দুর্গাপুজো শেষ হলেই লক্ষ্ণীপুজো। এ বছর কোজাগরী লক্ষ্ণীপুজোর তিথি পড়েছে দুদিনে। বুধ এবং বৃহস্পতিবার। সাধারণত কোজাগরী লক্ষ্ণীপুজোয় বাংলার ঘরে ঘরে মা লক্ষ্ণীর আরাধনা করেন সকলে। কিন্তু এই রাজ্যেই এমন একটা গ্রাম আছে, যেখানে শুধু মা লক্ষ্ণী নয়, সঙ্গে পুজো পান মা সরস্বতীও। হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। একই চালায় একই সঙ্গে লক্ষ্মী-সরস্বতীর আরাধনা করা হয়।
ঝাড়গ্রাম জেলার বিনপুর ২ ব্লকের হাড়দা গ্রাম। এখানে ১৬২ বছর ধরে একই সঙ্গে লক্ষ্ণী-সরস্বতীর পুজো হয়ে আসছে। মজার বিষয় হল, প্রাচীন এই পুজোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে জিলিপি। যদিও ঝাড়গ্রাম জেলার হাড়দা গ্রামের এই পুজো কোনও অংশে উৎসবের থেকে কম নয়। কারণ, এখানকার লক্ষ্ণী-সরস্বতীর পুজো ঘিরে পাঁচদিনের মেলা বসে। চলে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বংশপরম্পরায় হাড়দা গ্রামের সাহা এবং মণ্ডল পরিবারের উদ্যোগে এই ধনদেবী এবং বিদ্যার দেবীর যুগ্ম আরাধনা হয়ে আসছে। বুধবার কোজাগরী লক্ষ্ণীপুজোর দিন এই উৎসবের সূচনা করেছেন বেলপাহাড়ির এসডিপিও শ্রেয়া সরকার, বিনপুর দু’নম্বর ব্লকের বিডিও সুমন ঘোষ, বিনপুর থানার আইসি স্বরূপ বসাক- সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
হাড়দা গ্রামের লক্ষ্ণী-সরস্বতী পুজোর মূল বৈশিষ্ট হল এখানকার জিলিপি। পাঁচদিনের মেলায় ২৫০ থেকে ৩০০ কুইন্টালের বেশি জিলিপি বিক্রি হয় এখানে। তবে হাড়দা গ্রামের লক্ষ্ণী-সরস্বতী পুজোর মেলায় একটি মাত্র জিলিপির দোকান পাবেন। এটাই হল মূল আকর্ষণ। এই দোকানের বরাত কে পাবেন তা ঠিক করতে নিলাম হয় প্রতি বছর। তবে এখানে জিলিপির দোকান দেওয়ার একটাই শর্ত চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। তাঁদের পদবী অবশ্যই সাহা বা মণ্ডল হতে হবে। এ বছর ২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা দর দিয়ে মেলার মাঠে জিলিপির দোকানের বরাত পেয়েছেন বীরেশ্বর মন্ডল নামে এক ব্যবসায়ী।
হাড়দা গ্রামের এই জিলিপি অন্য সব দোকানের জিলিপির থেকে একেবারেই আলাদা। বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি এই জিলিপি কিনতে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন এই মেলায়। চালের গুঁড়ো ও অন্যান্য বিশেষ সামগ্রী দিয়ে বানানো হাড়দার জিলিপির স্বাদ একেবারেই আলাদা। আর একমাস পর্যন্ত রেখে দিলেও নষ্ট হয়ে যায় না বলেই দাবি ব্যাবসায়ী বীরেশ্বর মণ্ডলের। গ্রাম বাংলায় অনেক প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পুজো রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হল ঝাড়গ্রামের বিনপুর ২ ব্লকের হাড়দা গ্রামের লক্ষ্ণী ও সরস্বতীর যুগল মূর্তির পুজো। প্রতিমাতেও রয়েছে ভিন্নতা। একচালা প্রতিমায় লক্ষ্ণী ও সরস্বতীর যুগল মূর্তি ছাড়াও নারায়ণের মূর্তি থাকে। উপরের দিকে থাকেন “লুক-লুকানি”।বিষ্ণুপুরাণ মতে নারায়ণের দুই স্ত্রী লক্ষ্মী ও সরস্বতী। সেই ধারণা থেকেই বংশ পরম্পরায় এই পুজো করে আসছেন হাড়দা গ্রামের সাহা এবং মণ্ডল পরিবার
Discussion about this post