নিজস্ব প্রতিনিধি: নিয়োগ দুর্নীতির জেরে ২০১৬ সালে এসএসসির গোটা প্যানেল বাতিল করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশের ফলে চাকরি হারিয়েছেন ২৫ হাজার ৭৫৩ জন। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির বেঞ্চ সোমবার এই নির্দেশ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, যাঁরা মেয়াদ-উত্তীর্ণ প্যানেল থেকে চাকরি পেয়েছেন এবং যাঁরা সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন, তাঁদেরকে বছরে ১২ শতাংশ সুদ-সহ বেতন ফেরত দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। হাইকোর্টের তরফে তার জন্য চার সপ্তাহ সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি বিচারপতি জানিয়েছেন, এসএসসি মামলায় নতুন করে নিয়োগ করতে হবে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এই দুর্নীতির তদন্ত চালিয়ে যাবে বলেও জানিয়েছে হাইকোর্ট। প্রয়োজনে সন্দেহভাজন, এমনকি, রাজ্য মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধেও তদন্ত চালিয়ে যেতে পারবে সিবিআই। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশের পর এমনিতেই কোনঠাসা রাজ্য সরকার এবং স্কুল সার্ভিস কমিশন। তার উপর মঙ্গলবার আরও একবার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী। মুখ্যসচিব বি পি গোপালিকার ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে হাইকোর্ট।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর অনুমোদন নিয়ে রাজ্যের অবস্থান জানতে চেয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু নবান্নের তরফে কোনও কিছু জানানো হয়নি। এই নিয়ে এই বিষয়ে রাজ্য সরকারকে চতুর্থবার সময় দিল আদালত। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এদিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আগামী ২ মে-র মধ্যে অভিযুক্ত সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর অনুমোদন নিয়ে অবস্থান জানাতে হবে। ওই সময়ের মধ্যে না জানালে রাজ্যের মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করা হবে।
প্রসঙ্গত নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ইতিমধ্যে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় এবং এসএসসি’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। পাশাপাশি প্রাক্তন সচিব অশোককুমার সাহা-সহ একাধিক সরকারি আধিকারিককেও গ্রেফতার করেছেন তদন্তকারীরা। ধৃত এই সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে গেলে রাজ্য সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন। কিন্তু রাজ্যের তরফে সেই অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। সিবিআই সূত্রের খবর, ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে মুখ্যসচিবের কাছে এই বিষয়ে অনুমোদন চাওয়া হয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে। কিন্তু এই নিয়ে কিছুই জানায়নি নবান্ন। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট।
অন্যদিকে কলকাতা হাইকোর্টে ধাক্কা খাওয়ার পরে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য সরকার এবং স্কুল সার্ভিস কমিশন। কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারের প্রশ্ন, ‘পাঁচ হাজার জনের বিরুদ্ধে অবৈধ ভাবে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তার জন্য ২৬ হাজার জনের কেন চাকরি বাতিল হবে?’ যদিও আদালতের নির্দেশের পর ওয়াকিবহাল মহলের মত, কারা যোগ্য কারা অযোগ্য সেই তালিকা আদালত চাইলেও কমিশনের তরফে দেওয়া হয়নি। তাই সম্পূর্ণ নিয়োগ বাতিল করা ছাড়া আদালতের কাছে উপায় ছিল না। আর যোগ্য এবং অযোগ্য প্রার্থীদের চিহ্নিত করতে গেলে শাসকদলের নেতা মন্ত্রীদের কুকীর্তিতে কার্যত সিলমোহর দিতে হত কমিশনকে। যার ফলে ভোটের মুখে জনমানসে জোড়াফুল শিবিরের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠত। পালটা বিরোধীদের হাতে উঠে আসত দুর্নীতির আরও একটি নমুনা। তাহলে কি কমিশন পুরো বিষয়টিতে রাজ্য সরকারের মুখ আড়াল করতে চেষ্টা করেছিল? এত প্রশ্ন, এত অভিযোগ, সবমিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাকরি হারানোদের পাশে থাকলেও তাঁর সরকার এবং প্রশাসন যে ভীষণ চাপের মুখে রয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।
Discussion about this post