জনশ্রুতি নদিয়ার শান্তিপুর থেকেই সূচনা হয়েছিল রাধা কৃষ্ণের ঐতিহাসিক রাস যাত্রা যা আজও বাংলার অন্যতম আকর্ষণ। এও মনে করা হয় শান্তিপুরের বড় গোস্বামী বাড়ি থেকেই রাস উৎসবের সূচনা হয়েছিল। তাও আনুমানিক ৫০০ বছরের বেশি সময় আগে। শাক্ত ও বৈষ্ণব ধর্মের মিলন ক্ষেত্র মানেই নদিয়ার শান্তিপুর ধাম। এই শান্তিপুরে কতই না ইতিহাস লুকিয়ে রয়েছে। শান্তিপুরের বড় গোস্বামী বাড়ির মূল প্রতিষ্ঠাতা মথুরেস গোস্বামী এই রাস উৎসবের সূচনা করেছিলেন বলে জানা যায়। এরপর বড় গোস্বামী বাড়ির একাধিক বংশধররা নিজেদের বাড়িতে রাস উৎসব শুরু করেন। এভাবেই রাস ছড়িয়ে পড়ে শান্তিপুর এবং আশেপাশের অঞ্চলে।
শান্তিপুরে একদিকে যেমন কয়েকটি বাড়িতে রাস ঐতিহ্যের রাস পালিত হয়। তেমনই কালের নিয়মে বারোয়ারী পুজোও শুরু হয়েছিল। এরমধ্যে অন্যতম শান্তিপুরের লিডার্স ক্লাব। যারা এবার সূবর্ণজয়ন্তী বর্ষে পদার্পণ করল। এবারের তাঁদের চিন্তাভাবনা “এবার রাসে শান্তিপুর, আলোক মালায় ভরপুর”। দশ হাজার এলইডি আলো দিয়ে দর্শনার্থীদের জন্য চোখ ধাঁধানো মণ্ডপসজ্জা নিয়ে এবার হাজির হয়েছে শান্তিপুরের লিডার্স ক্লাব। শান্তিপুর তরফদার পাড়ায় এই পুজো মণ্ডপ দেখার জন্য ইতিমধ্যেই হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছে। চোখ ধাঁধানো এই মণ্ডপের রূপদান করেছেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত শিল্পী গৌরাঙ্গ কুইল্যা। গোটা মণ্ডপ জুড়ে যেমন বাহারি আলোর খেলা চলবে, তেমনই লাইভ মিউজিক দর্শকদের নজর কাঁড়ছে। প্রতিমাতেও রয়েছে বিশেষ চমক।
চার দিন আগেই মণ্ডপ দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই হাজার হাজার দর্শনার্থী দেখে ফেলেছেন শান্তিপুর লিডার্স ক্লাবের পুজো। উদ্যোক্তাদের আশা, রাসের দিন লক্ষাধিক দর্শনার্থীর ঢল নামবে। তবে এই ক্লাব শান্তিপুরের বিখ্যাত ভাঙা রাসের শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহণ করে না। শান্তিপুরের বিখ্যাত সব রাস পুজো হল, বিগ্রহ বাড়ি, মধ্যম গোস্বামী বাড়ি, মদনগোপাল বাড়ি, সাহা বাড়ি, পাগলা গোস্বামী বাড়ি ইত্যাদি। সেই সব বিগ্রহকে নিয়ে শুরু হয় শোভাযাত্রা, সঙ্গে থাকেন রাইরাজারা। মূলত, ১২ বছরের নীচে এবং ব্রাহ্মণবাড়ির কন্যাকে বাইরাজা সাজানো হয়। বেনারসি শাড়ি, নানা রকমের গয়না, ফুলের গয়না দিয়ে সাজানো হয় রাইরাজাদের। তাঁদের নিয়েই নগরপরিক্রমা করা হয়। এই ভাবে ঐতিহ্যের সঙ্গে শান্তিপুরে আজও পালিত হয় রাস উৎসব, যার মূল আকর্ষণ রাইরাজারা।
Discussion about this post