আমাদের প্রচলিত একটা ধারণা আছে যে তর্ক করা খারাপ। কিন্তু সব সময় তর্ক করা খারাপ নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তর্ক করা ভালো। গবেষকরা বলছেন, বিশেষ কিছু কিছু ক্ষেত্রে তর্ক আমাদের দাম্পত্য সম্পর্ককে আরও ভালো করে গড়ে তোলে। অনেক সময় কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা চুপ হয়ে যাই। কিন্তু সেই চুপ হয়ে যাওয়া দাম্পত্য জীবনকে নষ্ট করে দিতে পারে। বরং তার থেকে যদি সুস্থ উপায়ে আমরা যুক্তি সংগত কোনো বিতর্ক করে সেটা সমাধান করি, তাহলে অপরদিকের মানুষটাও আমাদের ভুল বোঝেনা, এবং সম্পর্কও সুস্থ থাকে। সভ্য উপায়ে মতপার্থক্যের সমাধান আদতে আমাদের সম্পর্কের জন্য বিশেষ উপযোগী।
মনের ভাব প্রকাশ না করা
অনেক সময় আমরা আমাদের মনের ভাব ঠিক ভাবে প্রকাশ করিনা। প্রায় সময় মনে হয় আমার সঙ্গী আমাকে ঠিকঠাকভাবে সময় দিচ্ছে না। আগের মতো সম্পর্ককে গুরুত্ব দিচ্ছে না। কিংবা সে আগে যতটা খেয়াল রাখতো, ততটাও খেলায় রাখছে না। এখন, এই সমস্ত বিষয় নিয়ে মনের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চয় হয়। কিন্তু আমরা সে সকল কথা সঙ্গীর সাথে না আলোচনা করে, নিজের মধ্যে জমিয়ে রাখি। উৎকণ্ঠার কথা এভাবে চেপে রাখা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ ক্ষতিকর।
সন্দেহ বা হিংসা
হিংসা বা সন্দেহ দাম্পত্য সম্পর্কের সব থেকে বড় সমস্যা। ধরা যাক, স্বামী বা স্ত্রীর পড়াশোনা বা কাজের জায়গায় বিশেষ বন্ধু আছে। কিন্তু তাঁর সাথে একটু বেশিই গভীর সম্পর্ক। সেই বিষয়ে আপনি জানতে পারলেন, এই নিয়ে মনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ দান বাঁধে। সেই বিষয়গুলি নিয়ে খোলামেলা আলাপ করেন না। হয়তো তাদের মধ্যে শুধুই বন্ধুত্বের সম্পর্ক। কিন্তু খোলামেলা আলাপ আলোচনা না করায় আপনার মধ্যে উপস্থিত ভুল ভাবনার সমস্যা সমাধান হয়না। ফলে একটা সুন্দর সম্পর্ক ধীরে ধীরে তলানিতে গিয়ে ঠেকে।
অর্থনৈতিক বিষয়
টাকা পয়সার ব্যাপারে দুজনকে খুব খোলাখুলি ভাবে আলোচনা করতে হবে, তাহলেই যাবতীয় সংশয় দূর হবে। এবং তাতে দুজনেরই ভবিষ্যত ভালো হবে। কারণ দাম্পত্যের ঝগড়া ঝামেলার প্রায় প্রধান বিষয় বস্তু হয়ে যায় টাকা পয়সা। কারণ প্রায়ই টাকা পয়সা নিয়ে দুজনের মধ্যে তর্কবিতর্ক লেগে থাকে। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় দুজনের দৃষ্টিভঙ্গি দুরকমের। তাই এ বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা ও একে অপরের মতকে গুরুত্ব দেওয়া বিশেষ প্রয়োজন।
দ্বন্দ্বের সমাধান
স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া ঝামেলার পর প্রায়শই দুজনের মধ্যে কথা বার্তা বন্ধ হয়ে যায়, এবং একটা অদ্ভুত ইগো কাজ করে দুজনের মধ্যে। দুজনেই ভাবে আগে আমার সঙ্গে কথা বলুক, আগে আমি কেনো আগ বাড়িয়ে কথা বলতে যাবো? এর ফলে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক খারাপের দিকে যায়। ইগো সামলে খোলামেলা আলোচনা করুন। খোলা মেলা আলোচনা সব সময় স্বাস্থ্যকর সম্পর্কের ধারক।
গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া
গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা সব সময় নিজেদের মত ও চিন্তা ভাবনাকে প্রাধান্য দেই। এ ক্ষেত্রে অপরের ভাবনা চিন্তাকে ছোট করে দেখা কিংবা, মাঝে মধ্যে নিজেরা ভালো বুঝি এই চিন্তা, ভাবনা নিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্তকে সঙ্গীর উপর অনেকে চাপিয়ে দেন। ফলে বিপরীতে থাকা ব্যক্তিটি হীনমন্যতায় ভোগে। তাই মুক্ত মনে আলোচনা করার চেষ্টা করুন, যাতে সঙ্গী অসম্মানিত বোধ না করে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে কোনো কারণ ছাড়াই তর্ক – বিতর্ক হয়। নিজেদের জীবনের স্বপ্ন নিয়ে সঙ্গীর সাথে খোলা মেলা আলোচনা করুন। না হলে নিজের স্বপ্নকে মনের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় রাখলে পরবর্তী সময়ে স্বপ্ন না পূরণ হওয়ার জন্য জীবনসঙ্গীকে দায়ী মনে হতে পারে।
Discussion about this post