শ্রীরামপুরে বামেদের তরুণ প্রার্থী দীপ্সিতা ধর। বেকারত্ব, দুর্নীতির বিরোধিতা প্রচারের বড় ইস্যু দীপ্সিতার। এসএফআই নেত্রী থুড়ি সর্বভারতীয় স্তরে যুগ্ম সম্পাদক কি পারবেন কল্যাণ গড়ে কাস্তে হাতুড়ির মুখ উজ্জ্বল করতে? কপালে ছোট্ট লাল টিপ, গলায় উত্তরীয়, ডান হাতে ঘড়ি। গায়ের রঙ বেশ ময়লা। ভোট প্রচারে এক তরুণী দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সকাল থেকে রাত। তিনি দীপ্সিতা ধর। আসন্ন শ্রীরামপুর লোকসভা নির্বাচনে সিপিআইএমের প্রার্থী তিনি। তিনি এসএফআই এর সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক। জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী।
রক্তে তার রয়েছে রাজনীতি। তিনি প্রয়াত সিপিআইএম নেতা পদ্মনিধি ধরের নাতনি। বাম নেতা পদ্মনিধি ধর ১৯৯১ থেকে ২০০১। টানা তিনবার ডোমজুড় বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জিতে ছিলেন। কলকাতার আশুতোষ কলেজে পড়াকালীন রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় দীপ্সিতার। এসএফআই ইউনিটের কলেজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। স্নাতক হওয়ার পর দীপ্সিতা চলে যান দিল্লিতে। সেখানে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট গ্যাজুয়েট কোর্স করেন। জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএফআই এর ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করেন ২০১৫ সালে। পরাজিত হন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএফআই ইউনিটের সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। একই বছরে স্টুডেন্ট ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার দিল্লি স্টেট কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে সিমলা ও হিমাচলপ্রদেশের কনফারেন্সে এসএফআই এর সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন দীপ্সিতা। রাজধানীতে থাকাকালীন রোহিত ভামুলা আন্দোলনে অংশ নিয়ে ছিলেন দীপ্সিতা। সিএএ বিরোধী আন্দোলনেও তাঁকে সামনের সারিতে দেখা গিয়েছিল।
কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি ছাড়িয়ে রাজনীতির বড় ময়দানে এই প্রথম নন দীপ্সিতা। ২০২১ এর বিধানসভা ভোটেও লড়তে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। বালি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে সিপিআইএমের প্রতীকে লড়ে ছিলেন তৃণমূলের ড: রানা চ্যাটার্জি ও বিজেপির বৈশালি ডালমিয়ার বিরুদ্ধে। জিততে পারেননি সেবার। ত্রিমুখী লড়াইয়ে নিজের যুদ্ধ সেবারের মত শেষ করেছিলেন তৃতীয় স্থানে থেকে। বেকার যুবতীদের চাকরির সংস্থান, শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিধানসভা ভোটে ঝাঁপিয়ে ছিলেন দীপ্সিতা। বাম রাজনীতিতে নিউ ফেস দীপ্সিতাকে সমর্থন করতে দেখা গিয়েছিল সেলিব্রিটি কাফিল খান ও রাহুল ব্যানার্জিকে।
এই নির্বাচনে একঝাঁক তরুণ-তরুণীদের সামনে এনেছে বামেরা। দীপ্সিতার এবারের যুদ্ধ আরও কড়া প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে। তিনি কল্যাণ ব্যানার্জি। পেশায় আইনজীবী কল্যাণ শ্রীরামপুরের তিনবারের সাংসদ। আসন্ন নির্বাচনে জয়ী হতে পারলে রেকর্ড ভাঙবেন তিনি। কারণ এর আগে এই আসন থেকে একটানা চারবার কেউ জেতেননি। ঠোঁককাটা কল্যাণ একজন পোড় খাওয়া রাজনীতিক। অন্যদিকে বিজেপির টিকিটে দাঁড়িয়েছেন কবীরশঙ্কর বসু। যিনি একধারে কল্যাণ ব্যানার্জির প্রাক্তন জামাতা। ভোটে এই প্রথম লড়াই করছেন তা নয়। তবে দীপ্সিতার মত রাজনীতির বৃহৎ ময়দানে অসফল তিনি।
ছোট থেকে রাজনীতি বড় অপছন্দ ছিল দীপ্সিতার। আরও একটি অপছন্দ ছিল তাঁর। সেটি কপালের লাল টিপ। আজ এই দুটিই বড় সম্বল তাঁর। হাটে বাজারে ময়দানে যেখানেই যান না কেন দীপ্সিতার কপালে ছোট্ট লাল টিপ আছেই আছে। আর রাজনীতি! অপছন্দ থেকে পছন্দের হল কিভাবে? সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে দীপ্সিতা জানিয়েছেন ২০১১ সালের রাজনীতির পালাবদল তার মত বাম সমর্থককে সরাসরি রাজনীতির আঙিনায় নিয়ে আসে। এখন প্রশ্ন রাজনীতির বড় আঙিনায় দীপ্সিতা কি জয় আনতে পারবেন? কবীরশঙ্কর বড় ফ্যাক্টর না হলেও হারাতে কি পারবেন কল্যাণ ব্যানার্জির মত দাপুটে নেতাকে? রাজনীতিবিদদের একাংশ মনে করছেন, শ্রীরামপুর লোকসভাএলাকায় বহু জুটমিল বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। প্রচুর মানুষ কাজ হারিয়েছে। আগামী দিনে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। পাশাপাশি দলের দুর্নীতি ইস্যু। কল্যাণের বড় ভোটব্যাঙ্কে প্রভাব ফেলতে পারে। আর তাতেই তরুণ তুর্কি বাম প্রার্থী দীপ্সিতা ধরের ভাগ্যের শিকেয় ছিঁড়লেও ছিঁড়তে পারে।
Discussion about this post