ডুয়ার্স ঘুরতে এলে গরুমারা কিংবা রামসাই জঙ্গল ঘুরেই চলে যাবেন না কিন্তু, কারণ এখানে আছে রহস্যময় এক প্রাচীন কালীতীর্থ। অত্যন্ত জাগ্রত ও অদ্ভুত দর্শন কালীমূর্তি। গায়ে কাঁটা দেওয়া, নির্জন পরিবেশে এই তীর্থ স্থানটি জুড়ে রয়েছে নানা অজানা ইতিহাস। আমরা কথা বলছি জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের অন্তর্গত দোমহনী কাঠালবাড়ি গ্রামের কলাখাওয়া নদীর তীরে পেটকাটি মায়ের মন্দির সম্পর্কে। কেন এই অদ্ভুত নাম? সেই গল্পই শোনাবো আজ। স্থানীয় জনশ্রুতি, কষ্টিপাথরের এই দেবীমূর্তি এককালে গ্রামবাসীরাই মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করেছিলেন। মাটি খোঁড়ার সময় কোদালের ঘা লেগে দেবীর পেট কেটে গিয়েছিল। তখন থেকেই দেবীর নাম হয়েছে ‘পেটকাটি’ মা। কষ্টি পাথরের এই প্রাচীন পেটকাটি মূর্তির ছবি দেখলে শিহরণ জাগে। আর পাঁচটা কালীমূর্তির সঙ্গে এর মিল পাবেন না। কারণ এই কালী দশভূজা, তবে তিনটি হাত ভাঙা।
বাম দিকের পাঁচটি হাতে রয়েছে, চার হাতে হাতি, ঘণ্টা, ছিন্ন নরমুণ্ড, নরমূর্তি। একটি হাত ভাঙা। ডানদিকেও পাঁচটি হাতে রয়েছে। চার হতে হাতির মুখের অংশ, মানুষের কঙ্কাল, বাদ্য ঘণ্টা এবং অপর দুটি হাত ভাঙা। মূর্তিটির উচ্চতা প্রায় সাড়ে চার ফুট, একটি পদ্মের উপর আসীন দেবী। মূর্তির পেট কোদালের ঘায়ে কাটা বা ভাঙা। পেটের কাছে খোদাই করা একটি কাঁকড়া বিছের ছবি। দেবীর গলায় ঝুলছে ৫০টি নরমুণ্ডের মালা স্বরুপ বর্ণমালা। মাথায় সাপের ফনা বিশিষ্ট মুকুট। তাঁর পায়ের নিচে একটি নারীমূর্তি এবং এক দিকে শিয়াল ও অপর দিকে পেঁচা। এই মূর্তি কালী রূপে পুজিতা হলেও অনেকের সংশয় রয়েছে।
কেউ কেউ মনে করেন, এটি আসলে চণ্ডী বা কোনও তান্ত্রিক দেবীর মূর্তি। কারণ, কালীপুজোর দিন পেটকাটি মাকে পুজো করা হয় ধূমাবতী বা ধূমাচণ্ডী রূপে। দেবীর রূপ নিয়ে বহু মতভেদ রয়েছে। কারও মতে ইনি হলেন দেবী চণ্ডী, আবার কেউ বলেন এটি বৌদ্ধ তন্ত্রের দেবী বজ্রযানী। বৌদ্ধ পণ্ডিতদের দাবি, এই মূর্তিটি বজ্রযানী হওয়া অসম্ভব নয়, কারণ একসময়ে এই অঞ্চল ছিল বৌদ্ধ তন্ত্রসাধকদের পীঠস্থান। তবে সে যাই হোক না কেন, জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের অন্তর্গত দোমহনী কাঠালবাড়ি গ্রামের পেটকাটি মা কিন্তু আজও রহস্যের আরেক নাম হিসেবে বিদ্যমান। স্থানীয়দের কাছে পেটকাটি মা খুবই জাগ্রত। তাঁর মহিমা এতটাই বিস্তৃত যে, পশ্চিমবঙ্গের সীমানা ছাড়িয়ে অসম, নেপাল, ভুটান থেকেও বহু ভক্ত ছুটে আসেন পুজো দিতে।
Discussion about this post