২০২৫ সালের মে মাসের এক রাতে পাকিস্তানের সারগোধা অঞ্চলের মরুভূমির গভীরে কিরানা হিলস এলাকায় অদ্ভুত কিছু ঘটেছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে এক বিস্ফোরণের দৃশ্য! ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের ভয়াবহ শব্দের পর মাশরুম মেঘের বিস্ফোরণের দৃশ্যও দেখা গেছে। এর সংবাদ প্রতিবেদন ছিল না, কোনও আনুষ্ঠানিক নিশ্চিতকরণ ছিল না, কেবল একটি অস্থির নীরবতা বিরাজ করছিল। কারণ, এর পরদিনই পাকিস্তানের ডিজিএমও ফোন করেন ভারতের ডিজিএমও-কে। তিনি সংঘর্ষ বিরতির প্রস্তাব দেন ভারতকে, এবং ভারতও সঙ্গে সঙ্গে তা মেনে নেয়। কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট মহলে কৌশলগত বিশ্লেষক, গোয়েন্দা সংস্থা এবং প্রতিরক্ষা পর্যবেক্ষকদের মধ্যে আলোচনায় কয়েক দশক পরে আবারও একটি নাম উঠে আসে: সেটা হল কিরানা পাহাড়।
পাকিস্তানের বারোটি উল্লেখযোগ্য বিমানঘাঁটি রয়েছে, যেগুলো তিনটি কমান্ডে বিভক্ত, যেমন উত্তর, মধ্য এবং দক্ষিণ। এছাড়াও সহায়তা, রক্ষণাবেক্ষণ, সরবরাহ এবং প্রশাসনের সাথে সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি নন-ফ্লাইং স্টেশন এবং ফরোয়ার্ড অপারেটিং সাইট রয়েছে। অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন ভারত-পাক সংঘর্ষে ভারতের প্রতিরক্ষা ও বিদেশ মন্ত্রকের যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করা হয়, পাকিস্তানের অন্তত ১০ থেকে ১১টি বিমান ও সেনাঘাঁটিতে আক্রমণ করা হয়েছে। বিশেষ করে শোরকোটের রফিকি এয়ারবেস, রাওয়ালপিন্ডির নুর খান এয়ারবেস, চকওয়ালের মুরিদ, রহিমিয়ার খান, সুক্কুর এবং চুনিয়ানের পাশাপাশি পাসরুর এবং শিয়ালকোটে রাডার সাইটগুলিতে আঘাত করেছে বলে দাবি করে ভারত। এছাড়াও, নতুন স্যাটেলাইট চিত্র অনুসারে, করাচিতে অবস্থিত মালির সেনানিবাসেও আঘাত হেনেছে ভারতীয় বিমানবাহিনী। এর অর্থ হল ভারতীয় বিমান বাহিনী ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিন্ডি, লাহোর, শিয়ালকোট, সারগোধা এবং করাচি সহ প্রতিটি প্রধান পাকিস্তানি শহরের সেনাঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালিয়েছে। কিন্তু সংঘর্ষ বিরতির পরও যে জায়গা নিয়ে আলোচনা অব্যাহত সেটা হল পাকিস্তানের কিরানা পাহাড়ের গুপ্ত পারমানবিক অস্ত্র ভাণ্ডার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিও এবং চিত্র শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, এই পারমানবিক অস্ত্র ভাণ্ডারের আশেপাশেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। যদিও ভারতের এয়ার মার্শাল এ কে ভারতী সাংবাদিক সম্মেলনে পরিস্কার অস্বীকার করেছেন, যে এমন কোনও জায়গায় ভারত আঘাত করেছে।
কিন্তু একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিও ও উপগ্রহ চিত্র শেয়ার করে দাবি করছে, এই কিরানা পাহাড়ে এক ভয়াবহ হামলা হয়েছে। কিরানা পাহাড়ে পাকিস্তানের গোপন পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার ভূত আবারও আলোড়িত হয়েছে। যদি এই গুজব সত্যি হয়, তাহলে ভারত সম্ভবত নীরবে, কিন্তু চূড়ান্তভাবে একটি নির্ভুল ব্রহ্মোস স্ট্রাইক ব্যবহার করে কেবলমাত্র কিরানা পাহাড়ে অবস্থিত পাকিস্তানের পারমানবিক অস্ত্রভাণ্ডারের ভূগর্ভস্থ সুরঙ্গের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তানি সেনাকর্তাদের মুখও।
