সুন্দরবনের মানুষজনই বলেন, “ঝড়ের আগেই কান্তি আসে”। এবারও তার অন্যথা হল না। আয়লা, আমফান, ইয়াস, রেমালের মতো বহু ঘূর্ণিঝড় সুন্দরবনের বুকের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে। এখানকার বাসিন্দারা যেমন ঝড় চেনেন। তেমনই চেনেন কান্তি গাঙ্গুলিকে। যিনি বাম আমলে সুন্দরবনের দাপুটে নেতা ছিলেন, সেই সঙ্গে ছিলেন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রীও। এখন বাম আমলও নেই, বামফ্রন্টের দাপটও নেই। কিন্তু কান্তি গাঙ্গুলি রয়ে গিয়েছেন সেই আগের মতই। সুন্দরবনের ওপর যদি কোনও ঝড়, ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা তৈরি হয়, তার আগেই তিনি হাজির হয়ে যান ত্রাতার ভূমিকায়।
এবারও তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন সুন্দরবনের উপকূল এলাকা রায়দিঘিতে। রায়দিঘির কুমোড়পাড়া এলাকায় ঝড় মোকাবিলায় কি কি প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে তা সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন তিনি। পাশাপাশি ঘুরে দেখলেন নদী বাঁধ এলাকাগুলি। ঝড়ের পূর্বাভাস জানিয়ে গ্রামবাসী এবং মৎসজীবীদের সতর্কও করলেন। নদীবাঁধগুলি নিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন। বাম নেতা কান্তি গাঙ্গুলির এই ক্লান্তিহীন কর্মকাণ্ড দেখে তাজ্জব নেটিজেনরা। বর্তমানে কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের বয়স ৮০ পেরিয়েছে। তবুও ঘূর্ণিঝড়ের খবর কানে আসতেই তিনি ছুটে বেরালেন রায়দিঘির আনাচে কানাচে। সুন্দরবনের মানুষজন বলেন, বাম আমলের দাপট না থাকলেও কান্তি গাঙ্গোপাধ্যায় আজও সাধারণ মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান। সাধ্যমতো সাহায্যও করেন। কখনও নিজের সোর্সে খবর পেয়ে ছোটেন বিপন্ন মানুষের সেবায়, আবার কখনও দুর্গতদের কাতর আর্তি পেয়ে ছুটে যান।
এবারও ঘূর্ণিঝড় ডানা তৈরি হয়েছিল বঙ্গোপসাগরে। সেই খবর পাওয়া মাত্রই বছর আশির কান্তি গাঙ্গুলি তৈরি হয়েছেন দুর্গতদের পাশে থাকার সাজ-সরঞ্জাম নিয়ে। এরপর রায়দিঘির কুমোরপাড়া এলাকায় ছুটে যান। স্বভাবসূলভ ভঙ্গিমায় তিনি নদীতীরবর্তী এলাকায় গিয়ে মৎসজীবীদের থেকে খোঁজ নেন হাওয়ার গতি কোন দিকে। পরে কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “যদি রাতে ঝড় আসে। আর পূবের হাওয়া হয় তাহলে নদী বাঁধ টপকে জল ঢুকবে, বাঁধ ভাঙবে”। তাঁর অনুযোগ, বাঁধের কাজ করে রাজ্যের সেচ দফতর। আগে ১০০ দিনের কাজের টাকায় নদীবাঁধে মাটি দেওয়া হতো। কিন্তু বিগত ৩-৪ বছরে সেটাও হয়নি। তাই বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা করছে এলাকার মানুষজন। একটা সময় কান্তি গাঙ্গুলি ছিলেন রাজ্যের সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী। ফলে তিনি সুন্দরবনকে চেনেন নিজের হাতের তালুর মতোই। কিন্তু এখন আর মন্ত্রিত্ব নেই, সেই দাপটও নেই। বয়সজনিত কারণে শরীরের সামর্থ্যও নেই। কিন্তু সেই জন্য প্রচীন মিথ ভাঙলো না। এবারও ঝড়ের আগেই কান্তি এসেছিলেন আগের মতোই।
Discussion about this post