ভারতীয় রেলকে বলা হয় দেশের লাইফলাইন। এরকম দাবির পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। প্রথমত, ভারতীয় রেল এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্ক। দ্বিতীয়ত, রেলের চলমান ট্র্যাকটি ৯২ হাজার ৮১ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত যা ৬৬ হাজার ৬৮৭ কিলোমিটার দূরত্বকে জুড়ে দিয়েছে। তৃতীয়ত, ভারতীয় রেল সবচেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন করে এবং দেশের বহু প্রান্তকে রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করেছে। পাশাপাশি ভারতে সবচেয়ে সস্তা গণ পরিবহন হল রেল। এবার আসি আসল কথায়, ট্রেনে ভ্রমণ করার সময় আপনি কি লক্ষ্য করেছেন যে পথে বেশ কয়েকটি স্টেশনের নামের সঙ্গে টার্মিনাল, জংশন এবং সেন্ট্রাল শব্দটি জুড়ে রয়েছে। কখনও কী আপনার মনে এই প্রশ্ন এসেছে, এগুলোর মানে কি অথবা এরকম নামকরণ কেন হয়েছে? আসুন তাহলে এই সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
প্রথমেই আসা যাক জংশন স্টেশন কাকে বলে। এটি এমন একটি স্টেশন, সেখানে কমপক্ষে তিনটি রেলপথ যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ আপনি যে দিক থেকে ট্রেনে চেপে এলেন, উল্টোদিকে ট্রেনটি যে কোনও দুটি পথে যেতে পারবে। অর্থাৎ সামনের রেলপথ দুটি ভাগ হয়ে দুটি গন্তব্যের দিকে গিয়েছে। সেই স্টেশনকে জংশন স্টেশন বলে। তবে এ ক্ষেত্রে রেলপথ তিনটির বেশি ভাগ হতে পারে। যেমন, মথুরা স্টেশন ভারতের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে জংশন। কারণ এখানে সাটটি আলাদা রুট বা লাইন ভাগ হয়েছে। এছাড়া সালেম জংশন থেকে ছয়টি রুট, বিজয়ওয়াড়া থেকে পাঁচটি এবং বেরেলি জংশন থেকে পাঁচটি রুট ভাগ হয়েছে। এই বাংলার খড়্গপুর স্টেশনও একটি বড় জংশন। কারণ এখানে পাঁচটি আলাদা রুট ভাগ হয়েছে।
এবার আসি সেন্ট্রাল স্টেশনের কথায়। ভারতে মোট পাঁচটি সেন্ট্রাল বা কেন্দ্রীয় স্টেশন রয়েছে। আসলে, সেন্ট্রাল স্টেশন মানে সেই স্টেশনটি সেই শহরের প্রধান স্টেশন। আবার কোনও সেন্ট্রাল স্টেশন হল শহরের ব্যস্ততম এবং প্রাচীনতম রেল স্টেশন। এই স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন প্রচুর ট্রেন ও যাত্রী যাতায়াত করে। অবশ্য, প্রাচীন ও ব্যস্ততম স্টেশন মানেই সেই শহরে একটি সেন্ট্রাল স্টেশন থাকবে এমন নয়। আসলে শহরের কেন্দ্রস্থলে এবং বিভিন্ন রুটে যাওয়া যায় এমন স্টেশনই সেন্ট্রাল স্টেশন। ভারতে যে পাঁচটি সেন্ট্রাল স্টেশন রয়েছে সেগুলি হল, কানপুর, মুম্বই, চেন্নাই, থিরুবন্তপুরম ও ম্যাঙ্গালোর সেন্ট্রাল। নয়া দিল্লি বা হাওড়া স্টেশন প্রাচীন ও ব্যস্ততম হলেও এগুলি সেন্ট্রাল স্টেশনের মর্যাদা পায়নি।
স্টেশনের আরেকটি বিভাগ হল টার্মিনাল বা টার্মিনাস। টার্মিনালের অর্থ হল সমাপ্তি, সেই অর্থে রেলের পরিভাষায় সেই স্টেশনে ট্র্যাক বা রুট শেষ হয়েছে। অর্থাৎ ট্রেনটি শুধুমাত্র একটি দিক দিয়েই সেই স্টেশনে প্রবেশ করতে বা ছেড়ে যেতে পারে। ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাল, ভিক্টোরিয়া টার্মিনাল, লোকমান্য তিলক টার্মিনাল, কলকাতা টার্মিনাল উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়। আবার হাওড়া স্টেশনও ভারতের অন্যতম বৃহত্তম টার্মিনাল স্টেশন।
Discussion about this post