ভারতের এই অবস্থার জন্য কাকে দায়ী করা উচিৎ হবে তা বলা মুশকিল। যদি বলা হয় ঘরোয়া ক্রিকেটে ভারতীয় সিনিয়র ক্রিকেটাররা অংশগ্রহন না করার জন্য, এখন এই অবনতি, অথবা কোন কোন খেলোয়াড়ের ঔদ্ধত্য, নাকি শুধুই টাকার পিছনে ছুটছে ভারতীয় বোর্ড থেকে ক্রিকেটার সকলেই। অনেক নাটক করে বহু সমারোহে ভারতীয় দলের কোচ করা হয়েছিল তাঁকে। দায়িত্ব নিয়েই জানিয়ে দিয়েছিলেন, দলকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে তৈরি তাঁর পরিকল্পনা। কিন্তু ছ’মাসের মধ্যেই ফেঁসে গেল গম্ভীর ঢোল। ভারতের কোচের দায়িত্ব নিয়েই গৌতম গম্ভীর হারিয়ে দিয়েছেন তাঁর চার পূর্বসুরিকে। না- জয়ের নিরিখে নয়। হারের নিরিখে। প্রথম ১০টি টেস্টের মধ্যে গম্ভীর হেরেছেন ছ’টি। তাঁর আগের চার কোচের এই পারফরম্যান্স নেই। সকলকেই ছাপিয়ে গিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটকে আরও গম্ভীর করে তুলেছেন কোচ গম্ভীর। অথচ তিনি একসময় জয়শাহকেও কথা শোনাতে ছাড়েন নি। অনেক সময় অনেক সিনিয়রকে নিয়ে বির্তকিত মন্তব্যও করেছেন। বাদ যাননি অনেক সিনিয়র কোচও।
২০১১ সাল থেকে ভারতের কোচ হয়েছেন মোট ছ’জন। তাঁদের মধ্যে পাকাপাকি ভাবে কোচ হয়েছেন চার জন। রবি শাস্ত্রী এক বার দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ছিলেন। সঞ্জয় বাঙ্গার দু’বার ও ভিভিএস লক্ষ্মণ এক বার অন্তর্বর্তী কোচের দায়িত্ব সামলেছেন। তাই তাঁদের এই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। পাকাপাকি ভাবে দায়িত্ব সামলানো চার কোচের প্রথম ১০ টেস্টের পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যাবে, তাঁদের থেকে কতটা পিছিয়ে রয়েছেন গম্ভীর। তাকে দায়িত্ব দেওয়ার যে নাটক দেখানো হয়েছিল মনে হচ্ছিল, গুরু দ্রোনাচার্যকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। আর দায়িত্ব নিয়ে ছ’মাসেই চাপে গম্ভীর। প্রথম ১০টি টেস্টের মধ্যে মাত্র তিনটি টেস্ট জিতেছেন তিনি। তার মধ্যে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দু’টি জয় রয়েছে। ঘরের মাঠে নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে প্রথম বার তিন টেস্টের সিরিজ়ে চুনকাম হয়েছে ভারত। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েও সিরিজ় হারতে হয়েছে। ১০ বছর পর আবার বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি হাতছাড়া হয়েছে ভারতের। গম্ভীরের অধীনে ১০টির মধ্যে ছ’টি টেস্ট হেরেছে ভারত। ড্র হয়েছে একটি। প্রথম ১০টি টেস্টে তাঁর জয়ের শতাংশ ৩০। তাঁর হারের শতাংশ ৬০। এই পরিসংখ্যান আরও খারাপ হতে পারত। ব্রিসবেনে ড্র হওয়া টেস্টও হারত ভারত। বৃষ্টি বাঁচিয়ে দিয়েছিল তাদের। নইলে পরিসংখ্যান দেখে আরও গম্ভীর হয়ে যেতেন কোচ গম্ভীর।
১০ বছর পর বর্ডার-গাওস্কর ট্রফির দখল নিল অস্ট্রেলিয়া। রবিবার ভারতীয় দল সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ছ’উইকেটে হেরে গিয়েছে। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের ইনিংস শেষ হয় ১৫৭ রানে। জয়ের জন্য ১৬২ রান তাড়া করে ৬ উইকেটে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। ভারত সিরিজ়ে হেরেছে ১-৩ ব্যবধানে। কিন্তু প্রশ্ন খেকেই যায় কোচ কি মাঠে নেমে ব্যাটিং করবে। কারণ ভারত হারের মুল কারণ হল ব্যাটিং ব্যর্থতা। । গোটা সিরিজ় জুড়ে ব্যাটারেরা ব্যর্থ হয়েছেন। যে টেস্ট ভারত জিতেছিল, তাতেও প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে শেষ হয়ে গিয়েছিল দল। পাঁচ ম্যাচের সিরিজ়ে মাত্র এক বার ৩০০ রানের গণ্ডি পার করতে পেরেছিলেন বিরাট কোহলিরা। অস্ট্রেলিয়া সেখানে তিন বার ৩০০ রানের গণ্ডি পার করেছে। যশস্বী জয়সওয়াল (৩৯১ রান) এবং নীতীশ কুমার রেড্ডি (২৯৮ রান) দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন। সেখানে বিরাট (১৯০ রান) এবং রোহিত শর্মার (৩১ রান) মতো সিনিয়রেরা ব্যর্থ। সেই সঙ্গে ঋষভ পন্থের দায়িত্বজ্ঞানহীন শট। পরিস্থিতি বিবেচনা না করেই শট খেলতে গেলেন তিনি। তাতে উইকেট দিয়ে এলেন। দলকেও ডোবালেন। মেলবোর্নে পন্থ যদি আরও কিছু ক্ষণ ধৈর্য ধরে ব্যাট করতেন, তা হলে ম্যাচ বাঁচাতেও পারত ভারত।
মেলবোর্ন এবং অ্যাডিলেডে ভারত লড়াই করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেও ব্যাটিং ব্যর্থতায় হেরে যায়। হাতে রান থাকলে ম্যাচ অন্য রকম হলেও হতে পারত। ভারতের হারের জন্য ব্যাটারদের দায়ী করেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “ভারত ভাল ব্যাটিং করতে পারেনি। টেস্টে আরও ভাল ব্যাটিং করতে হবে। না হলে জেতা মুশকিল। ১৭০-১৮০ রান করে ম্যাচ জেতা যায় না। ৩৫০-৪০০ রান করতে হবে।” ভারতের কিংবদন্তী ক্রিকেটার গাওস্করের নিশানায় গম্ভীরেরা। তিনি প্রশ্ন করেছেন, এই ক’মাসে কোচেরা কী করেছেন? তাঁদের পারফরম্যান্স কেন খতিয়ে দেখা হবে না? গাওস্কর বলেন, “কোচেরা কী করছে? নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে আমরা ৪৬ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিলাম। তখনই বোঝা গিয়েছিল দলের ব্যাটারদের কী অবস্থা। তা হলে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ়ের আগে কোচেরা কী করল। কেন কোনও উন্নতি হল না? এই প্রশ্ন কোচদের কেন করা হবে না। কোচদের পারফরম্যান্সেরও বিচার করতে হবে।”
Discussion about this post