ভারতে প্রায় ৬৮ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার জুড়ে রেললাইনের জল বিস্তৃত আছে। গড়ে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার ট্রেন চলাচল করে ভারতে। ৭৩২৫ স্টেশন রয়েছে ভারতীয় রেলের আওতায়। আর প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৮ মিলিয়ন যাত্রী পরিবহন করে ভারতীয় রেল। ফলে বোঝাই যাচ্ছে কতটা বড় ভারতের রেল পরিকাঠামো। এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রেল ব্যবস্থা। ভারতে যাত্রীবাহী ট্রেনে উঠতে গেলে টিকিট কিনতে হয়। আবার মালবাহী ট্রেন বা পার্সেল ভ্যানে কিছু পাঠাতে গেলেও টাকা খরচ করতে হয়। কিন্তু জানেন কি আজও ভারতে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে যেটিতে ভ্রমণ করতে হলে কোনও টাকাপয়সা খরচ করতে হয় না? অর্থ্যাৎ একদম ফ্রি।
আজ আপনাদের এমন একটি ট্রেনের কথা বলবো যাতে চড়তে আপনাদের কোনও টিকিট কাটতে হবে না। যতবার খুশি ওই ট্রেনে আপনি চড়তে পারেন বিনা পয়সায়। পঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশের সীমান্ত বরাবর ১৪ কিলোমিটার রেলপথে চলাচল করে দেশের একমাত্র ফ্রি ট্রেন। যার নাম ভাকরা-নাঙ্গাল ট্রেন। আপনারা নিশ্চই ভাকরা নাঙ্গাল বাঁধের কথা শুনেছেন। এই ট্রেনটিও চলাচল করে এই দুটি নদী বাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে। তবে কেন এই ট্রেনে কোনও ভাড়া লাগে না সে গল্প বেশ চমকপ্রদ।
সেই ১৯৯৪ সালে এই ট্রেনটি প্রথম চালানো হয়েছিল। তখন অবশ্য স্টিম ইঞ্জিনে চলতো ট্রেনটি। এখন ডিজেল চালিত ইঞ্জিনে চালানো হয় মাত্র টিম কামরার ট্রেনটিকে। আগে ১০-১২টি কামরা থাকতো ভাকরা-নাঙ্গাল ট্রেনে। এখন সময়ের সঙ্গে গুরুত্ব কমে কামরার সংখ্যাও কমেছে। তবে প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত এই ট্রেনে কোনও ভাড়া নেওয়া হয় না যাত্রীদের থেকে।
যখন ভাকরা ও নাঙ্গাল বাঁধ নির্মাণ হচ্ছিলো তখন মজদুর ও। মালপত্র পরিবহণের উদ্দেশ্যে এই রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছিল। যাতে আশেপাশের এলাকা থেকে শ্রমিক ও কর্মচারীরা সহজেই যাতায়াত করতে পারেন এবং বাঁধ নির্মাণের ভারী ভারী সামগ্রী নিয়ে আসা যায়। এই রেলপথ নির্মাণ ও পরিচালনা করে ভাকরা বিয়াস ম্যানেজমেন্ট বোর্ড বা বিবিএমবি। এই সংস্থাই এই ট্রেনের কোনও ভাড়া ধার্য করে না। কারণ ট্রেন চালানোর সম্পূর্ণ খরচ এই সংস্থাই বহন করে।
বর্তমানে এই ট্রেনে তিনটি সাধারণ কামরা আছে। এরমধ্যে একটি পর্যটকদের জন্য ও একটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। এই ট্রেনে মূলত স্কুল কলেজের পড়ুয়ারা যাতায়াত করেন। তবে ভাকরা বাঁধের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বহু পর্যটক এই ট্রেনে ভ্রমণ করেন। জানা যায় মিটারগেজ এই ট্রেনটি চালাতে প্রতিদিন ৫০ লিটরের বেশি ডিজেল খরচ হয়।
Discussion about this post