ভারত পাকিস্তান ম্যাচে শুধু সর্বোচ্চ রান করা নয়, দুর্দান্ত উইকেট কিপিং করেছেন ঋষভ পন্থ। যখন পাকিস্তান বোলারদের দুর্দান্ত বলের সামনে একের পর এক ভারতীয় খেলোয়াররা উইকেট দিয়ে আসছেন সেই সময় প্রায় একা লড়াই করে ঋষভ পন্থ ৩১ বলে ৪২ রান করেন। কেবলমাত্র অক্ষর প্যাটেল ২০ রান করেন। এছাড়া কোনো ব্যাটসম্যাই পাকিস্তানি বোলারদেরদের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। মারাত্মক পথ দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ৪৫৪ দিন তিনি মাঠের বাইরে ছিলেন। আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালস এর ক্যাপ্টেন হিসেবে পুনরায় খেলা শুরু করেন এবং আইপিএলে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করে ভারতীয় দলে জায়গা করে নেন পুনরায়। তার এই ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাসটা কিন্তু খুব সহজ ছিল না। দেখে নেওয়া যাক ঋষভ পন্থের ফিরে আসার লড়াই টা কেমন ছিল ।
ঋষভ পন্থ,১৯৯৭ সালের ৪ অক্টোবর উত্তরাখণ্ডে জন্মগ্রহণ করেন। অনূর্ধ্ব ১৯ খেলায় দিল্লি হয়ে আসামের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে ঋষভ ৩৫ রান করেন এবং দ্বিতীয় ইঞ্চি করেন১৫০ রান। যেটা তার জীবনের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস বলে তিনি মনে করেন। ২০১৬ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেটে বিশ্বকাপে ১৮ বলে ৫০ রান করেন নেপালের বিরুদ্ধে। যেটা এখনো পর্যন্ত রেকর্ড । ২০১৬-১৭ রঞ্জি ট্রফি খেলায় মহারাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ৩০৮ রানের ইনিংস খেলেন এবং তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ ভারতীয় হিসেবে প্রথম শ্রেণী ক্রিকেটে ট্রিপল সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব অর্জন করেন। ১৪ ই জানুয়ারি ২০১৮ সালে হিমাচল প্রদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচে দিল্লির হয়ে দ্বিতীয় দ্রুত টি টোয়েন্টি শতরান করেন, মাত্র ৩২ বলে ১০০ রান করেন। ভারতের সর্বকনিষ্ঠ টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড় হিসাবে ১৯ বছর ১২০ দিন বয়সে ঋষভ পন্থ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন। ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্বপথ টেস্ট সেঞ্চুরি করেন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এবং ভারতীয় উইকেট কিপার হিসেবে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ যে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করলেন।
পরের মাসেই তিনি ভারতীয় দলের হয়ে একদিনের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ পান ২০১৮ সালের একুশে অক্টোবর। ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্টে ১১ টি ক্যাচ একজন ভারতীয় উইকেট কিপার হিসেবে একটি টেস্ট ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ক্যাচ ধরার কৃতিত্ব অর্জন করেন। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে অস্ট্রেলিয়া বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করেন এবং প্রথম ভারতীয় উইকেট কিপার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব অর্জন করেন। ২০২১ সালে চতুর্থ টেস্টে অস্ট্রেলিয়া বিরুদ্ধে ভারতীয় উইকেট কিপার হিসেবে দ্রুত হাজার রান করার কৃতিত্ব অর্জন করেন। ২০২১ সালে মার্চ মাসে বিশ্বকাপ শ্রীলংকার বিরুদ্ধে দ্রুত হাফ সেঞ্চুরি করার রেকর্ড করেন। যে রেকর্ডটি ছিল কপিল দেবের মাত্র আটাশ বলে অর্ধশত রান। ২০২২ সালের জুলাই মাসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে ১২৫ রান করে নট আউট থাকেন। এরপর ২০২২ সালে ৩০ এ ডিসেম্বর ২৫০ জীবনের নেমে আসলো এক কালো দিন দিল্লি দেরাদুন হাইওয়েতে গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রচন্ড আঘাত পেয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। তার মাথা পিঠে এবং পায়ে আঘাত লাগে এবং ডান পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। তার আঘাত তাকে ক্রিকেট থেকে সরিয়ে রেখেছিল ২০২৪ সালের আইপিএলের আগে পর্যন্ত। পুনরায় পন্থ ফিরে আসন দিল্লি ক্যাপিটালসের অধিনায়ক হিসেবে।
আইপিএলের মূল পর্বে যেতে না পারলেও দিল্লি ক্যাপিটাল হয়ে ৪৪১ রান করেন এবং দুরন্ত উইকেট কিপিং করে পুনরায় ভারতে তাদের স্থান করে নেন। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অর্ধশত রান করেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে ভারতীয় দলের রানকে ১১৯ পর্যন্ত নিয়ে যান। ভারতীয় বোলিংয়ের সময় দুরন্ত কিপিং করেন এবং উইকেটের পেছনে অসাধারণ তিনটি ক্যাচ নেন। ঋষভ পন্থ একজন চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার। তার কাছে কোন বাধাই কঠিন নয়।আগামী দিনের ভবিষ্যৎ ঋষভ এবারের বিশ্বকাপে কোন সাফল্য এনে দিতে পারেন ভারতকে এখন সেটাই দেখার।
Discussion about this post