১২৬৮ সালের ২৫ শে বৈশাখ। কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মাতা সারদাদেবীর কোল আলো করে যে জন্ম নিয়েছিলেন, তিনি আমাদের সকলের আদরের রবি ঠাকুর। আজ সেই বিশেষ দিন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪ তম জন্মজয়ন্তী। ছেলেবেলা থেকে পড়াশোনার প্রতি বিশেষ কোনও মনোযোগ ছিল না তাঁর। বড় হয়ে বিশ্বকবির শিরোপা পেলেও, ছেলেবেলা থেকে একেবারেই চার দেওয়ালের বদ্ধ্ব ঘরে মন টেকেনি রবীন্দ্রনাথের। তাই শৈশবে তাঁর পিতামাতা রবি ঠাকুরকে বিদ্যার্জনের জন্য বিদ্যালয় ভর্তি করে দিলেও খুব বেশিদিন সেইখানে ছিলেন না তিনি। তাই বিদ্যালয় থেকে অর্জিত শিক্ষা হোক বা প্রথাগত শিক্ষা কোনটাই গ্রহণযোগ্য হয়নি তাঁর।
তবে বাড়ির অনুকূল পরিবেশে ও পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সান্নিধ্যেই শিক্ষা লাভ করেছিলেন তিনি। পরিণত বয়সে রবি ঠাকুর বড় হয়ে চলে আসেন শান্তিনিকেতনে। সেখানেই প্রকৃতির মুক্ত পরিবেশের মধ্যে নিজেকে মেলে ধরে নিজ শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি এক আশ্রমিক বিদ্যালয়ও গড়ে তোলেন তিনি। সেই মুক্ত পরিবেশের মধ্যে বসেই শান্তিনিকেতনের সকল ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদান করতেন রবি। এরপর থেকে ধীরে ধীরে আদরের রবি একদিন হয়ে ওঠলেন সকলের গুরুদেব।
এক দুটি নয়, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি তিনি ছবি আঁকা, গানেও রয়েছে তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি । সোনারতরী, ক্ষণিকা, মানসী, পূরবী, চিত্রা, গীতালী, গীতাঞ্জলির মতো অজস্র কাব্য-কবিতা, ডাকঘর, রাজা, রক্তকরবী, বিসর্জন, মুক্তধারা প্রভৃতি অসামান্য নাট্যসম্ভার, বৌ-ঠাকুরানীর হাট, গোরা, চতুরঙ্গ, ঘরে বাইরে প্রভৃতির মত উপন্যাস, ছুটি, সুভা, দানপ্রতিদান, পোস্টমাস্টার, দেনাপাওনা অতিথির মতো অসংখ্য ছোট গল্প যা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে ।
তবে এখানেই শেষ নয়, শিক্ষা, দর্শন, রাজনীতি, সমাজনীতি, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয় নিয়ে লিখেছেন একাধিক প্রবন্ধও। সেই সঙ্গে লিখেছেন বহু গান এবং নাট্যকাব্যও। তাঁর প্রতিভা শুধু এরাজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, তাঁর প্রতিভা ছড়িয়ে রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। হাসি হোক বা কান্না, রাগ কিংবা দুঃখ, বলতে গেলে প্রতিনিয়ত আমাদের সফর সঙ্গী হিসাবে রয়েছেন বিশ্বকবি। একশতক পেড়িয়ে গেলেও তাঁর অমর সৃষ্টি আজও প্রত্যেক মুহুর্তে বাঙালির কাছে সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। বিশ্বকবি সম্পর্কে কমবেশি অনেকের জানা। কিন্তু তা সত্বেও অনেকেই হয়তো জানেন না, বিশ্বকবির পদবী আসলে ‘ঠাকুর’ ছিল না। ভাবছেন তো, তাহলে কবির আসল পদবী কি ছিল। আর কেনওই বা পরিবর্তন করতে হয়েছিল ঠাকুর পদবী। রবীন্দ্র জয়ন্তীর দিনেই সেই তথ্যই জানাবো আপনাদের।
প্রথমে ঠাকুর বংশের আসল পদবী ছিল ‘কুশারী’। জানেন, এই কুশারী পদবী কীভাবে পরিবর্তন হয়েছিল তাঁদের।
আজ থেকে বহু বছর আগের কথা, ধর্মীয় গঞ্জনা , অপমান সহ্য করেও বছরের পর বছর একইভাবে দান ধ্যান করে দরিদ্রদের সেবায় নিজেদের নিয়জিত রাখতেন কুশারীরা। তারপর থেকেই এই কুশারী বংশধরেরা একদিন হয়ে উঠে ছিলেন ‘ঠাকুর’। এইভাবেই মানুষের ভালোবাসায়, পাওয়া ঠাকুর পদবী ব্যবহার করতে থাকেন রবীন্দ্রনাথের পরিবারের সদস্যরা। তবে এখানেই শেষ নয়, রবি ঠাকুরের আরও এক বংশধর ছিলেন নীলমণি। সেই সময় তিনি জোড়াবাগান অঞ্চলের ধনী ব্যবসায়ী বৈষ্ণবচরণ শেঠের ঘণীষ্ট বন্ধু ছিলেন। বৈষ্ণবচরণ সেই সময়ের যথেষ্টই ধনী ব্যক্তি ছিলেন। সই সময়ের তাঁর বন্ধু নীলমণিকে জোড়াসাঁকোতে দেড় বিঘা জমি উপহার হিসাবে দিয়েছিলেন ধনী ব্যবসায়ী বৈষ্ণবচরণ শেঠ। বর্তমানে জোড়াসাঁকোর সেই বাড়িই আজ আলোকিত হয়েছে বিশ্বকবি রবিঠাকুরের আলোয়।।
Discussion about this post