“কালিকা বঙ্গ দেশে চ”, অর্থাৎ এই বঙ্গ দেশই হল কালীক্ষেত্র। এই বাংলার আনাচে কানাচে রয়েছে অসংখ্য কালী মন্দির। তাঁদের মধ্যে জগৎবিখ্যাত তিন মন্দিরের কালীপুজো নিয়েই এই বিশেষ প্রতিবেদন। কালীপুজোয় দিন কালীঘাট, দক্ষিনেশ্বর ও তারাপীঠে কি কি ভোগ নিবেদন করা হয় মা কালীকে। মা শশ্মানবাসিনী, তাঁর এক হাতে থাকে খড়্গ, গলায় মুণ্ডমালা। করালবদনী মা কালীর পদতলে থাকেন স্বয়ং মহাকাল বা মহাদেব। তিনিই আদি শক্তি মহামায়ার রুদ্র রূপের প্রতীক দেবী কালিকা। কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে প্রায় সারা রাত ধরেই চলে মায়ের আরাধনা। মা যেহেতু জগৎজননী, সেহেতু মন্দিরে মন্দিরে মায়ের যে ভোগ নিবেদন করা হয়, তাতেও থাকে বিশেষত্ব।
কলকাতা শহরের নামকরণ হয়েছিল কালীঘাটের কালী থেকেই, এমনটাই মনে করেন অধিকাংশ ইতিহাসবিদরা। কিন্তু আপনারা জেনে অবাক হবেন, কালীপুজোর দিন কালীঘাটের মা কালীকে লক্ষী রূপে পুজো করা হয়। অর্থাৎ সারা বছর এই মন্দিরে কালী পুজো হলেও, কালীপুজোর দিন কালীঘাটে মা লক্ষীর আরাধনা হয়। তবে অমাবস্যা তিথি শুরু হওয়ার আগে মা কালীকে একপ্রস্ত ভোগ দেওয়া হয়। তাতে থাকে শুক্তো, পাঁচ রকমের ভাজা ও পোলাও। এছাড়া থাকে রুই, ইলিশ, চিংড়ির তিন রকম মাছের পদ, কচি পাঠার মাংস, চাটনি ও পায়েস। শেষ পাতে মুখসুদ্ধি হিসাবে থাকে পান।
ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের স্মৃতি বিজড়িত দক্ষিণেশ্বর। এখানে মা কালী পূজিতা হন ভবতারিণী রূপে। তাই দেবীর ভোগেও আছে বিশেষত্ব। দক্ষিনেশ্বরে কালীপুজোর দিন অন্নভোগ হিসাবে থাকে ভাত ও ঘি ভাত। এছাড়া থাকে পাঁচ রকমের ভাজা, পাঁচ রকম তরকারি ও পাঁচ রকমের মাছ। সঙ্গে থাকে চাটনি, পায়েস এবং পাঁচ রকমের মিষ্টি। দক্ষিনেশ্বর মন্দিরে বলি প্রথা নেই, তাই এখানে মাকে মাংসের কোনও পদ নিবেদন করা হয় না। ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ যেভাবে পুজো করতেন, আজও সেভাবে পুজো করা হয় মা ভবতারিণীকে।
তারা মায়ের পাগল ছেলে বামাক্ষ্যাপা। তাঁরই পবিত্র সাধন ক্ষেত্র তারাপীঠ। এটি অত্যন্ত জাগ্রত এক তন্ত্র ও শক্তিপীঠ। তাই তারাপীঠে মা তারাকে তন্ত্র মতে পুজো করা হয়। তবে কালীপুজোর দিন মা তারার শিলামূর্তিকে কালী রূপে পুজো করা হয়। এদিন মায়ের ভোগেও থাকে বিশেষত্ব। সকালে নিবেদন করা হয় অন্নভোগ। সেখানে থাকে পোলাও, খিচুড়ি এবং সাদা ভাত। সঙ্গে পাঁচ রকম ভাজা, তিন রকম তরকারি ও চারাপোনা, কাতলা, রুই-সহ বিভিন্ন মাছের পদ। দুপুরে তান্ত্রিক মতে নিবেদিত বলির পাঁঠার মাংস কারণবারি বা মদ সহযোগে নিবেদন করা হয়। সেই সঙ্গে থাকে পায়েস, চাটনি, দই, এবং পাঁচ রকম মিষ্টি। রাতে মাকে নিবেদন করা হয় খিচুড়ি ভোগ। এছাড়াও থাকে পাঁচ রকম ভাজা, তরকারি, শোল মাছ পোড়া, ও বলি-দেওয়া পাঁঠার মাংস। সেই সঙ্গে অবশ্যই কারণবারি। কালীপুজোর দিন রাতে প্রায় দেড় থেকে দুই কুইন্টাল খিচুড়ি রান্না করা হয় তারাপীঠে।
Discussion about this post