কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেলসন ম্যান্ডেলা, আইনস্টাইন, আমার জানা মতে তাঁরা সবাই আবেগপ্রবণ ছিলেন। নিজের আবেগ প্রয়োগ করেছেন বিভিন্নভাবে মানুষের ভালোর জন্য। স্বয়ং আইনস্টাইন বলেছেন, বিজ্ঞানে জ্ঞানের চেয়ে কল্পনার ভূমিকা বড়। আবেগ ছাড়া কল্পনা হয় না। তবে অতিরিক্ত আবেগ আবার ব্যক্তিজীবন ও কর্মক্ষেত্রে অনেক সমস্যা নিয়ে আসতে পারে। অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ ব্যক্তিরা মন থেকে ভাবেন বুদ্ধি দিয়ে বেশি ভাবেননা , ফলে সেখানেই ঘটে বিপত্তি।
প্রায় সময় এই আবেগের জন্য আমাদের বড়ো বড়ো সমস্যার মুখেও পড়তে হয় । অতিরিক্ত আবেগ একটু দ্বায়িত্বশীল ভাবে সামলে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে যেমন আপনি আত্মবিশ্বাসী ও আত্মসচেতন হয়ে ওঠেন, তেমনি অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির মুখমুখিও পড়তে হয়না আমাদের।
বেশি আবেপ্রবণ মানুষরা অল্পেতেই রেগে গিয়ে চিৎকার করে দেওয়া, অল্পেতেই কষ্ট পেয়ে কান্নাকাটি করা, কিংবা অতিরিক্ত রেগে গিয়ে জিনিস পত্র ভাঙচুর করা, অল্পেতে সবাইকে বিশ্বাস করে ফেলা, অল্পেতে আঘাত পাওয়া এইসব বিষয় গুলি করে থাকেন । ফলে বাস্তবিক জীবনে তারা কঠোর পরিশ্রমী হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে বেগ পেতে হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই । জীবনে ঘাত- প্রতিঘাত থাকবেই, কিন্তু সেগুলিকে বুদ্ধিমত্তার সাথে কাটাতে পারলেই জীবনের লড়াইটা খুব সহজে জয় করা সম্ভব হয়।পরিস্থিতি যেমনি হোক সামনে দিকে এগিয়ে যেতে হলে অতিরিক্ত আবেগকে নিয়ন্ত্রণে আনতেই হবে। ব্যক্তিজীবন, কর্মক্ষেত্র এবং সামাজিক পরিসরে আত্মশক্তিকে বৃদ্ধি করতে কয়েকটি বিষয়কে মাথায় রেখে চলুন।
নিজের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখুন
আমাদের শরীর সুস্থ থাকলে মন ও ভালো থাকে। শরীর ও মন পরস্পরের সাথে সম্পর্ক যুক্ত। সুস্থ শরীর একটি সুস্থ মনের পরিচায়ক। অন্যদিকে শরীর অসুস্থ থাকলে আমাদের শরীরের ভিতর বিভিন্ন অন্তক্রিয়া সহজ ভাবে সম্পন্ন হয়না, ফলে পেটের অসুখ থেকে শ্বাসের সমস্যার মতন বিভিন্ন সমস্যা হয়। ফলে শরীর ও মন দুই সুস্থ না থাকলে , আমরা ভিতর থেকে স্বস্তি পাইনা, ফলে তখন আত্মবিশ্বাসেরও অভাব জমে। তাই নিজের শরীর ও মনকে আগে সুস্থ রাখুন।
নিজের অনুভূতিকে শনাক্ত করুন
আবেগ নিয়ন্ত্রণের প্রথম ধাপ হলো, নিজের অনুভূতিকে শনাক্ত করা। আগে নিজের অনুভূতিকে ভালোভাবে জানতে হবে, এটা কি আপনার রাগ, না দুঃখ না ক্ষোভ। তবেই সেটাকে আপনি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন, এবং আপনার কনফিডেন্সও বৃদ্ধি পাবে।
নেতিবাচক সব কিছু থেকে এড়িয়ে চলুন
যতটা পারবেন নেতিবাচক সব কিছু থেকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। শরীরে প্রশান্তি এবং ইতিবাচক ভাবনা আনলে আপনার আত্মশক্তি ততবৃদ্ধি পাবে।
ভালো লাগা বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করুন
আপনার ভালো লাগা বিষয় গুলি শনাক্ত করুন, কি কি ভালো লাগছে এবং সেগুলি কি আপনার রোজকার জীবনযাত্রার জন্য উপযোগী? সেগুলি ভালো ভাবে জানুন।যেমন, আপনার যদি ঘুরতে যেতে ভালো লাগে তাহলে সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশে কিছুক্ষণ সময় কাটাতে পারেন, সপ্তায় একদিন ঘুরে আসতে পারেন আপনার প্রিয় স্থান থেকে। বই পড়তে পারেন, দারুন কোনো গান শুনতে পারেন, পছন্দের মোটিভেশন ভিডিও দেখতে পারেন। এর ফলে আপনার নিজের প্রতি মনোযোগীতা বাড়বে, এবং আপনি অনেক বেশি আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারবেন।
নিজের প্রতি মনোযোগী হন
দিন রাত সোশ্যাল মিডিয়াতে ঘুরে বেড়ানোর থেকে, পারলে নিজের দিকে একটু খেয়াল দিন। আপনি প্রতিটা সময় কিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, আপনার আবেগ কতটা কাজ করছে, সেটা আপনার জীবনের জন্য কতটা সুফলদায়ক সব কিছুই খেয়ালে রাখুন।
আবেগ সামলাতে ভিন্ন পথ বাছুন
এক্ষেত্রে বই আপনাকে বিশেষ সাহায্য করতে পারে। দুশ্চিন্তায় থাকলে নিজের পছন্দের কোনো লেখকের বই পরুন, তাতে মন ও ভালো থাকবে, এবং আমাদের মধ্যে যত জ্ঞান সঞ্চার হবে আমরা তত আত্মবিশ্বাসি হয়ে উঠতে পারবো। কোনো ভালো একজন বন্ধুর সাথে কথা বলতে পারেন, যে পজেটিভ এবং আত্মবিশ্বাসী। এছাড়া ঘরের ভিতর খানিকক্ষণ কেঁদে নিতে পারেন তাতে ও আমরা হালকা হই, এবং ঘটমান কষ্টটা অনেকটাই লাঘব হয়।
কতটা পরিস্থিতিকে বদলাতে পারবেন, সেটা ভেবে নিন
পৃথিবীর সব কিছু আমাদের হাতে থাকে না। আমরা অনেক কিছুই চাইনা কিন্তু সেগুলি ঘটে।কেউ যদি আপনার সাথে অসম্মানসূচক আচরন করে , তাহলে আপনি চাইলেও তার থেকে সম্মান আদায় করতে পারবেন না। ফলে তার সাথে ঝামেলা না করে, ঠাণ্ডা মাথায় আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করুন।
একটু ভিন্ন ভাবুন
একটি পরিস্থিতি আপনার জন্য যেমন, অন্য কারুর জন্য তেমন নাও হতে পারে। কোনো পরিস্থিতি আপনার জন্য খারাপ অনুভূতির হলে , সেটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তির অনুভূতিও বুঝতে হবে, তার দিক থেকেও দেখতে হবে। ফলে আপনি আপনার সংকীর্ণ গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন এবং আপনার মানষিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
Discussion about this post