পরপর ঘটে যাচ্ছে ট্রেন দুর্ঘটনা। বিগত দুই তিন মাসে বেশ কয়েকটি বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটেছে ভারতীয় রেলে। যা নিয়ে যথেষ্ট চাপে নরেন্দ্র মোদি সরকার। প্রাণ হানির ঘটনাও ঘটেছে অনেক। ফলে এবার নিরাপত্তা নিয়ে আর মানুষের ওপর আস্থা রাখছে না ভারতীয় রেল। বিগত কয়েকটি ঘটনা দেখা গিয়েছে মানুষের ভুলেই ঘটে গিয়েছে মারাত্মক দুর্ঘটনা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে অন্তর্ঘাত, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে রেল কর্মীদের মারাত্মক ভুল ডেকে নিয়ে এসেছে বিপদ। তাই এবার প্রযুক্তি নির্ভর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আনতে চলেছে ভারতীয় রেল। এআই নিয়ে যখন গোটা বিশ্বই ভাবিত, ভারতীয় রেলও এই এআই প্রযুক্তির উপর ভরসা রাখছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত অটোমেটিক ট্রেন এগজামিনেশন সিস্টেম প্রতিস্থাপন করল ভারতীয় রেল। দেশের মধ্যে প্রথম পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রথম ব্যবহার শুরু হল। যার পোশাকি নাম অটোমেটিক ট্রেন এগজামিনেশন সিস্টেম বা ATES…
উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের নিউ জলপাইগুড়িতে ‘পর্যবেক্ষণ’ প্রকল্প হিসাবে বসানো হয়েছে ATES নামে এই প্রযুক্তি। স্টেশনে ঢোকা ও বেরনোর ২টি লাইনেই ব্যবহার হবে এটাস নামে এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। যা মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI প্রযুক্তি নির্ভর। এই প্রযুক্তিতে রয়েছে চারটি ক্যামেরা ও চারটি সেন্সর, যা পরিচালিত হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা। ক্যামেরার মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেনের কামরার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। অপরদিকে সেন্সরগুলি ট্রেনে চাকা ও অ্যাক্সেলের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করবে। এছাড়া প্রতিটি কামরার ছবি তুলতে থাকবে ক্যামেরাগুলি। এভাবে একটি ট্রেনে কতগুলি কামরা রয়েছে। বোগির চাকা বা অ্যাক্সেলে কোনও সমস্যা রয়েছে কি না জানা যাবে। অ্যাক্সেলের কোনও অংশের তাপমাত্রা সহনশীল সীমা চাড়ালে অটোমেটিক মেসেজ চলে যাবে রেলের ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে। ফলে প্রয়োজন মাফিক ট্রেনটি থামিয়ে তা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন ইঞ্জিনিয়াররা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত এই আধুনিক সিস্টেমে এক একটি ট্রেনের ত্রুটি বিচ্যুতি খুব সাবলীলভাবেই ধরতে পারবেন সংশ্লিষ্ট শাখার ইঞ্জিনিয়াররা। এছাড়া প্রতিটি কামরার ছবি তুলতে থাকবে ক্যামেরাগুলি। এভাবে একটি ট্রেনে কতগুলি কামরা রয়েছে। বোগির চাকা বা অ্যাক্সেলে কোনও সমস্যা রয়েছে কি না জানা যাবে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে।
রেলের তরফে জানানো হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ( বা AI-এর মাধ্যমে এটিইএস কাজ করায়, সাফল্যের ব্যাপারে একশো শতাংশ নিশ্চিত হওয়া যাবে। সবমিলিয়ে এই এলাকায় ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে আর দূর্ঘটনা ঘটবেনা বলেই মনে করছেন উত্তর-পূর্ব রেলের আধিকারিকরা। সবচেয়ে গর্বের বিষয়, এই AI প্রযুক্তি গোটা দেশের নিরীখে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনেই প্রথম বসানো হয়েছে। উত্ত্র পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কপিঞ্জলকিশোর শর্মা সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, ভারতের প্রথম এনজেপি স্টেশনে এটিইএস কার্যকর করা হয়েছে। এনজেপিতে সাফল্য পাওয়া গেলে এই প্রযুক্তি গোটা দেশেই কার্যকর করা হবে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে কাজ করে এই নয়া সিস্টেম
যেখানে এই এআই প্রযুক্তির নতুন সিস্টেম লাগানো হবে সেখানে প্রথমেই সক্রিয় হয়ে উঠবে চারটি ক্যামেরা। পাশাপাশি কাজ করবে চারটি সেন্সর। চারটি ক্যামেরা ক্রমাগত ছবি বা ভিডিও তুলবে ছাকা, অ্যাক্সেল এবং কামলার বিভিন্ন অংশের। কোথাও কোনও অংশ ভাঙা রয়েছে কিনা। আর সেন্সর মাপবে চাকার তাপমাত্রা থেকে রেল ট্র্যাকে কোথাও লাইন ভাঙা বা সরে আছে কি না, ইঞ্জিনে কোনও গোলমাল রয়েছে কি না। সেই সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এআই বা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সমস্ত তথ্য পাঠিয়ে দেবে এটিইএসের মাধ্যমে পাবেন লোকো পাইলট বা ট্রেন-চালক। ইঞ্জিনে থাকা ডিসপ্লে বোর্ডে তথ্য দেখা যাবে। পাশাপাশি চালকের মোবাইলেও তথ্য পৌঁছে যাবে। সেই সঙ্গে সেই ভিডিও-র লিংক পৌঁছে যাবে সংশ্লিষ্ট জোনের মেকানিক্যাল সেকশন, সংশ্লিষ্ট রেলের শীর্ষকর্তাদের কাছেও। আর এতেই আগাম রোধ করা যাবে যে কোনও ট্রেন দূর্ঘটনা।
Discussion about this post