কিরানা পাহাড়। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের একটি জনশূন্য, পাথুরে পাহাড়। অশিক্ষিত মানুষদের চোখে, এটি কেবল এক বিস্তৃত অনুর্বর ভূমি। কিন্তু ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে, এটি পাকিস্তানের পারমাণবিক স্বপ্নের গোপন আস্তানায় পরিণত হয়। ১৯৭৪ সালের পোখরান-১ পরীক্ষার পর ভারত যখন সফলতার আনন্দে ভাসছিল তখন পাকিস্তান এক পারমানবিক কর্মসূচির মাধ্যমে ভারতকে টেক্কা দিতে চেয়েছিল। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে, এই কিরানা পাহাড়ের জনমানবশূন্য এলাকায় কঠোর গোপনীয়তার অধীনে পারমানবিক বোমার কয়েক ডজন কোল্ড টেস্ট পরিচালিত হয়েছিল বলে জানা যায়। তবে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থা, ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা এবং রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ তা অনুমান করলেও সঠিক তথ্য পায়নি। এরপর সেই কিরানা পাহাড় নিয়ে আলোচনা থেমে যায় কালের নিয়মে। কিন্তু ২০২৫ সালের মে মাসে ফের সেই জায়গা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। জানা যাচ্ছে, আশেপাশের বহু গ্রাম খালি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই পাকিস্তানে চলে এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি-নিউক্লিয়ার জরুরি সহায়তা বিমান। যার মূল কাজ হল কোনও নিউক্লিয়ার রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয় বিকিরণ খুঁজে দেখা। পাশাপাশি ইজিপ্সিয়ান এয়ারফোর্সের এক বিশেষ মালবাহী বিমান বারবার চিন থেকে পাকিস্তানে যাতায়াত এবং পাকিস্তানের ওই অঞ্চলে ঘনঘন ভূমিকম্প হওয়া। সবগুলোই কিন্তু অন্যমাত্রা দিয়েছে। ফলে বহু বিশ্লেষক সোশ্যাল মিডিয়ার ওপেন সোর্স থেকে নানা চিত্র ও ভিডিও জোগার করে বলতে শুরু করেছেন, কিরানা পাহাড়ে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ শুরু হয়েছে। কেউ কেউ দাবি করছেন, ভারতের ব্রহ্মোস মিসাইলের নির্ভূল নিশানায় ব্যপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে পাকিস্তানের পারমানবিক অস্ত্রের মজুতগৃহ। উল্লেথ্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও আচমকা দাবি করেছেন, ভারত আর পাকিস্তানের নিউক্লিয়ার ব্যাকমেইলের কাছে মাথা নত করবে না।
বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের দাবি, পাকিস্তানের কাছে নিউক্লিয়ার মিসাইল ছাড়াও ডার্টি বম্ব নামে এক ভয়ানক অস্ত্র আছে। যা একপ্রকার নিউক্লিয়ার অস্ত্র। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ডার্টি বম্ব এমন এক প্রযুক্তিতে তৈরি যা বিস্ফোরণ ঘটে না। কিন্তু এটা কোথাও গিয়ে পড়লে বা উন্মুক্ত হয়ে গেলে এর ভিতরে থাকা তেজস্ক্রিয় বস্তু ধীরে ধীরে নির্গত হতে শুরু করে। ফলে কিছুটা সময়ের পর থেকেই ডার্টি বম্ব ওই এলাকায় দ্রুততার সঙ্গে তেজস্ক্রিয়তা বিকিরণ করতে শুরু করে এবং এক ভয়ানক মৃত্যু নিয়ে আসে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ এবং পশুপাখির জন্য। জানা যায়, এই ডার্টি বম্বের জনক হলেন, পাক সেনার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরীর বাবা সুলতান বশিরউদ্দিন মাহমুদ। যিনি নিজে একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিলেন এবং আল কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের অন্যতম সহযোগী ছিলেন। অনেকেই মনে করছেন, পাকিস্তানের কিরানা পাহাড়ে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা মাটির নিচেই এমনই এক ডার্টি বম্ব বিকিরণ শুরু করেছে। যার জন্য তড়িঘড়ি ওই এলাকা খালি করছে পাকিস্তানি প্রশাসন।
Discussion about this post