শক্তি সাধনার অন্যতম পীঠস্থান বীরভূমের তারাপীঠে। শুধু তারাপীঠই নয়, অসম রাজ্যের নীলাচল পর্বতের পাদদেশেও রয়েছে তন্ত্র সাদনার আরও এক শক্তিপীঠ। শুধু রাজ্যেই নয়, দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বহু তন্ত্র সাধনার এক একটি ক্ষেত্র। যেখান থেকে দিনের পর দিন, বছরের পর ধরে কঠোর তপস্যা করে তবেই মোক্ষলাভ করতে পারেন সাধুসন্তরা। তবে আজ কোনো শক্তিপীঠ নিয়ে কথা বলবো না। কথা বলবো দশমহাবিদ্যার মধ্যে সবচেয়ে উগ্র রূপ কালীকে নিয়ে। আমরা জানি অনেক জায়গা দেবী কালীকে নিরামিষাশী তো কোথাও আবার আমিষ ভোগ দেওয়া হয়। তবে জানেন কি মা তারার ভোগে কেন দেওয়া হয় শোল মাছ কেনই বা দেওয়া হয় পাঁঠার মাংস। আজ এই প্রতিবেদনে আপনাদের জানাবো শক্তি সাধনার অন্যতম পীঠস্থান তারাপীঠে দেবী তারাকে কিকি ভোগ অর্পণ করা হয়।
প্রথমেই বলি তারাপীঠে মা তারাকে ভোগ অর্পনের সময় প্রতিদিন শোল মাছ ও মাংস দেওয়া হয় ঠিকই, কিন্তু সেগুলি সবই রান্না হয় নিরামিষ পদ্ধতিতে। কিন্তু কেন ? সেবাইরা জানিয়েছেন, মা তারার এই পীঠ হচ্ছে সিদ্ধপীঠ ও তন্ত্রপীঠ। দেবীকে এখানে তন্ত্র মতে পুজো করা হয়। যেহেতু তন্ত্র মতে পুজো করা হয়, স্বভাবতই বলি হওয়া মাছ, মাংসের বিভিন্ন পদ রান্না করা হয়। আর যা প্রতিদিন মধ্যাহ্নভোজে দেবী অর্পন করে থাকেন সেবাইতরা। তবে এর সঙ্গে কারণবারি পুজোর অন্যতম উপাচার। এই কারণবারি না থাকলে তারা মায়ের ভোগের ডালি একেবারেই অসম্পূর্ণ।
অন্য মাছ ছেড়ে কেন ভোগে দেবীকে শোল মাছই অর্পন করা হয় তারা মাকে। এ বিষয় মন্দিরের এক সেবাইত জানিয়েছেন, পোড়া শোল মাছ মা তারাকে অর্পন করলে গ্রহ দোষ কেটে যায়। আবার অনেকের মতে, মা তারাকে পোড়া শোল মাছ অর্পণ করলে মনোস্কামনা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে সম্পন্ন হয় জমে থাকা বহু অসম্পূর্ণ কাজের। প্রতিদিন কাকভোরে মায়ের মূল শিলাখণ্ডকে গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করানো হয়। এরপর মাকে স্বর্ণালঙ্কার দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়। তারপর মঙ্গল আরতির পরেই ভক্তদের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় মন্দিরের দরজা। দুপুরে নির্দিষ্ট সময়ের একঘন্টা আগে মায়ের সামনে ভোগ নিবেদন করা হয়। এরপর মঙ্গল আরতির পর মায়ের কাছে প্রতিটি পদের ভোগ নিজ হাতে করে খাইয়ে দেন সেবাইতরা। এরপর পুনরায় ভক্তদের জন্য খুলে দেওয়া হয় মন্দিরের দরজা। বছরের কোনও নির্দিষ্ট দিনে নয়, সারা বছর মা তারার কৃপা পেতে ভিড় জমান ভক্তরা।।
Discussion about this post