ভারতে যে ধরনের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ম্যানিয়া চলছে, তাতে আর কিছু দিন পর টেস্ট ক্রিকেট বলে কিছু থাকবেনা বলে মনে করেন অনেক ক্রিড়া বিশেষজ্ঞরা। এক একটা ফরমেটে, এক একরকম ভাবে খেলতে হয়, আর সেটা না পারলে, ভারতীয় ক্রিকেটারদের উচিৎ, সকলের সব ধরনের ক্রিকেট না খেলা। সবাই যে সব ধরনের ক্রিকেট, সমান ভাবে খেলতে পারবে না, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটকে নিয়ে এত ব্যবসা-বানিজ্য করা হয় যে, জোর করে খেলাটাকে বদলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। নামি কেউ ব্যাট করতে নামলেই তাকে শুরু থেকে চার ছয় মারতে হবে, তা সেটা, টি-টোয়েন্টি হোক, বা ওয়ান ডে হোক, অথবা টেস্ট ক্রিকেট, যাই হোক না কেন। আর এই জায়গায় সব থেকে বড় ভুল হল, যারা টেস্টের জন্য আদর্শ খেলোয়াড়, তাদের দলেই রাখা হচ্ছে না। তাদের ভবিষ্যৎই শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। আর এই কারণেই, রীতিমতো রোহিত গম্ভীরদের তিরস্কার করলেন সুনীল গাভাস্কার। খেলাতে হার-জিত আছে কিন্তু ভারতীয় দলের এই পরাজয় অনেকগুলো ভুল কাজের একটা ফলাফল মাত্র, এমনই মনে করছেন সুনীল গাভাস্কর।
সুনীল গাভাস্কার বলেছেন, “টেস্ট ক্রিকেট ধৈর্যের খেলা, বিশেষ করে সেই ধরনের পিচে যেখানে বোলাররা সাহায্য পাচ্ছে, অথচ এখনকার ব্যাটসম্যানরা, এটা মানতেই চাইছে না। তাদের চিন্তাধারা হচ্ছে, যেমনই বোলিং হোক আমরা শুধু চার ছয়ই মারবো, কিন্তু সেটা কি করে সম্ভব ৫ দিনের খেলাতে?” গাভাস্কার বলছেন, “চেতেশ্বর পুজারা এবং রাহানের সবথেকে বড় কোয়ালিটি ছিল, কঠিন পরিস্থিতিতে প্রেসার সিচুয়েশনেও ব্যাটিং করা, ওভারের পর ওভার ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যাটিং করে, বিপক্ষ দলের বোলারদের ক্লান্ত করে দেওয়া। আর চেতেশ্বর পুজারা এবং রাহানেকে দলে না নেওয়ার অর্থ এটাই যে আপনি এই বিষয়টার উপর বিশ্বাসই রাখছেন না যে টেস্ট ক্রিকেটে ধৈর্যের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যাটিং করতে হবে।” “পূজারা এবং রাহানে ঘন্টার পর ঘন্টা অস্ট্রেলিয়ান বোলিং অ্যাটাকের বিরুদ্ধে ব্যাটিং করেছে, যাতে পরবর্তী ব্যাটসম্যানদের, ক্লান্ত বোলারদের বিরুদ্ধে রান করতে সুবিধা হয়, অথচ এই ধরনের ক্রিকেটারদের দলে রাখার মত চিন্তাধারা আজকাল নেই। ইংল্যান্ডের মতো ব্যাজবলের দিকে আমরা ফোকাস করছি, যে ইংল্যান্ড বাইরে খেলতে গেলেই হেরে আসছে। আমাদের রেজাল্টও তাহলে আলাদা কেন হবে, টিম ইন্ডিয়াও তাই ব্যর্থ হচ্ছে, চিন্তাধারা বদলাতে হবে।”
কেভিন পিটারসেন ভারতীয় দলকে শিক্ষা দিতে, রিকি পন্টিংয়ের “গিয়ে বাস্কেটবল খেলো”শেয়ার করলেন।সালটা ছিল ২০১১, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট তখনো অতটাও জনপ্রিয় নয়, রিকি পন্টিং প্রেস কনফারেন্সে বলেছিলেন, “আমি যখন থেকে খেলতে শুরু করেছি ব্যাটিং করা মানে এটাই ছিল যতক্ষণ না আউট হচ্ছি ব্যাটিং করবো, আর তাতে কারোর গড় যদি ৩৫ হত তাহলে তাকে, তার বাবা একটা বাস্কেটবল কিনে দিয়ে বলতো এটা দিয়ে খেল, ক্রিকেট তোর দ্বারা হবে না।” অর্থাৎ টেস্টে ১০০ বল খেলে ৩৫ রান করার অর্থ, তোমার ধৈর্য্য নেই,রিকি পন্টিংয়ের এই পুরনো মন্তব্যটাকে হঠাৎ শেয়ার করে কেভিন পিটারসেন লিখছেন, “টেস্ট ম্যাচ ক্রিকেটে ব্যাটিং টেকনিক এবং এপ্লিকেশন খারাপ হচ্ছে, এটা খুব একটা অবাক হওয়ার কিছু নয়, কারণ ক্রিকেট আজকাল মা’রধার, ধুমধাড়া্ক্কার ক্রিকেটে পরিণত হয়েছে । এবং টেস্ট ম্যাচের ব্যাটিং স্কিল খারাপ থেকে খারাপতর হতেই থাকছে। আর যদি স্পিন খেলার কথা হয়, ভালোভাবে স্পিন খেলার একটাই উপায় আর সেটা হল অনেক বেশি স্পিনের বিরুদ্ধে প্র্যাকটিস।”খুব স্পষ্টতোই কেবিন পিটারসেন বলছেন, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আখেরে টেস্ট ক্রিকেটের সর্বনাশ করছে। এটাতে টি-টোয়েন্টি ফরমেটকে দোষ দিয়ে লাভ নেই, সমস্যাটা ক্রিকেটারদের, ক্রিকেটাররা সব ফর্ম্যাটকে সঠিকভাবে খেলার দক্ষতা রাখছেন না, যেটা কয়েক বছর আগে পর্যন্ত হচ্ছিল। পাশাপাশি বড় ইনিংস খেলার কেউ চেষ্টা করছেন না। তিনশো বল খেলে ১০০ রান করার থেকে, ১০ বলে ৩০ রান করাটাকে অনেখে ভালো মনে করছেন, কিন্তু এটা যে টেস্ট ক্রিকেটের জন্য কতটা ক্ষতি, সেটা কেউ ভেবে দেখছেন না।
Discussion about this post