সম্প্রতি বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। এক ভয়ানক গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিংহাসনচ্যুত হন এবং দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর বাংলাদেশে কয়েকদিনের সেনা শাসনের পর গঠিত হয়েছে এক অন্তর্বর্তীকালীন তদারকি সরকার। যার নেতৃত্বে রয়েছেন আবার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস। ফলে অর্থনীতির খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশ ফের মাথা তুলে দাঁড়াবে এই আশাই করেছিলেন সে দেশের সাধারণ নাগরিক। কিন্তু অহেতুক ভারত বিরোধীতা করতে গিয়ে এখন দেউলিয়া হওয়ার মতো অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছে বাংলাদেশ। যদিও এই ভারত বিরোধীতার পিছনে রয়েছে হাসিনা বিরোধীদের হাত, এমনটাই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।
একদিকে প্রচুর বৈদশিক ঋণ এবং চিনা ঋণের ফাঁদ এবং অন্যদিকে ভারত বিরোধীতা করে একসময় দেউলিয়া হয়েছিল পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা। যদিও শ্রীলঙ্কা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে পরে ভারতের সাহায্য নিয়েই মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান সে পথে হাঁটেনি। ফলে এখনও প্রায় দেউলিয়া অবস্থা শাহবাজ শরীফের দেশের। এবার সেই পথেই হাঁটতে চলেছিল বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার পতনের পর ভারতের সঙ্গে প্রায় সব ধরণের সম্পর্ক বন্ধ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ। বিশেষ করে বাণিজ্য। যদিও এর লাভ অনেকটাই এসেছিল ভারতের। তবুও নয়া দিল্লির একটা শঙ্কা ছিল, বাংলাদেশ না দেউলিয়া হয়ে যায় ঋণের ফাঁদে পড়ে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বৈদশিক ঋণের পরিমান ছাড়িয়েছে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পাশাপাশি বিদেশী মুদ্রার ভাণ্ডারও নেমে এসেছে মাত্র ১৬০০ কোটি মার্কিন ডলারে। বাংলাদেশের রাজকোষ কার্যত শূন্যই বলা চলে। এই পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের নতুন তদারকি সরকারের একের পর এক উপদেষ্টা ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে তোপ দেগেছিলেন। বিশেষ করে উৎসবের মরশুমে ইলিশ রফতানিতে না করে দেওয়া। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টেছে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানেই বাংলাদেশের মৎস এবং প্রাণী সম্পদ উপদেষ্টা ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে ভারতকে ইলিশ পাঠানোয় সবুজ সংকেত দিয়েছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের বিদেশী মুদ্রার প্রয়োজন। ভারতে ইলিশ রফতানি হলে রাজকোষে কিছুটা সুরাহা হবে। কিন্তু ইউনূস সরকারের এই সিদ্ধান্ত মোটেই সহজ ছিল না।
তদারকি সরকারের পিছনে একদিকে যেমন বাংলাদেশের সেনার হাত রয়েছে। অন্যদিকে তেমনই বিএনপি এবং জামাতের মতো আওয়ামী লিগ বিরোধী দলগুলির হাত রয়েছে বলে মনে করেন ওয়াকিবহাল মহল। আর বিএনপি ও জামাত বরাবরই পাকিস্থানপন্থী বলে পরিচিত। ফলে তাঁদের পক্ষে ভারত বিরোধীতা স্বাভাবিক। তাই তদারকি সরকারও ক্ষমতায় এসে ভারত বিরোধীতা করছে। কিন্তু খেলা ঘুরতে শুরু করে ভারতেরই চালে। আমেরিকায় রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভার ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মুহাম্মদ ইউনূসের একটি একান্ত বৈঠকের আহ্বান জানায় ঢাকা। বারবার আবেদনেও সাড়া দেয়নি নয়া দিল্লি। ফলে বাধ্য হয়েই আমেরিকায় বৈঠক করেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয় শঙ্কার এবং তৌহিদ হোসেন।
অন্যদিকে, ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএনপি নেতৃত্ব। যা যথেষ্টই চাঞ্চল্যকর একটা ব্যাপার। কারণ, হাসিনার পলায়নের পর এই প্রথম বিএনপির সঙ্গে কোনও আলোচনায় বসলেন ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় বর্মা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছিলেন এই বৈঠকের নেতৃত্বে। সূত্রের খবর, এই বৈঠকে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো নিয়ে কোনও আলচনা হয়নি। যা যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, হাসিনাকে ফেরত পাঠানো নিয়ে অনেকবারই সরব হয়েছিল বিএনপি নেতারা। গত রবিবার ঢাকার গুলশনে বিএনপির সদর দফতরেই এই বৈঠক হয়েছে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে এই বৈঠক। এরপর এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, “ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক কী ভাবে গভীর করা যায়, দৃঢ় করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সমস্যাগুলো রয়েছে আমরা সেগুলি তুলে ধরেছি। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জল চুক্তি দ্রুত রূপায়নের জন্য বলা হয়েছে। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা প্রয়োজন, সে কথাও বলেছি”।
এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে বিএনপিও এবার কিছুটা হলেও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুণরায় স্থাপন করতে আগ্রহী। ভারতে ইলিশ পাঠানোর সিদ্ধান্তেই এটা পরিস্কার। অপরদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর ঘটে চলা লাগাতার হামলা নিয়ে মতামত তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে আন্তর্জাতিক মহলের একটা চাপ আসছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার। ফলে সবমিলিয়ে পরিস্থিতির চাপে পড়ে বাংলাদেশ ফের ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নতি করতে উঠেপড়ে লেগেছে।
Discussion about this post