সেই আদি কালে ডাকাতির সঙ্গে কালীপুজোর একটা সম্পর্ক ছিল। আগেকার দিনে ডাকাতের দল ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে গভীর জঙ্গলে কালীপুজো করতো। রীতিমতো তন্ত্রমতে সেই কালীপুজো হতো। পশুবলি থেকে নরবলির ইতিহাসও রয়েছে সেই সব ডাকাত কালীর পুজোয়। বাংলার বুকে যেমন অসংখ্য ডাকাত কালী মন্দির রয়েছে, তেমনই ডাকাতদের কালীপুজো নিয়ে রয়েছে অসংখ্য জনশ্রুতি এবং রোমহর্ষক গল্পগাথা। বর্তমান সময়ে সেই ভয়ানক ডাকাতের দল আর নেই। তবে অনেক জায়গাতেই ডাকাতদের স্থাপন করা কালী মন্দির রয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে আজও মানুষের মুখে মুখে রয়ে গিয়েছে সেই সময়কার ডাকাতদের গা ছমছমে গল্পগাথা।
কলকাতার আশেপাশের যে কয়েকটা ডাকাত কালীবাড়ি আজও বিদ্যমান তাদের মধ্যে অন্যতম বারাসতের ডাকাত কালীবাড়ি। অন্য কালীবাড়ির মতো এখানে চাকচিক্য নেই, বরং চরম অবহেলায় কোনও রকমে টিকে থাকা একটা জরাজীর্ণ প্রাসাদ বলা চলে। উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদর বারাসত কালীপুজোর জন্যই বিখ্যাত। দুর্গাপুজো নয়, বরং কালীপুজোর সময়ই উৎবসে মাতেন বারাসতবাসী। সেই বারাসতেই রয়েছে এমন এক ডাকাত কালীবাড়ি, যেখানে কোনও দরজা নেই, মা কালীর মূর্তি নেই, নেই কোনও পুরহিতও। কিন্তু অত্যন্ত জাগ্রত এই দেবীর থানে পুজো দিতে আসেন অসংখ্য সাধারণ পূণ্যার্থী। এলাকাবাসীর বিশ্বাস স্বয়ং মা কালী এই কালীবাড়ি রক্ষা করেন।
জরাজীর্ণ এই কালীবাড়ির ইতিহাস ৫০০ বছরেরও পুরোনো। অবিভক্ত বাংলার বুকে যে কয়েকজন ভয়ানক ডাকাত সর্দারের নাম কুখ্যাত, সেরকমই একজন রঘু ডাকাতের নাম জড়িত এই বারাসত ডাকাত কালীবাড়ির সঙ্গে। কালীবাড়ি বলতে সাধারণত যে চিত্র আমাদের চোখের সামনে ফুটে ওঠে, তার সঙ্গে খুব একটা মেলানো যাবে না। জরাজীর্ণ বারাসত ডাকাত কালীবাড়ির চারদিকে বিশাল এক বট-অশ্বত্থের গাছ জড়িয়ে পেঁচিয়ে আছে। সেই গাছকেই পুজো করা হয়। এখানে তাই কোনও প্রতিমা নেই, মন্দিরও নেই। কয়েক শতকের পুরানো ইটের গাঁথনির প্রতিটা কোণেই রয়েছে সুপ্ত ইতিহাস। জনশ্রুতি, একসময় ভয়ানক কুখ্যাত রঘু ডাকাত এই মন্দির থেকেই পুজো করে ডাকাতি করতে যেত। আবার ডাকাতি করে এই মন্দিরেই সদলবলে ফিরত।
বারাসত পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডেক কঠোর রোডে ৫০০ বছরের অধিক পুরোনো এই কালীবাড়িতে কোনও পুরোহিত থাকেন না। তবুও অত্যন্ত জাগ্রত এই দেবীর থানে পুজো দিতে দূর দূরান্ত থেকে মানুষজন আসেন মনোবাসনা পূরণের উদ্দেশ্য নিয়ে। বহু শতাব্দী প্রাচীন সেই বট গাছের ঝুড়িতে সিঁদুর ও চন্দন লাগিয়ে মানত করেন তাঁরা। সেই গাছকেই মা কালী রূপে পুজো করেন সকলে। স্থানীয়দের বক্তব্য, এই মন্দিরের বৈশিষ্ট্যই হল গাছের শিকড় ও ঝুড়ি। যা গোটা কালীবাড়িকে এমনভাবে ঘিরে রেখেছে, যে কোনও ঝড় ঝঞ্ঝা, দুর্যোগ ছুঁতেও পারেনি এই জীর্ণ বাড়িকে। এটাই এখানকার বিশেষত্ব। আরও একটা বিষয়, এখানে কোনও দরজা নেই। বহুবার এখানে দরজা তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। যতবার দরজা বসানো হয়েছে হয় তা ভেঙে পড়ে গিয়েছে না হলে চুরি গিয়েছে।
Discussion about this post