একাদশী, ছেলেবেলা থেকে এই নামটার সঙ্গে আমরা অতপ্রোতভাবে জড়িত। হিন্দু ধর্মে এই তিথির বিশেষ মাহাত্ম্য থাকায়, হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা অনেকেই খুব নিষ্ঠার সঙ্গে মেনে থাকেন। কিন্তু আমরা অনেকেই হয়তো জানি না, কি এই একাদশী? এই তিথি পালন করলে কি হয়? এই প্রতিবেদনে জানাবো সেই তথ্যই….
পঞ্জিকা মতে, মাসের দুই পক্ষের একাদশতম দিনকেই এই একাদশী বলা হয়। প্রতিটি একাদশী চাঁদের অবস্থান অনুসারে নির্ণয় করা হয়। বছরে সাধারণত ২৪ টি একাদশী থাকে। যা কখনও কখনও অধিবর্ষে দুটি একাদশীও পড়ে যায়।
কথিত আছে, বিষ্ণু যখন ধ্যানরত অবস্থায় ছিল. তখন মুর্দানব রাক্ষস তাঁর উপর আক্রমণ করার চেষ্টা করে। সেই সময় ভগবান বিষ্ণু তাঁর ১১ তম ইন্দ্রিয় অর্থাৎ মন থেকে এক সুন্দরা নারীকে সৃষ্টি করেন। সেই স্থানে ওই সুন্দরী নারীকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যায় রাক্ষস। এমনই ওই রমনীকে বিয়ে করারও সিদ্ধান্ত নেয় মুর্দানব। রাক্ষসের উত্তরে ওই রমনী বলেন, যদি তাঁকে যুদ্ধে মুর্দানব পরাজিত করতে পারে, তাহলেই তাকে বিয়ে করবে সে। কথা মত যুদ্ধ শুরু হয় তাদের মধ্যে। যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হন মুর্দানব। যুদ্ধ সমাপ্ত হতেই ধ্যানভঙ্গ হয় বিষ্ণুর। চোখ খুলতেই সুন্দরী রমনীকে আর্শীবাদ দেন ও নাম রাখেন একাদশী। মনে করা হয়, এই একাদশী তিথি পালন করলে নাকি মোক্ষ লাভ হয়। তবে জানেন কি? এই তিথি পালনে রয়েছে বেশ কিছু নিয়ম। নিয়মে ব্যাঘাত ঘটলে নাকি রুষ্ঠ হন ভগবান বিষ্ণু। তাই খুব নিষ্ঠাভাবে এই তিথি পালন করে থাকেন হিন্দুরা।
এই তিথি পালনের দিন নিরামিশ আহার করা প্রয়োজন। বিভিন্ন প্রকার তেল এমনকি ধান জাতীয় খাবার যেন ভাত, মুড়ি, চিঁড়ে, খই, সুজি, পায়েস, খিঁচুরি, চালের তৈরি পিঠে প্রভৃতি খাওয়া যাবে না।
গম জাতীয় খাবার ,যেমন আটা, ময়দা, বেকারিতে বানানো কোনও প্রকার খাবার ইত্যাদি খাওয়া যাবে না।
যব বা ভুট্টা জাতীয় খাবারের মধ্যে ছাতু, রুটি প্রভৃতি খাওয়া নিষিদ্ধ। এছাড়াও সকল প্রকার ডাল, মটরশুঁটি, বরবটি এবং সিম খাওয়া যাবে না উপোসীদের। খাবারের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ফল, দুধ ও মিষ্টি খাওয়া যেতে পারে।
এই তিথিতে নিয়ম মেনে ভগবান বিষ্ণুর পুজো করলে শুক্ষ ফল লাভ করা যায়। শুধু বিষ্ণুই নয়, পাশাপাশি শ্রীলক্ষ্মী ও সূর্যের পুজো করাও অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। নিষ্ঠা মেনে একাদশী তিথি পালন করলে সংসারে দুঃখ-কষ্ট দূর করার পাশাপাশি ধনপ্রাপ্তিও হয়।
Discussion about this post