেপি প্রার্থীর গাড়ির কাঁচ ভাঙে। বিজেপি প্রার্থী রাহুল লোহারের দাবি, “তৃণমূল জানে শান্তিতে ভোট হলে ওরা হেরে যাবে। বিজেপি সব ভোট পাবে। উল্লেখ্য, বিজেপির সাংসদ তথা প্রাক্তন বিধায়ক মনোজ টিগ্গার ছেড়ে যাওয়া আসনে ভোট হচ্ছে মাদারিহাটে। এই কেন্দ্র থেকেই সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসল দিনভর। মাদারিহাটের ১১৪ বুথে ভোটারদের তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
অপরদিকে, ইভিএম মেশিন বসানো নিয়ে গণ্ডগোল বেঁধে যায় হাড়োয়া বিধানসভার সদরপুরের হাই স্কুলের ২০০ নম্বর বুথে। অভিযোগ, বুথে জানালার পাশে ইভিএম মেশিন বসানোর চেষ্টা হচ্ছিল। অভিযোগের তির অবশ্যই তৃণমূলের দিকে। সেই সময় বিজেপি গিয়ে বাধা দেয়। জানালার বাইরে থেকে ইভিএমের ভিডিও করা হচ্ছিল তৃণমূলের পক্ষ থেকে। এই খবর জানতে পেরে বিজেপি প্রার্থী বিমল দাস সেখানে গিয়ে বাধা দেন। শুরু হয় উভায় পক্ষে বসচা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে মেদিনীপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে বচসা বেঁধে যায় তৃণমূল প্রার্থীর। জানা যাচ্ছে, মেদিনীপুরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথে তৃণমূল প্রার্থীর সুজয় হাজরার পোলিং এজেন্টকে হেনস্থা করা হয়েছে। খবর পেয়েই সেখানে পৌঁছে যান তৃণমূল প্রার্থী। যদিও কেন্দ্রীয় বাহিনী মাইকিং করে ভিড় সরিয়ে দেয়।
নৈহাটিতে ভোট গ্রহণকে কেন্দ্র করে আবার বিতর্কে জড়াল বিখ্যাত বড়মার মন্দির। জানা যাচ্ছে, এদিন উপনির্বাচনে ভোটগ্রহন হবে বলে প্রশাসন বড়মার মন্দির বন্ধ রাখে। কিন্তু এই খবর প্রচার না হওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা নৈহাটি চলে আসেন। কিন্তু মন্দিরে ঢুকতে বাঁধা পান। কিন্তু বুধবার সকালেই ওই মন্দিরে উপস্থিত হন নৈহাটির তৃণমূল প্রার্থী সনৎ দে। তিনি বিনা বাঁধায় মন্দিরে ঢুকে পুজো দেন। যা নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায় নৈহাটির অরবিন্দ রোডে। ভক্তদের অভিযোগ নির্বাচনের কারণে যদি মন্দির বন্ধ রাখা হয় সেখানে কীভাবে তৃণমূল প্রার্থী গিয়ে পুজো দিতে পারলেন? এরপরই মন্দির খোলার দাবিতে তৃণমূল প্রার্থীর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন ভক্তরা। নৈহাটির মালঞ্চ এলাকায় একটি বুথেও উত্তেজনা ছড়িয়েছে। বিজেপি প্রার্থীর এক মহিলা এজেন্টকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে। একই ভাবে দেগঙ্গার ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘোষাল আবাদ এলাকায় ১৪৬ ও ১৪৭ নম্বর বুথে ISF এজেন্টদের ঢুকতেই দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
এতকিছুর পরও বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত রাজ্যের ৬ আসনে ভোট পড়ল প্রায় ৭০ শতাংশ। সিতাইয়ে ভোট পড়েছে ৬৬.৩৫ শতাংশ, মাদারিহাটে ভোট পড়েছে ৬৬.৩৫ শতাংশ, নৈহাটিতে ভোট পড়েছে ৬২.১০ শতাংশ, হাড়োয়ায় ভোট পড়েছে ৭৩.৯৫ শতাংশ, মেদিনীপুরে ভোট পড়েছে ৭১.৮৫ শতাংশ এবং তালড্যাংরায় ভোট পড়েছে ৭৫.২০ শতাংশ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ দাবি করছেন, আর জি কর পরবর্তী সময়ে রাজ্যের এই ৬ আসনের উপনির্বাচনে নিজেদের কর্তৃত্ব বজার রাখতে চায় শাসকদল। তাই সামান্য এই ভোটেও গোলমাল অশান্তি চিত্র দেখা গেল দিনভর। শাসকদলের নেতাকর্মীরা দিনভর দাপিয়ে বেরালেন। বিশেষ করে মাদারিহাট দখলে মরিয়া তাঁরা। বিরোধীদের অভিযোগ, রাজ্য পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল জায়গায় জায়গায় ভোটারদের বাঁধা দিয়েছে। অনেক জায়গায় বুথে এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ জানিয়েও ফল হয়নি। সবমিলিয়ে এই উপনির্বাচনেও প্রমান হল, বাংলা আছে বাংলাতেই। কারণ পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ডে যেখানে সরকার গঠনের ভোট হচ্ছে, সেখানেও গোলমালের খবর নেই। কিন্তু বাংলায় উপনির্বাচনেও গোলমাল হল।
Discussion about this post