শেষ বাঁশি বাজার পরেই কিছুক্ষন কোমর ঝুঁকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন তারপরে আস্তে আস্তে নিজেকে টেনে নিয়ে গেলেন সুনীল। টিমমেটদের সঙ্গে হাত মেলালেন দীর্ঘদিনের সঙ্গী গুরপ্রীতের বুকে রাখলেন মাথা। কুয়েতের ফুটবলাররা এসে হাত মিলিয়ে গেলেন সুনীলের সঙ্গে। ম্যাচটা জিততে পারলে হয়তো আবেগ উচ্ছ্বাসের মাত্রা বেশি হতো। তারপর যা হল তাই বা কম কী। গোটা মাঠ ঘুরলেন সুনীল। গ্যালারি থেকে ভেসে এলো প্রবল চিৎকার ছেত্রী ছেত্রী । হাত নাড়লেন কখনো হাতজোড় করলেন। সবুজ এই ঘাসেই যে তার সবকিছু। ঘাম- রক্ত -কান্না- হাসি জড়িয়ে প্রতিটি ঘাসে। এত সহজে ছেড়ে যাওয়া যায় । টিম ইন্ডিয়া ‘গার্ড অফ অনার’ এর সময় আর চোখের জল চেপে রাখতে পারলেন না মহা তারকা। দুহাতে মুখ চেপে কাঁদলেন। মুখ্যমন্ত্রী দুপুরেই ফোনের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন ।রাতে মাঠে তাঁকে সম্মান জানালেন ক্রীড়া মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ।এ আই এফ এ ,আই এফ এ, মোহনবাগান ,ইস্টবেঙ্গল ও সুনীলকে সম্মানিত করলো। সেই সবই হলো খেলার পরে। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ফুলের স্তবকের সঙ্গে পরিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রীর ডিজাইন করা সোনার চেন ।
অরূপ বললেন, “ফুটবলের প্রতি ভালবাসা আগামী প্রজন্মের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে”। ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট কল্যাণ চৌবে জানালেন সম্মান। সাবির আলী ,আইএম বিজন করে গেলেন আদর। ইস্টবেঙ্গলের পক্ষ থেকে মেয়র ফিরহাদ হাকিম পরিয়ে দিলেন উত্তরীয়, মোহনবাগান সচিব দেবাশীষ দত্ত পড়ালেন সবুজ মেরুন উত্তরীয় ,সম্মান জানালো মোহামেডানও। সুনীলের লড়াইকে সম্মানিত করলো ভারতীয় সেনাবাহিনী। সবুজ মাঠে সুনীল যে নিজেকে ভারতের সৈন্য বলেই মনে করতেন। একদা সতীর্থ মেহতাব ,নবী, ক্লাইম্যাক্স, দীপঙ্কর, আলভিটোরা যখন সুনীলকে জড়িয়ে ধরলেন তখন যেন সুনীলের চোখে সেই পুরনো দিন। স্ত্রী সোনম, বাবা-মাকেও ডেকে নিলেন। দেশের হয়ে জীবনের শেষ ম্যাচ খেলতে নেমে অনেক তারকাই সফল হননি। আসল কথা হল বৃহস্পতিবার রাতে ভারতীয় ফুটবল হারিয়ে ফেলল এক চিরকালীন নক্ষত্রকে যাকে দেখতে মাঠে আসতে জনতা। যার গোলে ফিরে আসত, ভারতীয় ফুটবলের ফিরে আসা অতীত। এবারে কার জন্য ভরবে মাঠ? কার পায়ে লেখা থাকবে। দেশের হয়ে ৯৪ গোল ? কে ধরবে হাল? রাতের যুবভারতীর সবুজ গালিচায় ঘুরে বেড়ালো সেই প্রশ্ন। উত্তর কোথায় ? জানা নাই কারও।
Discussion about this post