আমরা ছোট থেকেই জেনে আসছি, “নাম দিয়ে যায় চেনা”। অর্থাৎ কোনও ব্যক্তি, জীব বা নির্জীব বস্তু, আমরা তাঁদের নাম দিয়েই চিনি। যেমন ভারতীয় রেলের সমস্ত স্টেশনের গালভরা সব নাম রয়েছে। কোনও কোনও স্টেশনের যেমন নান্দনিক নাম, তেমনই কোনও স্টেশনের নাম উচ্চারণ করতে গেলে দাঁত ভেঙে যাওয়ার জোগাড় হয়। যেমন ভারতের দীর্ঘতম নামের স্টেশনটি, যেটি অবস্থিত তামিলনাড়ুতে। সেই স্টেশনের নাম ভেঙ্কটনারসিমহারজুভারিপেটা (Venkatanarasimharajuvaripeta)। এই স্টেশনের নামের মধ্যে রয়েছে ২৮টি অক্ষর, যা উচ্চারণ করতে আমাদের দাঁত ভাঙতেই পারে। কিন্তু আজ আমরা আলোচনা করছি পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি রেলস্টেশনের নামকরণ নিয়ে। এগুলির পিছনে রয়েছে মজার ইতিহাস।
স্টেশনের নাম নিয়ে নানা মজার মজার গপ্পো আছে। যেমন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখা পাতালঘর উপন্যাসে আছে বর্ধমান কর্ড লাইনের বেলমুড়ি স্টেশনের নাম। জনশ্রুতি, এই স্টেশনের নাম উচ্চারণ করেছেন কি মরেছেন। এমনকি রেলের কোনও টিকিটঘরে গিয়ে বেলমুড়ি স্টেশনের নাম বলে টিকিট চাইলেও টিকিটবাবু ক্ষেপে লাল হয়ে যাবেন। মানুষের বিশ্বাস, এই স্টেশনের নামটি বড়ই অপয়া। তাই কেউ এই স্টেশনের নাম মুখে আনতে চান না। নিজেদের সুবিধার্থে অনেকেই এই বেলমুড়ি স্টেশনের নাম করে নিয়েছেন মাঝের গ্রাম বা মাঝের গাঁ। কেউ কেউ মজা করে একে শ্রীফল চালভাজা স্টেশনও বলে থাকেন। কারণ শ্রীফল হল গিয়ে বেল এবং চালভাজা মানে মুড়ি।
শিয়ালদা স্টেশনের আগের স্টেশন হল বিধাননগর রোড। অনেক আগে এই স্টেশনের নাম ছিল উল্টোডাঙা। কোনও এক কালে এই অঞ্চলের আশেপাশে প্রবল ঝড়ে উল্টে গিয়েছিল সাতটি ডিঙি নৌকা। কালক্রমে এই এলাকার নাম হয়ে যায় উল্টোডাঙা। যদিও বর্তমানে উল্টোডাঙা এবং চক্ররেলের লাইনে উল্টোডাঙা রোড স্টেশন দুটি আর নেই। তেমনই শ্রীরামপুর স্টেশনের নামকরণের গল্পও অনেকে জানেন না। সেই ব্রিটিশ আমলে সাহেবের কাছে গরীব মানুষের কাতর ভিক্ষার আবেদন “Sir I am poor” বদলাতে বদলাতে কবে যে শ্রীরামপুর নাম নিয়ে নিয়েছে তা স্পষ্ট করে বলা যায় না। আবার বর্ধমান-রামপুরহাট-সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনে একটা স্টেশন আছে নোয়াদার ঢাল নামে। এই স্টেশনের নাম নিয়েও একটা মজার গল্প প্রচলিত আছে। নতুন রেললাইন পাতার পর ইংরেজ সাহেব স্টেশনের নামকরণ করছেন আশেপাশের গ্রামগুলির নামের সঙ্গে মিলিয়ে। সেই অনুযায়ী দুটি স্টেশনের নাম হল পিচকুড়ির ঢাল এবং ঝাপটের ঢাল। এরপর তৃতীয় স্টেশনের নামকরণ করার সময় সাহেব বাঙালি কেরাণীবাবুকে বললেন, “Anything but no other dhal”। সেই কেরানীবাবু কি বুঝলেন কে জানে, তিনি সেই স্টেশনের নাম লিখে রাখলেন নোয়াদার ঢাল।
আবার স্থানীয়দের চাপে পড়ে আশেপাশের দুটি বা তিনটি গ্রামের নাম নিয়ে একটি স্টেশনের নামকরণ হয়েছে এমন উদাহরণও রয়েছে এই বঙ্গে। যেমন বনগাঁ শাখায় বিশরপাড়া-কোদালিয়া স্টেশন। আবার হাওড়া-খড়গপুর শাখায় রয়েছে নারায়ণপাকুরিয়ামুরাইল স্টেশন। কারণ সেটি আশেপাশের তিনটি গ্রাম নারায়ণ পাকুরিয়া ও মুরাইলের নাম মিলিয়ে হয়েছে। ফলে এটিই পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় নামের রেলস্টেশনের মর্যাদা পেয়েছে। নারায়ণপাকুরিয়ামুরাইল স্টেশন পাঁশকুড়া জংশন স্টেশনের পরেই অবস্থিত।
Discussion about this post