বিদেশের বিভিন্ন হোটেল, রেস্তরাঁয় প্রায়ই দেখা যায় খাবার পরিবেশন করছে রোবট। আবার কারথানা বা ঝাঁ চকচকে অফিসেও কাজ করছে রোবট। কিন্তু যদি দেখেন, আমাদের এই বাংলায় কলকাতা থেকে বহু দূরে এক রেস্তরাঁয় কয়েকটি রোবট খাবার পরিবেশন করছে? তাহলে ভিরমি খাওয়ার জোগার হবে নিশ্চই। না, এটা কষ্ট কল্পনা নয়, কৃষ্ণনগরের এক রেস্তারাঁয় ইতিমধ্যেই ওয়েটারের ভূমিকায় অবতীর্ণ কয়েকটি রোবট।
চার্লি চ্যাপলিনের সেই বিখ্যাত সিনেমা মর্ডান টাইমসের কথা নিশ্চই মনে আছে। দুর্দান্ত হাসির মোড়কে ওই সিনেমায় দেখানো হয়েছিল কর্মচারীদের জন্য কারখানার মালিক এক রোবট এনেছেন। যে কর্মীদের দুপুরের খাবার খাইয়ে দেবে, এবং মুখও মুছিয়ে দেবে। পরীক্ষামূলকভাবে চার্লি চ্যাপলিনকেই বাছা হয় ওই রোবটের কার্যকারিতা দেখার জন্য। কিন্তু সেই যন্ত্র কর্মচারী চার্লি চ্যাপলিনকে খাবার খাওয়াতে গিয়ে পুরো ল্যাজেগোপবে অবস্থায় পড়ে। যা দেখে আজও হেসে কুটিপাটি হন আট থেকে আশির দর্শক। তবে মর্ডান যুগের রোবট কিন্তু চার্লি চ্যাপলিনের মর্ডান টাইমসের মতো নয়। পুরোদস্তুর কাজের।
কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার পথে কৃষ্ণনগরে ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে মাদার্স হাট নামে এক রেস্তরাঁ রয়েছে। সম্প্রতি এই রেস্তরাঁ উঠে এসেছে খবরের শিরোনামে। কারণ, কলকাতা থেকে প্রায় ১১২ কিমি দূরে অবস্থিত এই রেস্তরাঁয় খাবার পরিবেশন করছে অনন্যা। এই অনন্যা কিন্তু রক্তমাংসের মানুষ নয়, বরং ঝকঝকে রোবট। ওই রেস্তরাঁয় ঢুকলেই আপনি মেয়েলি সুরেলা কণ্ঠে শুনতে পাবেন, “আমি অনন্যা, খাবার নিয়ে এসেছি। দয়া করে সরে দাঁড়াবেন”। তবে এখানকার রোবটগুলি মানুষের মতো দেখতে নয় মোটেই। নীচে চাকা লাগানো একটি চলাফেরা করা টেবিলের মতো। কিন্তু রেস্তরাঁয় কেউ খাবার অর্ডার দিলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনন্যা চলে আসছে রান্নাঘরে। এবং সেখানে থাকা কর্মীরা খাবার সাজিয়ে দিয়ে ছোট্ট এলইডি স্ক্রিনে নির্দিষ্ট কমান্ড দিয়ে দিলেই সে পৌঁছে যাচ্ছে গ্রাহকের টেবিলের কাছে। এবং খাবারের প্লেট সাজিয়ে দিচ্ছেন সেখানে থাকা রেস্তরাঁ কর্মীরা। এরপর সকলের পাশ কাটিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে যায় অনন্যা। যা দেখে খুশি মাদার্স হাটে খেতে আসা মানুষজন।
বর্তমানে এই মাদার্স হাটে চারটি রোবট রয়েছে। রেস্তরাঁর কর্ণধার জানিয়েছেন, আগামীদিনে আরও বড় চমক আসতে চলেছে। যা কেউ ভাবতেই পারবেন না। জানা যায়, সম্পূর্ণ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে পরিচালিত হয় এই রোবটগুলি। এতে বাংলা-সহ ভারতের বেশ কয়েকটি ভাষা ইনস্টল করা আছে। ফলে গ্রাহকরা যে রাজ্যেরই হোক না কেন, একটি বোতামের সাহায্যেই অনন্যা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারবে। কৃষ্ণনগরের মাদার্স হাট এমনিতেই অন্যন্যা। কারণ এই রেস্তরাঁয়া খাবার রান্না করা থেকে পরিবেশন সবই করেন মহিলারা। রীতিমতো বাংলার ঐতিহ্য মেনে এখানে খাবার তৈরি হয়। ফলে অতি সুস্বাদু সেই সব পদ খেতে দূরদূরান্ত থেকে আসেন মানুষজন। এবার খাবার পরিবেশনকারী রোবট অনন্যাকে দেখতেও অনেকে আসছেন কৃষ্ণনগর মাদার্স হাটে। আপনিও যাবেন নাকি?
Discussion about this post