বিশাল দেশ ভারতবর্ষ। সাড়া দেশেই মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে আছে রেল নেটওয়ার্ক। আমরা কাছে-দূরে কোথাও যাওয়ার জন্য ট্রেনেকেই প্রথম পছন্দ হিসেবে বেছে নি। কারণ সস্তা, নিরাপদ ও দ্রুততার জন্য ট্রেন হল সেরা মাধ্যম। ফলে আমাদের সকলেরই কমবেশি ট্রেন ধরতে হয় দৈনন্দিন জীবনে। কিন্তু স্টেশনে দাঁড়িয়ে যখন ঘোষণা শোনেন অমুক প্ল্যাটফর্মে আপ ট্রেন আসছে, অমুক প্ল্যাটফর্মে ডাউন ট্রেন আসছে, তখন মনে কী প্রশ্ন জাগে না এটা ঠিক হয় কি করে। অর্থাৎ কোনটা আপ ট্রেন হবে বা কোনটা ডাউন সেটা কীভাবে ঠিক হয়? আসুন এই প্রতিবেদনে আমরা জেনে নি এই বিষয়টি সম্পর্কে।
ভারতে রেললাইনের বিস্তার শুরু হয়েছিল সেই স্বাধীনতার আগে। অর্থাৎ ব্রিটিশদের হাত ধরেই পরাধীন ভারতে রেললাইন পাতা শুরু হয়। এবার আসি কাজের কথায়। আপ অর্থাৎ উপরে এবং ডাউন অর্থাৎ নিচে। বিশ্বব্যাপী ভূমির উচ্চতা মাপার পরিমাপ হয় সমুদ্রতলের ওপর ভিত্তি করে। তাই সেই সময় আপ ও ডাউন ট্রেন স্থির হত সমুদ্রপৃষ্ঠকে মাথায় রেখে। সমুদ্রের দিক থেকে যে ট্রেন অন্যদিকে যাবে সেটা আপ ট্রেন এবং যে ট্রেন সমুদ্রের দিকে যাবে সেটা ডাউন ট্রেন। কারণ সমুদ্রপৃষ্ঠ সমতলের সবচেয়ে নিচু এলাকা তাই ট্রেন নিচের দিকে যাচ্ছে। এই যুক্তিতে সেটা ডাউন ট্রেন।
শিয়ালদা শাখার ট্রেনে যারা যাতায়াত করেন তাঁরা একটি বিষয় নিশ্চই লক্ষ্য করেছেন। শিয়ালদা উত্তর ও মেন শাখায় শিয়ালদাগামী ট্রেনগুলি ডাউন ট্রেন হয় এবং শিয়ালদা থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেন আপ হয়। আবার শিয়ালদা দক্ষিণ শাখায় এই নিয়ম ঠিক উল্টো। কারণ শিয়ালদা দক্ষিণে সব ট্রেন সমুদ্রের দিকে যায়, তাই শিয়ালদা থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলি ডাউন এবং শিয়ালদা অভিমুখী ট্রেন আপ।
আরও একটি যুক্তি আছে কোনটি আপ বা কোনটি ডাউন ট্রেন হবে তা নিয়ে। সেটি হল, রেলের কোনও জোনাল বা ডিভিশনাল হেডকোয়ার্টার থেকে ছাড়ছে তার ওপর ভিত্তি করে। একটি ট্রেন যখন তার হোম স্টেশন থেকে ছেড়ে গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে তখন তা ডাউন। বিপরীত অভিমুখে আসা ট্রেনকে নিহ্নিত করা হবে আপ ট্রেন বলে। কোনও ট্রেন যখন তার হোম স্টেশনের দিকে আসছে তখন তা আপ হিসাবে চিহ্নিত হবে। তবে সবক্ষেত্রে এ যুক্তি খাটে না। আবার লোকাল ট্রেনের ক্ষেত্রে আপ ও ডাউন ট্রেন বোঝার আরেকটি উপায় হল ট্রেনের নম্বর। আপ ট্রেনের নম্বরে শেষ সংখ্যা বিজোড় এবং ডাউন ট্রেনের ক্ষেত্রে শেষ সংখ্যা জোড় হয়।
Discussion about this post