পুরীর রথযাত্রার প্রস্তুতি হিসেবে কাঠ সংগ্রহের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। আগামীকাল অর্থাৎ ১০ মে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন থেকে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার নতুন রথ তৈরির কাজও শুরু হয়ে যাবে জোরকদমে। ফলে বলাই যায় বিশ্ববিখ্যাত জগন্নাথধামের রথযাত্রা উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে। কিন্তু এ বছর একটা ব্যাতিক্রমী ঘটনা ঘটতে চলেছে পুরীর রথযাত্রায়। সেটা হল এবার কম কাঠ দিয়েই তৈরি হবে জগন্নাথের রথ।
অক্ষয় তৃতীয়ার অনেক থেকেই শুরু হয়ে যায় কাঠ সংগ্রহের কাজ। প্রতি বছরই পৌষ মাসের ষষ্ঠী তিথিতে জগন্নাথ মন্দিরে পুজো দিয়ে, তাঁর অনুমতি নিয়ে বন থেকে কাঠ সংগ্রহ করা হয়। জানা যায়, পুরীর রথ তৈরির জন্য কাঠ আনা হয় নয়া গড় জেলার দাসপাল্লা ও মহিপুরের জঙ্গল থেকে। এই দুটি জঙ্গল খুবই প্রাচীন। সবাই এই জঙ্গলে কাঠ কাটতে পারেন না, শুধু পুরীর রথ তৈরির জন্যই এই জঙ্গলের কয়েকটি গাছ কাটা হয়ে আসছে বহু যুগ ধরে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, বনদেবী এই জঙ্গল পাহাড়া দেন। তাঁর অনুমতি না নিয়ে কাঠ কাটলেই সর্বনাশ। এখানে তাঁর মন্দিরও রয়েছে। বনদেবীর কাছেও পুজো দিয়ে গাছ কাটার অনুমতি নিতে হয়। সেই সঙ্গে তিন ঘণ্টা ধরে চলে ভজন-কীর্তণ। এই পুরো পর্যায়ে যদি কোনও অঘটন না ঘটে তবে ধরে নেওয়া হয় দেবী অনুমতি দিয়েছেন। মালি বর্ণের মানুষজন প্রায় ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই জঙ্গল পাহারা দিচ্ছেন, তাঁরাই নিয়ম মেনে গাঠ কাটেন জগন্নাথের রথের জন্য। প্রতি বছর সঠিক গাছ বাছাই করে সেগুলির সামনে মাথা নত করে প্রার্থনা করেই গাছ কাটা শুরু হয়। এরপর কাঠগুলি পাঁচফুট লম্বা টুকরো করে কেটে নিয়ে পাঠানো হয় পুরীতে।
এ বছর একটা ব্যাতিক্রমী ঘটনার সাক্ষী থাকবেন ভক্তরা। কারণ এবার বাড়তি কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে না। তুলনামূলক কম কাঠ সংগ্রহ করা হচ্ছে জগন্নাথের রথের জন্য। আসলে প্রতি বছর জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার তিনটি আলাদা রথ তৈরি করা হয়। রথযাত্রার শেষে সেই রথগুলি কেটে জগন্নাথের মহাপ্রসাদ রান্না করার কাজে ব্যবহার করা হয় সারা বছর ধরে। কিন্তু এবার কিছু কাঠ সংরক্ষন করা হয়েছে। জানা যাচ্ছে, রথগুলি তৈরি করতে মোট ৮৬৫টি কাঠের টুকরো ব্যবহার করা হয়। এবার ব্যবহার করা হবে ৮১২টি টুকরো। কারণ গত বছরের ৫৩টি টুকরো বেঁচে গিয়েছে। তাই আলাদা করে আর গাছ কাটা হবে না বলেই স্থির হয়েছে। অক্ষয় তৃতীয়ায় বিশেষ পুজোর পর শুরু হয়ে যাবে পুরীর তিনটি তৈরির কাজ।
Discussion about this post