এটা সকলেই জানেন যে রতন টাটা তাঁদের পারিবারিক ব্যবসাকে বিশ্বজনীন করেছিলেন তাঁর দক্ষতা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে। যা শুরু হয়েছিল ১৯৯১ সাল থেকে। কি অদ্ভুত সমাপতন দেখুন, মুম্বইয়ের ব্রিজক্যান্ডি হাসপাতালেই ৫৪ বছরের রতন টাটা প্রথমবার টাটা গ্রুপের দায়িত্ব পেয়েছিলেন জে আর ডি টাটার হাত থেকে। আর সেই হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বিজনেস জিনিয়াস রতন টাটা। কিন্তু অনেকেই জানেন না টাটা গ্রুপের দায়িত্ব পাওয়ার পরও রতন টাটা পূর্বতন চেয়ারম্যান জেআরডি টাটার অফিসে বসতে রাজি হননি।
১৯৯১ সালে টাটা গ্রুপের তৎকালীন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর রতনজি দাদাভয় টাটা বা জেআরডি টাটা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মুম্বইয়ের ব্রিজক্যান্ডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেই সময় রতন টাটা তাঁর কাকা জেআরডি টাটাকে দেখতে হাসপাতালে যান। আর হাসপাতালের বেডে শুয়েই জেআরজি তাঁর ভাইপোকে জানিয়েছিলেন এরপর তাঁকেই পারিবারিক ব্যবসার দায়িত্ব নিতে হবে। পরবর্তী সময় সিমি গারেওয়ালের এক টিভি শোয়ে এসে রতন টাটা এই কাহিনী শুনিয়েছিলেন। ওই শোয়ে প্রাক্তন বান্ধবী সিমি গারেওয়ালকে তাঁর জীবনের বহু অকথিত কাহিনী শুনিয়েছিলেন রতন টাটা। যেমন কিভাবে তিনি টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
ওই টক শোয়ে সিমি গারেওয়ালকে রতন টাটা বলেন, আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি যে আমি একদিন পারিবারিক ব্যবসার শীর্ষে বসবো। কিন্তু সেদিন আমার কাকা তথা জেআরডি টাটা হাসপাতালের বেডে শুয়ে ষখন বললেন এবার আমাকেই তাঁর জায়গা গ্রহুন করতে হবে, তখনও আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। পরে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর জেআরডি টাটা বোর্ড মিটিং ডেকে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন। এবং ১৯৯১ সালের ২৫ মার্চ আমি টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। রতন টাটার নিজের জীবনের আরও অকথিত কাহিনী সেদিন শুনিয়েছিলেন সিমি গারেওয়ালের টক শো-তে। তিনি বলেছিলেন, জেআরডি আমাকে তাঁর অফিসে দেখা করতে বলেন, আমি আমার এক অফিসারের সঙ্গে সেখানে যাই।
অফিসে ঢোকার পর কাকা আমাকে জিজ্ঞেস করেন, নতুন কি? আমিও শান্ত স্বরে উত্তর দিয়েছিলাম, আপনার সঙ্গে শেষবার দেখা হওয়ার পর থেকে নতুন কিছু নেই। এরপর জেআরডি আমাকে বলেন, কিন্তু আমার তোমাকে নতুন কিছু জানানোর আছে। তুমি আমার পাশে এখানে এসে বসো। কাকার নির্দেশ মতোই তিনি পাশে গিয়ে বসেন। এরপর কাকা আমাকে বলেন, জামশেদপুরে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর থেকেই আমি পদত্যাগ করার কথা ভাবছিলাম। এখন সময় এসেছে। তুমিই আমার দায়িত্ব নেবে এবার থেকে। ৫৪ বছরের তরুনকে নিজের চেয়ার ছেড়ে দিয়েছিলেন জেআরডি টাটা। কিন্তু আপাত নম্র ও ভদ্র রতন টাটা সেদিন সেই চেয়ারে বসতে অস্বীকার করেন। এবং জানান, আমি এই চেয়ারে বসবো না, বরং এই অফিসের নিচের তলায় আমার যে অফিস আছে, আমি ওই অফিস থেকেই কাজ করতে চাই।
রতন টাটা আরও জানিয়েছিলেন, জেআরডি টাটা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মানুষকে নিজের উত্তরসূরি হিসেবে বেছেছিলেন। কিন্তু আমি বিশ্বাস করতাম, যে কোনও একজনের হাতেই টাটা গ্রুপের দায়িত্ব থাকা উচিৎ। তবে সেই দায়িত্ব যে আমাকেই নিতে হবে সেটা সেদিনও কল্পনা করিনি, বলেছিলেন রতন টাটা। তাঁর কথায়, এই দায়িত্ব অন্য কেউ পেলেও আমার কোনও আপত্তি ছিল না। তিনি জেআরডি টাটাকে নিজের মতামত যুক্তি-সহ বুঝিয়েছিলেন। তবে জেআরডি যে সেই মতামত গ্রহন করে তাঁকেই বাঝবেন, সেটা তিনি ঘ্রুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি বলে দাবি করেছিলেন রতন টাটা। কিন্তু কথায় আছে রতনে রতন চেনে। তাই জেআরডি টাটা সঠিক মানুষটিকেই বেছে নিয়েছিলেন নিজের উত্তরসূরি হিসেবে। তার প্রমান, পরবর্তী ২১ বছরে রতন টাটা নিতান্ত পারিবারিক ব্যবসাকে নিয়ে গিয়েছেন বিশ্বের অন্যতম বড় ব্যবসায়ীক পাওয়ার হাউসে। টাটা গ্রুপের বর্তমান ব্যবসা প্রায় ৪০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। টাটা গ্রুপের সমস্ত ব্যবসাকে তিনি এক ছাতার তলায় নিয়ে আসেন এবং দক্ষ হাতে পরিচালনা করেন।
Discussion about this post