যারা মহাকাশ নিয়ে আগ্রহী, তাঁদের জন্য অত্যন্ত সুখবর দিল নাসা। এই গ্রীষ্মেই যে কোনও দিন একটি টেলিস্কোপের সাহায্যেই পৃথিবী থেকে দেখা যাবে এক মহাজাগতিক মহা বিস্ফোরণ। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই ঘটনাকে বলছেন, “সারা জীবনে একবার দেখার মতো অভিজ্ঞতা” হতে চলেছে এটা। নাসার পূর্বাভাস অনুযায়ী, এখন থেকে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে যে কোনও সময় এই বিরল মহাজাগতিক বিস্ফোরণের প্রত্যক্ষদর্শী হতে পারবেন আপনি। শুধু রাতের আকাশে একটি দূরবীন নিয়ে নজর রাথতে হবে।
পৃথিবী থেকে প্রায় ৩,০০০ আলোকবর্ষ দূরে টি করোনা বোরিয়ালিস নামে এক সাদা বামন নক্ষত্র রয়েছে। যাকে ব্লেজ স্টার নামেও ডাকা হয়। এর আকার আমাদের পৃথিবীর সমান প্রায়। নামে বামন হলেও কিন্তু এই নক্ষত্রকে হেলাফেলা করা উচিৎ হবে না, ব্লেজ স্টারের ভর আমাদের সূর্যের প্রায় সমান। আসলে ব্লেজ স্টার একটি মৃত নক্ষত্র। নাসা জানিয়েছে, এই মৃত নক্ষত্র আসলে একটি প্রাচীন লাল দৈত্য ছিল, যার থেকে ক্রমাগত হাইড্রোজেন গ্যাস ছিনিয়ে নিয়েছে তাঁর প্রতিবেশী ক্ষূদার্ত নক্ষত্ররা। এখন ব্লেজ স্টার তাঁর জীবনের অন্তিম সময়ে এসে দাঁড়িয়েছে। আসন্ন মহাজাগতিক বিস্ফোরণের বৈজ্ঞানিক প্রতিশব্দটি হল ‘নোভা’। রাতের আকাশে যখন কোনও সাদা বামন নক্ষত্র আচমকাই আকর্ষণীয়ভাবে আলোকিত হয়ে ওঠে, তাঁকেই ‘নোভা’ বলা হয়।
সাদা বামন নক্ষত্র তখনই হয় যখন সেই নক্ষত্র তাঁর জীবনচক্রের শেষ সময়ে এসে পৌঁছয়। যখন তাঁর মধ্যে থাকা সমস্ত পারমাণবিক জ্বালানী নিঃশেষ হয়ে যায় এবং তাঁর মধ্যে শুধুই মূল কণাটি অবশিষ্ট থাকে। সুপারনোভা হল আরেকটি মহাজাগতিক ঘটনা, যা পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান হয়, যখন একটি নক্ষত্র বিস্ফোরিত হয়। অপরদিকে, নোভা হল একটি সাদা বামন নক্ষত্র থেকে কাছাকাছি থাকা ছোট নক্ষত্রগুলিতে তাঁর জ্বালানীর নাটকীয় নির্গমণ। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত যে কোনও সময়ে আমাদের মিল্কিওয়ের করোনা বোরিয়েলিস বা উত্তর মুকূটে একটি নোভা তৈরি হবে। যেটি এতটাই শক্তিশালী বিস্ফোরণের বিচ্ছুরণ পাঠাবে যা খালি চোখেই পৃথিবী থেকে দেখা যাবে। এটি নক্ষত্রমণ্ডলের একটি অন্ধকার স্থআনে বাস্তবায়িত হবে। যেখানে একটি সাদা বামন এবং একটি লাল দৈত্যের মধ্যে ভয়ানক মিথস্ক্রিয়ার ফলে এক বিশাল বিস্ফোরণ হতে চলেছে। আর এর পরই লাল দৈত্য নক্ষত্রটি তাঁর জীবনচক্র শেষ করবে।
লাল দৈত্য হল এমন একটি নক্ষত্র, যে নিজের চূরান্ত পর্যায়ের একটি মৃতপ্রায় নক্ষত্র। এটি প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে ক্রমশ অশান্ত হয়ে ওঠে। এবং পর্যায়ক্রমে তাঁর বাইরের স্তরগুলি থেকে পারমাণবিক উপাদান বের করে দেয়। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, লাল দৈত্যটি ক্রমাগত তাঁর পতনের পথে এগিয়ে চলছে এবং কাছাকাছি থাকা সাদা বামনটি তাঁর থেকে হাইড্রোজেন গ্যাস ছিনিয়ে নিচ্ছে এবং নিজের দিকে টেনে চলেছে। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরেই সাদা বামন নক্ষত্রটি লাল দৈত্যের থেকে হাইড্রোজেন গ্যাস ছিনিয়ে নিয়ে নিজের পৃষ্টে জমা করছে। কিন্তু যতক্ষণ না তাপ এবং চাপ এমন পরিমানে পৌঁছয় যে সেটি পূর্ণ বিকশিত হতে পারে। সেটি পূর্ণাঙ্গ বিকশিত হলেই একটি শক্তিশালী থার্মোনিউক্লিয়ার বিস্ফোরণ হবে। যা আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে যে কোনও সময় সংগঠিত হবে। নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই বিস্ফোরণ একটি শক্তিশালী পারমাণবিক বিস্ফোরণের সমান। যা মৃত নক্ষত্রটিকে তাঁর অতিরিক্ত উপাদান থেকে পুরোপুরি মুক্তি দেয়।
Discussion about this post