নবান্ন বনাম জুনিয়র ডাক্তারদের স্নায়ুযুদ্ধ এখনও অব্যহত। আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়ার দেহ উদ্ধারের পর থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন কমার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং তা ক্রমে বেড়েই চলেছে। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছেন সিনিয়র ডাক্তাররা। দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে কখনও মুখ্যমন্ত্রী বা কখনও মুখ্যসচিবের সঙ্গে। তবুও সমাধান সূত্র অধরা। জুনিয়র ডাক্তাররা মূলত ১০ দফা দাবি নিয়ে লড়াই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এই ১০ দফা দাবির মধ্যে যেমন আর জি করের নির্যাতিতার সুবিচারের দাবি রয়েছে, তেমনই নিজেদের নিরাপত্তা-সহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি রয়েছে। রাজ্য সরকারের দাবি, ১০ দফা দাবির মধ্যে ইতিমধ্যেই ৭টি দাবি মেনে নিয়েছে সরকার। কিন্তু আন্দলনকারীরা অটল।
তাঁদের বক্তব্য, ১০ দফা দাবিই পূরণ করতে হবে। এই টানাপোড়েনে যথেষ্ট চাপে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। কারণ, জুনিয়র ডাক্তারদের লড়াইয়ে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সিনিয়র ডাক্তাররা, নাগরিক সমাজ এবং সর্বপরি সাধারণ মানুষ। ফলে তাঁদের ডাকা যে কোনও কর্মসূচিতে কয়েক হাজার মানুষের স্বতঃফূর্ত উপস্থিতি নজর কাড়ছে। এই আবহে আচমকাই পাল্টা ১৩ দফা দাবি নিয়ে আসরে অবতীর্ণ হলেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। যিনি বিভিন্ন সময় দলের হয়ে টি২০ স্টাইলে ব্যাট চালিয়ে বিতর্কের মূখে পড়েছিলেন। এবার তিনি ডাক্তারদের ১০ দফা দাবির পাল্টা ১৩ দফা দাবি সামনে এনে শোড়গোল ফেললেন।
কি আছে এই ১৩ দফা দাবিতে…
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য, সব হাসপাতালে যেমন ডাক্তারদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে, তেমনই ডাক্তারদের সময় মেনে ডিউটি ও রোগী দেখাটাও সুনিশ্চিত করতে হবে।
সরকারি হাসপাতালের ডিউটি ফেলে বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে কাজ করা যাবে না।
প্রেসক্রিপশনে ওষুধ কোম্পানির প্রভাবে দামি ওষুধের নাম লেখা যাবে না। একই গুণমানের কমদামের ওষুধই লিখতে হবে।
ডাক্তারদের ওষুধ কোম্পানি বা চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরির সংস্থার খরচে বিদেশভ্রমণ বন্ধ করা। এবং কমিশন বা কাটমানির অভিযোগের সুরাহা করতে হবে।
কথায় কথায় বিভিন্ন পরীক্ষার নামে ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকগুলিতে রোগী পাঠানো চলবে না। এখানেও কাটমানির অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
ডাক্তারদের ফি কাঠামো সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে চান কুণাল ঘোষ। এমনকি রসিদ দেওয়ার দাবিও তুলেছেন কুণাল ঘোষ।
সাধারণ মানুষের করের টাকার ভর্তুকিতে যাঁরা সরকারি মেডিকেল কলেজে পড়বেন, তাঁদের সরকারি কাজেই অগ্রাধিকার দিতে হবে।
স্পেশালিস্ট ও সিনিয়র ডাক্তারদের জেলায় জেলায় ডিউটি করতে যেতে হবে। লবি করে কলকাতায় পোস্টিং হবে না।
কুণাল ঘোষের দাবি, শূন্যপদ পুরণ বা পরিকাঠামো বৃদ্ধি হোক। সেই সঙ্গে ডাক্তারদেরও বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। রোগীবন্ধু হয়ে পরিষেবা দিতে হবে। সরকারি পরিকাঠামোর দুর্বলতা দেখিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া চলবে না।
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের বক্তব্য, যাঁরা আন্দোলনের নামে শুধু সুরক্ষা সুরক্ষা করছেন, তাঁদের রোগীদের সুরক্ষা ও সাধারণ মানুষের সুরক্ষা নিয়েও ভাবতে হবে। কিন্তু কয়েকজন সিনিয়র ডাক্তার আছেন, যাঁরা সরকারি হাসপাতালে সাধারণ মানুষদের বঞ্চিত করে প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে সময় দেন।
রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ফের ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছেন কুণাল ঘোষ। জুনিয়র ডাক্তারদের এই আন্দোলনে বিপর্যস্ত শাসকদল যাতে পাল্টা প্রচার করতে পারেন, সেই জন্যই এই পাল্টা ১৩ দফা দাবি নিয়ে হাজির হলেন তিনি। যদিও জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত উপস্থিতিই বুঝিয়ে দিচ্ছে এই আন্দোলনে মানুষের সমর্থন কতটা প্রবল। ১৫ অক্টোবর রেড রোডে পুজো কার্নিভালে এবার সাধারণ মানুষের উপস্থিতি সেভাবে দেখা না গেলেও এর কয়েকশো মিটার দূরে রানী রাসমনি রোডে জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকা দ্রোহ কার্নিভালে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি এই বিষয়ে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের কৌতুহল, কুণাল ঘোষের এই পাল্টা ১৩ দফা দাবি কি শাসকদল অনুমোদন করছে? যদি করে তাহলে বেশ কয়েকটি বিষয়ে রাজ্য সরকার পদক্ষেপ গ্রহন করতে গেলেই নতুন করে বিবাদ সৃষ্টি হতে পারে। যা শাসকদলের পক্ষে যাবে না, এটা বলাই বাহুল্য।
Discussion about this post