দেশজুড়ে চলছে লোকসভা নির্বাচন। লোকসভায় আমরা বহু ক্ষেত্রে দেখেছি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি দুটি লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু কখনও শুনেছেন কি কেউ একই সঙ্গে তিনটি লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন। ভারতের ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৩৩ নম্বর ধারায় বলা আছে একজন ব্যক্তি একাধিক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পারবেন, তবে নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা নেই। আবার ওই আইনের ৭০ নম্বর ধারায় বলা আছে একজন ব্যক্তি একাধিক আসনে লড়ে জেতার পর একটি আসন থেকেই লোকসভার সাংসদ হিসেবে গণ্য হবেন। অর্থাৎ কেউ যদি দুটি বা তিনটি আসনেই জিতে যান, তবে তাঁদে একটি আসন রেখে বাকি কেন্দ্রগুলি ছেড়ে দিতে হবে। তবে ১৯৯৬ সালে ওই আইনে সংশোধন করে বলা হয় একজন শুধুমাত্র দুটি আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পারবেন।
বর্তমানে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি দুটি লোকসভা কেন্দ্র থেকে ভোটে লড়েন। তিনি কেরলের ওয়ানাড এবং উত্তরপ্রদেশের রায়বেরেলী থেকে মনোনয়ন জমা করেছেন। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে বর্তমান প্রধআনমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুটি লোকসভা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলেন। তিনি সেবার গুজরাটের ভদোদরা এবং উত্তরপ্রদেশের বারানসী থেকে ভোটে লড়েছিলেন। সেবার তিনি দুটি আসনেই জিতে পরে বারানসীর সাংসদ থেকে যান। কিন্তু ভারতের এক জনপ্রিয় রাজনৈতিক একই সঙ্গে তিন আসনে লড়ে ইতিহাস গড়েছেন।
ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা প্রখ্যাত বিজেপি নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ী একবার একই সঙ্গে তিনটি লোকসভা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলেন। আজ থেকে ৬৭ বছর আগে ১৯৫৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে অটল বিহারী বাজপেয়ী লখনউ, মথুরা এবং বলরামপুর কেন্দ্র থেকে ভোটে লড়েছিলেন। তবে তখন বিজেপি ছিল না, অটল বিহারী বাজপেয়ী সেবার ভোটে লড়েছিলেন ভারতীয় জনসংঘের টিকিটে। সেবার তিনি লখনউ এবং মথুরা থেকে পরাজিত হলেও জিতেছিলেন বলরামপুর আসন থেকে। ১৯৫২ সালে লখনউ কেন্দ্রে উপনির্বাচনে ভারতীয় জনসংঘের টিকিটে প্রথমবার প্রার্থী হয়েছিলেন অটলবাহারী বাজপেয়ী। কিন্তু সেবার হেরে গিয়েছিলেন তিনি। ফলে সেই সময় জনসংঘ নেতৃত্বের লক্ষ্য ছিল যে কোনও মূল্যে অটল বিহারী বাজপেয়ীকে সাংসদে পাঠানো। তাই ১৯৫৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে একই সঙ্গে তিনটি আসনে টিকিট দেওয়া হয় তাঁকে।
অটল বিহারী বাজপেয়ী তখন তরুণ নেতা। তাঁর জনপ্রিয়তা উল্কার গতিতে বাড়ছে। সুবক্তা অটল বিহারীর ভাষণ শুনতে দূর দূর থেকেও লোক আসতেন। ভারতীয় জনসংঘ তাই চেয়েছিল, তিনটি আসনে প্রার্থী করে ভোট প্রচারে ফায়দা লুঠতে। যাতে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ তাঁর বক্তৃতা শুনতে আসতে পারেন। অটল বিহারী বাজপেয়ীর ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে জনসংঘ তাঁদের সংগঠন মজবুত করেছিল। যা পরবর্তীকালে বিজেপির সুবিধা হয়েছে।
Discussion about this post