ভারতীয় রেলের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। সেই পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ শাসকদের সুবিধার্থে রেলপথ বসানো হয়েছিল। প্রথমদিকে মালপত্র বা সামরিক সরঞ্জাম আনাগোনার জন্য, পরবর্তী সময় যাত্রীবাহী কামড়াও জুড়ে দেওয়া হতো। কিন্তু ভারতে প্রথম কোন ট্রেনে বাতানুকূল বা এসি কামরা ব্যবহার হয়, তার জবাব খুঁজলেও মিলবে না। সবজান্তা গুগলকে জিজ্ঞেস করলেও সঠিক উত্তর পাওয়া যাবে না। কিন্তু জানলে অবাক হবেন, সেই ব্রিটিশ আমলেই ভারতীয় রেলে প্রথম শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কামরা যুক্ত হয়েছিল। এর পিছনে রয়েছে এক করুন কাহিনী।
আজকের দিনে ভারতীয় রেল বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্ক। বর্তমানে বহু ট্রেনে সাধারণ কামরার থেকে এসি কামরা বেশি। আবার রাজধানী, শতাব্দী বা দুরন্ত একপ্রসের মতো প্রিমিয়াম ট্রেন তো পুরোটাই শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু ভারতীয় রেলের ইতিহাসে প্রথম শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বা বাতানুকূল কামরা জুড়েছিল অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে। আসুন সেই ইতিহাস জানি এই প্রতিবেদনে।
সময়টা ১৯২৮ সাল। ভারতবর্ষ তখনও পরাধীন। ফলে ইংল্যান্ড থেকে ব্রিটিশ নাগরিক, প্রশাসক, সামরিক কর্মচারী বা ব্যবসায়ীদের ঘনঘন ভারতে আসতে হতো। তাঁরা জাহাজে চেপে সরাসরি নামতেন অধুনা মুম্বইয়ের বোরিবন্দরে। আবার কোনও জাহাজ এসে ভিড়তো কলকাতায়। জাহাজ থেকে তাঁরা ট্রেন ধরে পৌঁছে যেতেন দিল্লি, লাহোর, পেশওয়ার, পাঠানকোট বা অন্য কোথাও। ইংল্যান্ডের ঠান্ডা থেকে ভারতে এসে তাঁরা প্রচন্ড গরমের মুখোমুখি হতেন। সেখান থেকেই দাবি ওঠে ট্রেনের কামরা বাতানুকূল করতে হবে। ১৯৩০ সালে ফ্রন্টিয়ার মেল ট্রেনে এই ধরণের কামরা প্রথম যুক্ত হয়। ট্রেনটি সেই সময় চলাচল করতো বোম্বে থেকে পেশওয়ার পর্যন্ত। ফলে এই ট্রেনে অনেক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী যাতায়াত করতেন।
এই ফ্রন্টিয়ার মেলের একটি কামরা বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিল। তৎকালীন কাঠের কামরার ছাদে বিশেষ চেম্বার তৈরি করে বরফের টুকরো ভরে দেওয়া হতো। আবার কামরার ভিতরেও বিশেষ চেম্বারে বরফের চাঁই ভরে দেওয়া হতো। আর সেই চেম্বারগুলি দিয়ে হাওয়া পাস করানো হতো বিশেষ ছিদ্রের সাহায্যে। ফলে ওই কামরা অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা থাকতো। বোম্বে থেকে পেশোয়ার পর্যন্ত যাওয়ার মধ্যে কিছু দূর দূর ওই কামরায় বরফ ভরা হতো যাতে ওই কামরা ঠান্ডা থাকে। দেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়ার পর ফ্রন্টিয়ার মেল আর পেশোয়ার পর্যন্ত যায় না। বর্তমানে ট্রেনটি মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস থেকে ছেড়ে পঞ্জাবের অমৃতসরের মধ্যে যাতায়াত করে। ফলে এই ট্রেনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে গোল্ডেন টেম্পল মেল।
ব্রিটিশ আমলে ফ্রন্টিয়ার মেলের পরে প্রথম যে ট্রেনটি সম্পূর্ণ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হিসেবে চালানো হয়েছিল সেটি হল বর্তমানের পূর্বা এক্সপ্রেস। যা পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া থেকে দিল্লি পর্যন্ত চলাচল করে। আগে এই ট্রেনটির নাম ছিল ডিলাক্স এসি এক্সপ্রেস। ১৯৫৬ সালে ভারতীয় রেল সম্পূর্ণ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ডিলাক্স এসি এক্সপ্রেসের সূচনা করেছিল। পরবর্তী সময় এর নাম পরিবর্তন করে পূর্বা এক্সপ্রেস রাখা হয়। এরপর হাওড়া থেকে নতুন দিল্লি রাজধানী এক্সরপ্রেস চালু হয়, যেটিও ছিল সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।
Discussion about this post