এবারের ক্রিকেট ময়দানকে বিদায় নিতে চলেছে ভারতীয় ক্রিকেটের হিরোরা। একদিকে মহেন্দ্র সিং ধোনি, যিনি ছোট্ট একটি শহর থেকে উঠে এসে নিজের জীবনের সবকিছু উজাড় করে দিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য। আর অন্যজন যাকে ক্যারিয়ারের শুরু থেকে শেষ সব সময়ই শুধু স্ট্রাগল করে যেতে হল। কখনও টিম ইন্ডিয়ার হয়ে ফাইনালে ফিনিশারের ভূমিকা , ঝাঁপিয়ে পড়ে একের পর এক ক্যাচ ধরে বিপক্ষে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেওয়া। আবার কখনও আইপিএলে যখন নিজের দলের সব ব্যাটসম্যান হয়েছেন পরাস্ত তখন বিধ্বংসী ব্যাটিং করে দলকে ম্যাচ জিতিয়েছেন। দুজনেই জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন। মহেন্দ্র সিং ধোনি জীবনের প্রথম ম্যাচে রান আউট ,তারপরে বেশ কয়েকটি ম্যাচের ব্যর্থতা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে ভারতীয় দর্শকরা।
২০২১সালে বিশ্বকাপ জেতার পর সমস্ত সাক্ষাৎকারে যখন সঞ্চালকরা ধোনিকে কৃতিত্ব দিচ্ছিলেন, তখন কখনো যুবরাজ সিংকে কখনও গৌতম গম্ভীরকে কখনও দলের অন্যদের কৃতিত্ব দিয়েছেন । ভারতীয় ক্রিকেটের দুই মহারথী মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং দীনেশ কার্তিক নিজেদের ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন একসাথে। এবং শেষ করছেন সম্ভবত একই সাথে । ধোনি যেমন জানিয়েছেন তিনি শেষ ম্যাচ খেলতে চান চেন্নাইয়ের মাঠে তেমনই দীনেশ জানিয়েছেন তিনিও শেষ ম্যাচটি খেলতে চান ব্যাঙ্গালোরের মাঠে। এ বছরই তারা রিটায়ার করবেন কিনা জানা নেই , তবে বিভিন্ন জল্পনা থেকে অনুমান করা যায় এটাই তাদের শেষ বছর হতে চলেছে। দুজনেই উইকেটকিপার, দুজনেই ফিনিশার, দুজনেই বহু হেরে যাওয়া ম্যাচ জিতিয়েছেন। ভারতীয় ক্রিকেটের দুই কিংবদন্তি মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং দীনেশ কার্তিক। আজই হয়তো তারা জীবনের শেষবারের জন্য উইকেটের পেছনে দাঁড়াবেন। আজই হয়তো জীবনের শেষ ম্যাচ খেলে ফেলবেন দুজন। দুজনেই এমন ক্রিকেটার যাদের কোন হেটার্স নেই। দুজনেই ভারতীয় দলে খেলা শুরু করেন ২০০৪ সালে । যদিও মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারতীয় টেস্ট ম্যাচ খেলেন ২০০৫ সাল থেকে । কুড়ি বছর ধরে একইভাবে নিজেদের ফিটনেস বজায় রেখে দলকে জেতানোর এমন কৃতিত্ব খুব কম খেলোয়াড়ের মধ্যেই রয়েছে। ।
দীনেশ কার্তিক এবং মহেন্দ্র সিং ধোনির জীবনের সাফল্য ব্যর্থতা সবটাই এসেছে। অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে দুজনেই আজ দুজনের রাস্তায় সফল। দুজনেই উইকেট কিপার, একই জায়গার খেলোয়াড় হওয়ায় মহেন্দ্র সিং ধোনির জন্য খুব বেশি ভারতীয় দলের সুযোগ পাননি দীনেশ কার্তিক। তবে যখনই সুযোগ পেয়েছেন নিজেকে উজাড় করে দেশকে জেতানোর চেষ্টা করে গেছেন দীনেশ কার্তিক। সুযোগ না পেয়েও কখনো ধোনির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেননি। সুযোগ টাকে ১০০% কাজে লাগানোর চেষ্টা করে গেছেন। ধোনিকে মিস্টার কুল বলা হয় । সে দিক থেকে কার্তিক ও খুব একটা পিছিয়ে নেই । কখনোই তাকে খেলার মাঠে উত্তেজিত হতে দেখা যায়নি। আইপিএল এর ইতিহাসে প্রথম থেকেই এই দুই খেলোয়াড় সমস্ত প্রজন্মের খেলোয়াড়দের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেলে চলেছেন। অন্য অনেকের মত বয়স হয়েছে বলে এই দুজনকে কখনও ট্রোলের শিকার হতে হয়নি। এখন দর্শকদের কাছে দুজনের চাহিদা যথেষ্ট রয়েছে। দুজনেই দুজনের ক্ষেত্রে একইভাবে সফল, ফলে এখনও সুনামের সঙ্গে খেলে চলেছে। আজ হয়তো এই দুজনের কোন একজনের জীবনের শেষ ম্যাচ হতে চলেছে । যে হারবে তাকে বিদায় নিতে হবে এ বছরের বিদায় জানাতে হবে আইপিএলকে। আজ আরসিবি হারলে ধোনিকে হয়তো জীবনে শেষবারের মতো মাঠে দেখা যাবে। অপর দিকে বেঙ্গালুরু হারলে কার্তিককে হয়তো শেষবারের মতো মাঠে দেখা যাবে। অনেক স্মৃতি অনেক লড়াই চিরকাল মনে থেকে যাবে আমাদের। মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং দীনেশ কার্তিক দুজনেই যেন একটা যুগের সমাপ্তি করবে আজ।।
Discussion about this post