আমাদের রাজ্যে বহু প্রাচীন স্থাপত্য ও ভাস্কর্য রয়েছে। যার পেঁছনে রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। আর এর মধ্যেই অতি প্রাচীন কিছু মন্দিরও আছে। যেগুলির নাম হদিশ কোনোটাই জানেন না অনেকেই। সেই মন্দির গুলির মাহাত্য ও ইতিহাস সম্পর্কেও একেবারেই অবগত নই আমরা সকলেই। এমনই একটি মন্দিরের হদিশ ও সুদীর্ঘ ইতিহাস সম্বন্ধে কিছু অজানা তথ্য জানাবো এই প্রতিবেদনে।
এই প্রাচীন মন্দির নামেই একশো আট শিব মন্দির। তবে সেখানে স্থাপিত একশো নয় টি শিব মন্দির। জপমালার মতো একশো আটটি মন্দির মালার আকারেই রয়েছে সেখানে । বাকি আর একটি শিব মন্দির কিছুটা দূরে, গলার মালার লকেটের মতো করেই অবস্থান করছে। বর্ধমান জেলার একশো আট শিব মন্দিরের খ্যাতি রাজ্য জোড়া, তবে এখন দেশ জুড়েও এর খ্যাতি শোনা যায়। সারা বছরই এই মন্দিরে ভক্তদের সমাগম লেগেই থাকে।দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা এই মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। কথিত আছে, মনোস্কামনা পূরণের জন্যই ভক্তরা ছুটে আসেন এই একশো আট শিব মন্দিরে।
প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এই মন্দিরটি বর্ধমানের নবাবহাটে অবস্থিত। আর সেই সময় বিপুল পরিমানে অর্থ ব্যয় করে এই মন্দির গড়েছিলেন মহারানী বিষণকুমারী। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধু সন্ন্যাসীদের আমন্ত্রণ করে জাঁকজমক সহিত এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করা করে ছিলেন মহারানী।
জনশ্রুতি অনুযায়ী এই ১০৮ শিবমন্দির প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ইতিহাসও আছে। এই মন্দিরের নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে। এবং সেই নির্মাণ কাজ চলেছিল ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। সেই সময় বর্ধমান জেলার নবাবহাট এলাকায় মহামারি থাবা বসিয়েছিল। বহু মানুষের মৃত্যুও হয়েছিল সেই সময়। মহামারিতে আত্মীয় পরিজনকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন নবাবহাট এলাকার মানুষ। আর তাঁদের সেই শোক ভোলাতেই এই অভিনব পন্থা অবলম্বন করেছিলেন মহারানী বিষণকুমারী। তার উদ্দেশ্য ছিল নবাবহাট এলাকায় মন্দির গড়ে সেখানকার মানুষকে ঈশ্বরমুখী করে তাঁদের স্বজন হারানোর শোক ভোলানো। আর সেই উদ্দেশ্য পূরণ করতেই নবাবহাট এলাকায় একশো আট শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন বর্ধমানের মহারানী। জপমালার মতো এই মন্দিরমালা বর্ধমানের এক অনন্য ভাস্কর্য। এই মন্দিরগুলির প্রত্যেকটির আকার একই ধরণের। ওড়িশার বালেশ্বর মন্দিরের আটচালার নকশার আদলে নির্মিত এই মন্দির। প্রতিটি মন্দিরের সামনেই আছে খোলা বারান্দা। প্রতিটি মন্দিরে রয়েছে কষ্টিপাথরের গৌরীপট্ট-সহ শিবলিঙ্গ। এবং এই মন্দির প্রতিষ্ঠার সময়ে সবগুলি মন্দিরের সামনেই একটি করে বেল গাছ রোপন করা হয়েছিল।১০৮টি মন্দির একটি মালার আকারে গাঁথা থাকলেও ১০৯তম মন্দিরটি একটু আলাদা ভাবেই অবস্থান করে, আর এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠার সময় সেখানে লক্ষাধিক সাধু উপস্থিত ছিলেন। শোনা যায়, তাঁদের চরণধূলি রাজপরিবার একটি সোনার ঘড়ায় সংরক্ষিত করে রেখেছিল।
তবে সারা বছর ভক্ত সমাগম থাকলেও শিবরাত্রি উপলক্ষে বর্ধমানের একশো আট শিব মন্দিরে থাকে ভক্তদের উপচে পরা ভীড়। বিভিন্ন জেলা থেকে পুণ্যার্থীরা এখানে পুজো দিতে আসেন শিবরাত্রির পুণ্যলগ্নে। আগত ভক্তরা একশো আটটি মন্দিরে ঢুকে শিবলিঙ্গে জল ঢেলে শিবরাত্রি ব্রত পালন করে থাকেন। শিবরাত্রি উপলক্ষে সাত দিনের মেলা বসে এই মন্দির চত্বরে। সারাদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্ত সমাগম লেগেই থাকে এই ইতিহাস প্রাচীন মন্দিরে।
Discussion about this post