এক ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। সিপিআইএমের তৎকালীন রাজ্যসভার সাংসদ তথা ছাত্রনেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে উঠেছিল যৌন হেনস্থার অভিযোগ। সোশ্যাল মিডিয়ায় তোপের মুখে পড়েন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুদেরও৷ফলে তড়িঘড়ি ঋতব্রতকে সাসপেন্ড করেছিল সিপিএম। ২০১৮ সালেও সিপিএমের কলকাতা জেলা কমিটির দুই সদস্যের বিরুদ্ধে একই ধরণের অভিযোগ উঠেছিল। তাঁদেরও তড়িঘড়ি সাসপেন্ড করেছিল সিপিএম। এবার মহিলা সাংবাদিককে হেনস্থার অভিযোগ উঠল সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে। এবারও আগের পথে হেঁটে সিপিএম রাজ্য কমিটি তড়িঘড়ি সাসপেন্ড করল প্রবীন এই নেতাকে। যা নিয়ে প্রকাশ্যেই বিরক্তি প্রকাশ করলেন প্রাক্তন এই বাম বিধায়ক। যদিও সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, দল সবসময়ই এই ধরণের অভিযোগকে গুরুত্ব দেয়। তন্ময় ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে যে ধরণের অভিযোগ উঠছে দল তা সমর্থন করে না। তাই তাঁকে সাসপেন্ড করা হল। এবং দলের আভ্যন্তরীন কমিটি এই বিষয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দেবে।
প্রসঙ্গত, রবিবার দুপুরে এক তরুণী সাংবাদিক ফেসবুক লাইভ করেন। সেখানেই তিনি দাবি করেন, এদিন তাঁর তন্ময় ভট্টাচার্যের সাক্ষাৎকার নেওয়ার কথা ছিল। সেই মতো তিনি সিপিএম নেতার কাছে পৌঁছে যান। তাঁর অভিযোগ, ইন্টারভিউ নেওয়ার আগেই তন্ময়বাবু নাকি তাঁর কোলে বসে পড়েন। যদিও তন্ময় ভট্টাচার্য ওই তরুণীকে চেনেন বলেই জানিয়েছেন। তবে নিগ্রহের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, আমি ওকে চিনি। একাধিকবার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। বরাবরই ঠাট্টা করি। দেখলাম লাইভে এরকম অভিযোগ করছে। তাঁর আরও দাবি, এত মানুষের সঙ্গে মিশি, এতজনের সঙ্গে ইয়ার্কি-ফাজলামি করি। কেউ কোনওদিন কিছু বলেনি। ওই মেয়েটিকে আমি মা বলে ডাকি। এমন কথা হতে পারে ভাবিনি। প্রাক্তন এই বাম বিধায়ক অবশ্য তাঁকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিয়েই প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, শুধুমাত্র অভিযোগ ওঠাতেই যদি দল এভাবে সাসপেন্ড করতে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে এমন পরিকল্পিত চক্রান্ত আরও হবে। তখন পার্টি কি করবে? তন্ময় ভট্টাচার্যের দাবি, ওই মহিলা সাংবাদিক সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ করছেন। তাঁর ইঙ্গিত, কারও চাপে বা প্ররোচনায় এই কাজ করেছেন। এই বিষয়ে তাঁর ব্যাখ্যা, ওই মহিলা সাংবাদিক তাঁর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আরও কিছু কাজ করে। এরপরই ফেসবুক লাইভ করে এই অভিযোগ করেছেন। তন্ময়বাবুর দাবি, যদি আমি সত্যিই আমি শ্লীলতাহানী করে থাকি, তাহলে তাঁর ক্যামেরাম্যান কেন ছবি তুললেন না? কেন তিনি এখান থেকেই বেরিয়ে থানায় গিয়ে অভিযোগ করলেন না?
প্রসঙ্গত, ওই তরুণী ফেসবুক লাইভ করে তন্ময় ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর কিছু সময় পরই তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ ফেসবুকেই তন্ময়ের গ্রেফতারি চেয়ে পোস্ট করেন। আবার সিপিআইএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠার পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে তৃণমূলের আইটি সেলের প্রধান দেবাংশু ভট্টাচার্যও তীব্র আক্রমণ করেন। তিনি লেখেন, ‘সুশান্ত থেকে তন্ময়, সিপিএম মাত্রই পটেটো প্রবলেম’। কুণাল ঘোষ হোক বা দেবাংশু ভট্টাচার্য, প্রত্যেকেই সিপিএমের সদ্য নিলম্বিত নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ভিত্তিতে চিকিৎসক আন্দোলনকে জুড়ে দিয়েছেন। তৃণমূল মুখপাত্রদ্বয়ের বক্তব্য, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার বিচার চেয়ে যারা পথে নেমেছিলেন, তাঁরা এই বিষয়ে পথে নামবেন তো, রাত দখল করবেন তো?
এখানেই উঠছে প্রশ্ন, সিপিএমের নিলম্বিত নেতা যদি সত্যিই এক মহিলা সাংবাদিকের শ্লীলতাহানী বা যৌন হেনস্থা করে থাকেন, তাহলে প্রথমেই তাঁর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা উচিৎ ছিল। কিন্তু তিনি ফেসবুকে অভিযোগ তোলার পর মুহূর্তেই তৃণমূল নেতারা সক্রিয় হয়ে গেলেন। টেনে আনলেন আর জি কর আন্দোলনের প্রসঙ্গ। আসলে সদ্য সাসপেন্ড হওয়া বাম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য আর জি কর আন্দোলনে যথেষ্ট সক্রিয় ছিলেন। এটাই কী তাঁর দোষ? অপরদিকে, সিপিএম পার্টিও অভিযোগের তদন্ত করার আগেই তাঁকে সাসপেন্ড করে দলের কর্মী সমর্থকদের বার্তা দেওয়া চেষ্টা করল। সেটাতেই বা কতটা লাভ হবে দলের? সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে।
Discussion about this post