ভারতীয় রেল বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্ক। তবে দৈনিক ট্রেন চালানো এবং যাত্রী সংখ্যার নিরীখে ভারতীয় রেল অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে। বিশাল এই ভারতবর্ষের আনাচে, কানাচে যাত্রীবাহী ট্রেনের পরিষেবা দেয় ভারতীয় রেল। ফলে ভারতের ট্রেনগুলির বৈচিত্র কম নয়। এরকমই এক বৈচিত্র নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন।
ভারতীয় রেলে যারা নিয়মিত যাত্রা করেন, অথবা মাঝেমধ্যে যাত্রা করেন, তাঁরা প্রত্যেকেই জানেন যে ট্রেনে খাবার বিক্রি হয়। আবার অনেকেই আছেন, যারা দীর্ঘযাত্রার জন্য বাড়ি থেকেই খাবার বহন করেন। কারণ, ভারতীয় রেল স্বল্প, মাঝারি এবং দূরপাল্লার ট্রেন পরিচালনা করে। ফলে যারা ট্রেনে চেপে দুরপাল্লার বা মাঝারি দূরত্র অতিক্রম করেন তাঁদের সঙ্গে করে খাবার নিয়ে আসতে হয়। না হলে ট্রেনের প্যান্ট্রিকারে তৈরি হওয়া খাবার বা ট্রেন থেকে খাবার কিনে খেতে হয়। এর জন্য টাকাও খরচ করতে হয় অবশ্যই। কিন্তু ভারতীয় রেলের এমন একটি ট্রেন আছে যে সেই ট্রেনে চাপলে আপনাকে খাবার নিয়ে কোনও চিন্তাই করতে হবে না। কারণ, একমাত্র ওই ট্রেনেই আপনি সময় সময় সুস্বাদু খাবার পাবেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। হ্যাঁ ঠিক শুনছেন, সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই এই ট্রেনে চারবেলা খাবার পাবেন। ভাবছেন তো, সেটা কোন ট্রেন, কোথা থেকে কোথায় চলাচল করে?
পঞ্জাবের অমৃতসর থেকে মহারাষ্ট্রের বিখ্যাত শিখ তীর্থস্থান হুজুর নানদেদ সাহিব পর্যন্ত সপ্তাহে একদিন চলাচলকারী সাচখণ্ড এক্সপ্রেসেই পাওয়া যায় এই সুবিধা। ২০৮২ কিলোমিটার এই ট্রেন যাত্রায় ৬টি এমন স্টেশনে ট্রেনটি দাঁড়ায় যেখানে বিনামূল্যে যাত্রীরা লঙ্গরের খাবার পেয়ে থাকেন। অর্থাৎ গোটা ট্রেন যাত্রায় যাত্রীরা এক টাকাও খরচ না করে লঙ্গরের থেকে সুস্বাদু খাবার পেয়ে যাবেন। তাই ট্রেনের যাত্রীরা নিজেদের সঙ্গে খাবার না রেখে বরং থালা-বাসন নিয়ে আসেন। মজার বিষয় হল এই সাচখণ্ড এক্সপ্রেসে একটি প্যান্ট্রি কার থাকলেও যাত্রীদের মনোযোগ থাকে লঙ্গরের খাবারের প্রতিই। আর এই ট্রেনের স্টপেজও এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে যাত্রীরা অনায়াসে ওই ৬টি স্টেশনের লঙ্গর থেকে খাবার সংগ্রহ করতে পারেন।
শিখ ধর্মাবলম্বীদের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থানকে সংযুক্ত করে সচখণ্ড এক্সপ্রেস। মোট ২০৮২ কিলোমিটার যাত্রাপথে এই ট্রেনে জেনারেল কামরা ছাড়াও সাধারণ স্লিপার, এসি থ্রি ইকোমনি, এসি থ্রি টিয়ার, টু টিয়ার এবং এসি প্রথমশ্রেণি কামরা যুক্ত রয়েছে। আর প্রতিটি শ্রেণির যাত্রীরাই নিজেদের সঙ্গে থালা-বাসন নিয়ে আসেন। এবং ওই ৬টি স্টেশনের গুরু কা লঙ্গর থেকে খাবার সংগ্রহ করেন। নিরামিষ খাবারের মধ্যে কোথাও থাকে কড়ি-চাওল, কোথাও আবার ছোলে-চাওল, ডাল, সবজি এবং মিঠাই। ঐতিহ্যবাহী এই ট্রেনটি চালু হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। সেই থেকেই শিখ তীর্থযাত্রীদের কথা মাথায় রেখে লঙ্গরখানা চালু হয়েছিল কয়েকটি স্টেশনে। আজ ২৯ বছর পরও সেই ঐতিহ্য রয়ে গিয়েছে। যেখানে যাত্রীরা চাইলেই চারবেলা লঙ্গরের থাবার খেতে পারেন, তাও আবার বিনামূল্যে।
Discussion about this post