আপনি হিন্দু না মুসলিম? হিন্দু শুনতেই ঠাই ঠাই ঠাই… গুলিতে ঝাঁঝড়া হতে হল বেশ কয়েকজন পুরুষকে। ঘটনাস্থল কাশ্মীরের পহেলগাঁও, বৈসরণ ভ্যালি। চার রাইফেলধারী জঙ্গির তাণ্ডবে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ২৮ জন পর্যটক। যারা ভূস্বর্গ ঘুরতে গিয়েছিলেন, তাঁরা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে চলেছে ভূস্বর্গ। তবে আশ্চর্যজনক বিষয় হল বেছে বেছে মারা হল পর্যটকদের। কেন?
পৃথিবীর স্বর্গ কাশ্মীর এখন অনেকটাই শান্ত। এমন দাবিই করে আসছিলেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। ৩৭০ ধারা বিলোপ করা থেকে শুরু করে জম্মু-কাশ্মীরে নির্বিঘ্নে বিধানসভা নির্বাচন করানোর কৃতিত্ব নেওয়া হচ্ছিল বুক ফুলিয়েই। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরে সেই দাবি যেন ফুৎকারে উড়িয়ে দিল একে-৪৭ রাইফেলধারী চার যুবক। একেবারে মিলিটারি কায়দায় নিখুদ পরিকল্পনায় গুলি করে মারলেন ২৮ জন পর্যটককে। ঘটনাস্থল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরণ উপত্যাকা। আপাত শান্ত কাশ্মীরের এক অফবিট ডেস্টিনেশন। গত এক-দুই বছর ধরে এই উপত্যকা পর্যটকদের কাছে অতি পরিচিত হয়ে উঠেছিল। বলা হচ্ছে, পুলওয়ামার পর এটাই কাশ্মীরের বুকে সবচেয়ে বড় জঙ্গিহানা। ফলে ভিত নড়ে গিয়েছে ভারতবাসীর। নিছক ঘুরতে গিয়ে প্রাণ হারিয়ে ফেরা, মেনে নিতে পারছেন না আসমুদ্র হিমাচল। উপত্যকার সুবজ ঘাসের গালিচা ভেসে গেল রক্তে। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ২৮ জনকে হত্যা করেছে জঙ্গিরা। জঙ্গি হামলার মুহূর্তের কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে। ভাইরাল হয়েছে সেই ভিডিওগুলি। আশপাশের পাইন বনে ইতস্তত ঘোরাফেরা করছিলেন কিছু পর্যটক। কেউ পাপড়ি চাট, ভেলপুরির স্বাদ নিতে বসেছিলেন দোকানে। কেউ আবার ঘোড়সওয়ারি করতে ব্যস্ত ছিলেন। এর মাঝেই মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে হাজির হয়ে যায় জঙ্গিরা। কিন্তু কেন এমন হবে? কেনই বা গোয়েন্দারা জানতে পারলেন না ঘ্রুণাক্ষরেও? উত্তর খুঁজছেন দেশের তাবড় গোয়েন্দারা।
ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রকাশ্যে এল চার জঙ্গির ছবি। তা সামনে এনেছে ভারতের গোয়েন্দা এজেন্সিগুলিই। জানানো হয়েছে চার জঙ্গির মধ্যে দুজন পাকিস্তানি আর দুজন কাশ্মীরী, অর্থাৎ ভারতীয়। তিন জঙ্গির নাম আসিফ ফৌজি, সুলেমান শাহ, আবু তালহা, একজনের নাম প্রকাশ করা হয়নি। জানা যাচ্ছে এই চারজনই লস্কর-ই তৈবা সংগঠনের সদস্য। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, যেভাবে প্রায় ২০ মিনিট ধরে হত্যালীলা চলেছে, গুলিবর্ষণ হয়েছে। এরপর নির্বিঘ্নে ‘মিশন সাকসেসফুল’ করেছে, তাতে একটা বিষয় পরিস্কার, স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী-সন্ত্রাসবাদীরা পাকিস্তানি জঙ্গিদের মদত না করলে এটা সম্ভব না। কয়েকটি ভিডিওর মাধ্যমে জঙ্গিদের চিহ্নিত করা গিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে দুজন আর্মির পোশাক পড়ে ছিলেন আর বাকি দুজন স্থানীয় কাশ্মীরী পোশাক। জানা যাচ্ছে, প্রথমে সেনাবাহিনীর উর্দি পরে এসে তাঁদের নাম ও ধর্ম জিজ্ঞাসা করা হয়। তারপর মহিলা ও শিশুদের আলাদা করে দেওয়া হয়। এক জায়গায় জড়ো করা হয় পুরুষদের। এরপর মাথায় গুলি করা হয়। পাশাপাশি বেশ কিছুটা দূর থেকেও কেউ বা কারা এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়েছে জঙ্গিদের কভার দেওয়ার জন্য। অর্থাৎ তাঁরা জানতো সেনাবাহিনী বা নিরাপত্তারক্ষীদের অবস্থান। তাই বিশেষ পরিকল্পনা ও রেইকি করেই এই হামলা।
তাহলে কেন বেছে বেছে হিন্দুদের মারা হল?
ওয়াকিবহাল মহল মনে করছেন, ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় এই কাণ্ড। জঙ্গিরা বেছে বেছে হিন্দুদের মেরে ভারত সরকারকে কোনও বিশেষ বার্তা দিতে চাইছে। গোটা ঘটনার দায় শিকার করেছে দ্য রেজিস্টেন্ট ফ্রন্ট নামে এক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন। যদিও গোয়েন্দারা মনে করছেন, হামলাটির মাস্টারমাইন্ড লস্কর-ই-তৈবার ডেপুটি চিফ সইফুল্লাই। ঘটনার পরই কাশ্মীরে পৌঁছে যান ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বুধবার তিনি পহেলগাঁও যান। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। অপরদিকে সৌদি সফর কাঁটছাঁট করে দ্রুত দিল্লি ফিরে আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জানা যাচ্ছে দিল্লি বিমানবন্দরেই তিনি জরুরি বৈঠক করেছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে। পাশাপাশি তিনি যোগাযোগ রাখছেন অমিত শাহর সঙ্গেও। তবে কি এবার বড় কোনও পদক্ষেপ নেবে ভারত?
Discussion about this post