শেষ পর্যন্ত আশঙ্কাই সত্যি হল। মাসখানেক ধরে চলা বাংলাদেশের অশান্তি পরিনতি পেল। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গদিচ্যুত হলেন এবং তাঁর বোনকে নিয়ে দেশ ছাড়লেন। গণঅভ্যুত্থানের পথে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ক্ষমতার দখল নিয়েছে। সেনাপ্রধান জাতির উদ্দ্যেশ্যে ভাষণ দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, সেনার তত্ত্বাবধানে অন্তর্বর্তীকালীন তদারকি সরকার গঠন হবে। অপরদিকে, বাংলাদেশ থেকে আসা একের পর এক ভিডিও দেখে বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশের ভয়াবহ পরিস্থিতি। ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন বঙ্গভবনে ঢুকে পড়েছে হাজার হাজার আন্দোলনকারী। চলছে অবাধ লুটপাট। অপরদিকে দেখা যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেথ মুজিবর রহমানের মর্মরমূর্তি ভাঙছেন আন্দোলনকারীরা। ঢাকায় আওয়ামী লিগের সদর দফতরে আগুন দেওয়া হয়েছে। ধানমণ্ডিতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। সবমিলিয়ে এই খণ্ডচিত্র দেখে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে কোটা সংস্কার আন্দোলন দিয়ে শুরু হলেও আদতে তা শেখ হাসিনা সরকারকে ফেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র ছিল। যা সোমবার পূর্ণ হল প্রবল চাপে পড়ে শেখ হাসিনার পদত্যাগ করা এবং দেশত্যাগের পর।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পতন যে অনিবার্য, সেটা বোঝা যাচ্ছিল বিগত কয়েকদিন ধরেই। দীর্ঘদিন ধরে চলা কোটা সংস্কার আন্দোলন রবিবার থেকে কার্যত হাসিনা হঠাও অভিযানে পরিণত হয়েছিল। রবিবার রাত থেকেই লক্ষ লক্ষ আন্দোলনকারী ঢাকার উদ্দেশ্যে লং মার্চ শুরু করেছিল। এই পরিস্থিতিতে সেনাপ্রধান ঘোষণা করেন, তাঁরা কোনও রকম প্রতিরোধ করবে না। তখনই বোঝা গিয়েছিল এর পরিণতি কি হতে চলেছে। জানা যাচ্ছে, সোমবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তরফ থেকে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। তিনি ঘণ্টাখানেক সময় চান। হাসিনা নয়াদিল্লির সঙ্গে আলোচনাও করেন। আবার একটি সূত্র দাবি করছে, শেখ হাসিনা, সেনাবাহিনী এবং নয়াদিল্লির প্রতিনিধির একটি বৈঠক হয়। এরপরই হাসিনা পদত্যাগ করেন। এর কিছুক্ষণ পরই বাংলাদেশ সেনাবায়ুসেনার একটি কপ্টারে তিনি এবং তাঁর বোন রেহানা ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় পৌঁছে যায়। বাংলাদেশ বায়ুসেনার ১০১ স্কোয়াড্রনের এয়ার কমোডর আব্বাস ওই কপ্টার উড়িয়ে নিয়ে যান। এমনও জানা যাচ্ছে, শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন জাতির উদ্দেশ্যে একটি বিদায়ী ভাষণ রেকর্ড করবেন। কিন্তু সেই সুযোগ তাঁকে দেওয়া হয়নি। এই ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই বঙ্গভবনের দখল নেয় আন্দোলনকারীরা। চলে অবাধে লুটপাট।
কিছুক্ষণের মধ্যে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। তিনি দেশের নাগরিকদের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, দয়া করে সাহায্য করুন। সংঘাত থেকে বিরত থাকুন। আমরা সবাই মিলে সুন্দর দেশ গড়েছি। যদিও পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেনাপ্রধান বলেন, বিএনপি, জাতীয় পার্টি এবং জামায়তে ইসলামী সংগঠনের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেন, আজই বঙ্গভবনে সকলের সঙ্গে বৈঠক হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন নিয়ে। অপরদিকে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি দেশবাসীকে শান্ত থাকার আবেদন করেছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগিরও জানান, সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে। সূত্রের খবর, শেখ হাসিনা আগরতলা থেকে কলকাতা হয়ে দিল্লি যাচ্ছেন। সেখান থেকে তিনি লন্ডন পারি দিতে পারেন।
Discussion about this post