তৃণমূল কংগ্রেসের গৃহযুদ্ধ এখন প্রকাশ্যে। লোকসভার সংসদীয় দলের মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুড়ি চলছে প্রকাশ্যে। একদিকে শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্যদিকে সৌগত রায়, কীর্তি আজাদ ও মহুয়া মৈত্র। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলছেন না। বিপাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সীমাবদ্ধ ছিল লোকসভায় তৃণমূলের সংসদীয় দলের হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে। এবার তৃণমূলের গৃহযুদ্ধ চলে এল প্রকাশ্যে। রীতিমতো হাটে হাঁড়ি ভাঙলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ তথা প্রবীণ আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নিশানায় দলেরই তিন সাংসদ। দুজনের নাম তিনি প্রকাশ্যে উল্লেখ করলেন, একজনের নাম উহ্য রাখলেন। তবে পাকা আইনজীবীর মতোই বুঝিয়ে দিলেন তিন নম্বরটি কে। একেই চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের নিয়ে বিড়ম্বনায় তৃণমূল নেত্রী। এর সঙ্গে যুক্ত হল দলীয় সাংসদদের গৃহযুদ্ধ। যা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাতের ঘুম উড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।
তৃণমূলের লোকসভা সাংসদদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের বিভিন্ন বক্তব্যের স্ক্রিনশট এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছিলেন বিজেপি নেতা অমিত মালব্য। ঘটনার সূত্রপাত সেখান থেকেই। হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের ওই স্ক্রিনশটগুলি থেকে এক মহিলা সাংসদের সঙ্গে তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ কল্যাণ বন্দ্য়োপাধ্যায়ের বাগযুদ্ধ সামনে এসে গেছে! মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে দলের তিন সাংসদকে নিশানা করেছেন লোকসভায় তৃণমূলের মুখ্যসচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও সেই মহিলা সাংসদের নাম মুখে আনেননি প্রবীন এই সাংসদ। কল্যাণ সরাসরি নাম করেছেন দমদমের সাংসদ সৌগত রায় এবং বর্ধমান-দুর্গাপুরের সাংসদ তথা প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজ়াদের। নারদা ঘুষ কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি তুমুল আক্রমণ করেন দমদমের সাংসদ সৌগত রায়কে।
এখানেই শেষ নয়, ওই সাংবাদিক বৈঠকে তিনি সৌগত রায়ের চরিত্র নিয়েও বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
কল্যাণের তোপে শুধু সৌগত রায় ছিলেন না। দলেরই এক মহিলা সাংসদকেও তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। পাকা আইনজীবীর মতোই ওই মহিলা সাংসদের নাম না নিয়েই তিনি “অসভ্য মহিলা এমপি” বলেও তোপ দাগেন।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদকেই ইঙ্গিত করেছেন কল্যাণ। উল্লেখ্য, বিদেশে থাকা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে উপহার নিয়ে সংসদে আদানি এবং নরেন্দ্র মোদিকে জড়িয়ে প্রশ্ন তোলার অভিযোগে গত মেয়াদের শেষ পর্বে সংসদ থেকে মহুয়া মৈত্রকে বহিষ্কৃত হতে হয়েছিল। ‘এর-তার থেকে গিফ্ট’ নেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে কল্যাণ সেটিই ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান এই সাংসদ।
বাইট – কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীরামপুরের সাংসদ (টিসি 04.26 – 05.01)
প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের স্ক্রিনশট ভাইরাল এবং পরে দিল্লির রাস্তায় তৃণমূল সাংসদদের বাকযুদ্ধের ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। তারপরেই তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভার মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংবাদিক সম্মেলন করে দলীয় সাংসদদেরই নিশানা করা। সবমিলিয়ে তৃণমূলের সংসদীয় দলে ফাটল প্রকাশ্যে চলে এসেছে। আর তা এল এমন একটা সময়ে, যখন পশ্চিমবঙ্গে দল নড়বড়ে অবস্থানে রয়েছে। প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। যোগ্য প্রার্থীরা রাস্তায় নেমে এসেছেন। তৃণমূলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও বৈঠক করে তাঁদের ক্ষোভ প্রসমন করতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের সাংসদরা একে অপরের দিকে কাঁদা ছোড়াছুড়ি করায় আরও বিড়ম্বনায় পড়ছে দল। ২০২৬-এর আগে যা খুব একটা ভালো লক্ষণ নয় বলেই মনে করছে বাংলার রাজনৈতিক মহল।
Discussion about this post